জে,জাহেদ ::
বর্তমানে চট্রগ্রামের রাজনীতির মাঠ হঠাৎ সরগরম হয়ে ওঠছে । আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতা বর্তমান মেয়র আজম নাছির উদ্দিন ও সাবেক মেয়র আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আজ নানা ভাবে বিভক্ত। নানা বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্যে সব সময় পত্রিকায় আলোচিত কিংবা সমালোচিত। সরকারী দলের প্রভাবশালী দুই নেতা দুপদে আসীন। অথচ একই দল একই প্রতীক, একই শহরে বসবাস, তবে বর্তমানে দুজনের পথ ভিন্ন দিকে বহমান।
বলতে গেলে এক নৌকায় ওঠে দুইদিকে দুই মাঝির বৈঠা নিয়ে লড়াই। মাঝখানে নৌকায় বসা জনগণের আশা ভরসা, নিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে। চট্রগ্রাম বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে এক সময় পরিচিত হলেও মেয়র মহিউদ্দিনের সাংঘটনিক কর্মজীবন অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না আসায় চট্রগ্রাম আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। অন্যদিকে আজ থেকে প্রায় ১৮মাস পুর্বে চট্রগ্রাম সিটিকর্পোরেশন নির্বাচনে চট্রগ্রাম শহরের সবকটি ওয়ার্ড ও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জরিপ পর্যালোচনা করে সরকার বাহাদুর নিশ্চিত হন বর্তমান আজম নাছির বিজয়ী হতে পারে।
সে দিকটা বিবেচনা করে সাবেক মেয়র মহিউদ্দীনকে মনোনয়ন না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজম নাছিরকে মনোনয়ন দেয়। পরে মহিউদ্দিন ও সম্মত হয়েছিলেন। কেননা পুর্বে ১৭বছর এবিএম মহিউদ্দিন চৌঃ মেয়র ছিলেন ও পরে বিএনপি ঘরনার মনজুর আলম ও মেয়র নির্বাচিত হন ওনারেই আমলে। যেদিন বর্তমান মেয়র আজম নাছির নৌকায় মনোনয়ন জিতে নেন। সেদিন থেকে অন্তরে দ্বন্ধের বীজ বপন করে বসেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌঃ এমনটাই ধারণা অধিকাংশ চট্রগ্রামের জনগণ ও তৃণমুলের। পরে শুরু হয় দুজনের প্রকাশ্যে দুই ভাগ হয়ে রাজনীতির নানা বিতর্কিত বক্তব্য ফুলঝুড়ি।
একই নদীতে ভিন্ন স্রোতে উল্টোদিকে বেকে বসে মেয়র মহি উদ্দিন । অদ্যবধি চট্রগ্রামের ভেতরে বাহিরে আওয়ামী লীগের প্রচণ্ড গ্রুপিং থাকায় দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে। কেননা চট্রগ্রাম মহানগর সভাপতি ও সাঃ সম্পাদকের দুই মেরুতে অবস্থান। এ ছাড়াও চট্রগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় মরা কমিটি নামক আহবায়ক কমিটি রয়েছে ১৪৪ধারায় দন্ডিত জমির মতো ৯/১০ বছরেও নতুন কমিটি হয়না। ফলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজন মেয়র একজন বর্তমান আরেকজন সাবেক মেয়রের রশি টানাটানিতে ঝিমিয়ে পড়েছে নগর আওয়ামী লীগ। তারা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে সব সময় মাঠ চাঙ্গায় ব্যস্ত। অনেক জায়গায় পুর্নাঙ্গ কমিটি না থাকায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে চরম অসন্তোষ।
দলের এই দুই নেতাকে ঘিরে চট্রগ্রামে স্কুল কলেজ ভার্সিটি কিংবা ছাত্রলীগ-যুবলীগ,শ্রমিক লীগ,আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ সহ অন্য অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বলতে গেলে দুই গ্রুপের প্রভাবশালী দুই নেতাই চালাচ্ছেন চট্রগ্রাম আওয়ামী লীগ। সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে এই বিভক্তি বলে জানান দলের নেতা-কর্মীরা। গ্রুপিংয়ের কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় সভা-সমাবেশ না হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে দলটি এখানে পিছিয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি বা জামাত কোন ফ্যাক্টর নয়, বাধা হয়ে দাড়িয়েছে আওয়ালীগ নিজেই নিজের প্রতি।
দলকে গতিশীল করতে বা দলীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতাদের কোনো মাথাব্যথাও নেই। দুই নেতার পছন্দের কর্মীরা এখন টেন্ডারবাজি,কমিশন,ঠিকাদারী ব্যবসা, চাল-গম ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েই বেশি ব্যস্ত বলে দাবি করে অনেকে। আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সামুদ্রিক প্রাণী অক্টোপাসের মতো ৮/১৬পাতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব এখন রীতিমতো প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। তবে মেয়র নাছির মাঠপর্যায়ে সব সময় নানা সামাজিক কাজ কর্মে কর্মীদের খোজ খবর রাখছেন বলে জানান তার কাছের এক লোক।
গত কয়েকমাস যাবৎ চট্রগ্রামের স্কুল কলেজ,ভার্সিটিতে তাদের দুই পক্ষের ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বোমাবাজি, ভাঙচুর ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চট্রগ্রাম আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রকৃত আওয়ামী লীগ যাঁরা করেন, দলের জন্য যাঁদের অবদান রয়েছে, তাঁদের আজ কোনো পাত্তা নেই। আদর্শিক রাজনীতির এখন আর কোনো মূল্য নেই। যার টাকা আছে, সেই মনোনয়ন পাচ্ছে, সেই দলের নেতা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে গণতন্ত্রের নামে চট্রগ্রামের সবুজ রাজনীতি। দুই পক্ষের বিভিন্ন জনসভা,কর্মীসভা, সমাবেশ আর মিটিং মানে মুখরোচক সমালোচনা আর তীব্র বিদ্বেষানল অবাক করেছে চট্রগ্রাবাসীকে।
দুই নেতার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এখানে দলীয় গ্রুপিং এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। তবে অনেকের দাবি বর্তমান মেয়র আজম নাছির অনেকটা সংযত আর বিনয়ী ভাব দেখালে ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের আচরণ অনেকটা রুঢ আর তীব্র। যা বিভিন্ন মিডিয়ার উঠে এসেছে সাবেক মেয়র হিসাবে যা সমালোচনা করে নাছিরের তা বোধগম্য নয়। তবে পরিবেশ ঘোলা হচ্ছে দেখে মাত্র কিছু অংশ বিতর্কিত কথার কৌশলী জবাব দেন মেয়র আজম নাছির। এ ছাড়া তিনি কখনো সাবেক মেয়রের সমালোচনা বা আলোচনা করতে দেখা যায়নি কোন মিটিং বা জনসভায়।
সভাপতি-সম্পাদকের ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে এখানে আওয়ামী লীগকে দুই ভাগ করে রাখা হয়েছে। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের দিকে যতটা সভাপতির টান থাকা উচিত বলে মনে করেন তার কোনো নজর নেই বলে দাবি করেন মহানগরের একটি একাংশ। গত ১১এপ্রিল মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন “‘অস্ত্র রাখাটা অপরাধ, লাঠি রাখা অপরাধ নয়। তাই লাঠি রেখেছি। অন্যায়কারী যেই হোক না কেন, তার প্রতি আঘাত করার জন্য আমার লাঠি প্রস্তুত।’ নগরীর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের মনে সাহস আসার জন্য লাঠির ব্যবস্থা করেছি। এক একটি লাঠির ওজন ১৫০ গ্রাম।’ তার মানে চট্রগ্রামে অপরাধী কারা, কাকে ইংগিত করে এসব বৈরী আচরণ। রাজনীতি কি বাশেরকেল্লা বা তিতুমীরের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত। লাঠিতে কর্মিদের সাহস বাড়ে, না কলম? চট্রগ্রামের অনেক বিশিষ্টজন ও রাজনীতি সচেতন মানুষ মনে করে,অন্যায়কারী বা অপরাধীর বিরুদ্ধে সাবেক মেয়রের লাঠি বাহিনী যদি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয় তাহলে প্রচলিত আইনের বিরোধী নয় কি তার এই অবস্থান? যখন ১৭বছর মেয়র হিসাবে চট্রলার আসনে ছিলেন । তখন কি কোন লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করেছিলেন অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য।
হাজার হাজার চটগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মনে করেন সাবেক মেয়র যদি এতোটাই অপরাধী ও অন্যায় বিরোধী হয় তবে চট্রগ্রামের ভূমি অফিস,বনবিভাগ,পাসপোর্ট অফিস,ফয়েস লেকে অবৈধ হোটেল ব্যবসা,পতেঙ্গায় গড়ে ওঠা অবৈধ মাদকের হাট,বিমানবন্দরে স্বর্ন চোরাচালান, শহীদ জিয়া পার্কে চাঁদাবাজি,রেল ভবনে দুর্নীতি, শিক্ষাপ্রতিষ্টানে বানিজ্য করণ,এলজিডি অফিস কিংবা স্বাস্থ্যখাতে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে নানা অপরাধের খবর যখন পত্রিকায় আসে । তখন কেনো এসব অপরাধের বিরুদ্ধে সাবেক মেয়রের কোন অবস্থান ছিলোনা বা থাকেনা । দুদক যখন দুর্নীতির অপরাধে জড়িত অফিসারকে গ্রেফতার করে চট্রগ্রাম ভূমি অফিসের জেএল শাখা হতে নিয়ে যায়।
তখনতো কোন প্রতিবাদ বা লাঠিয়াল বাহিনী আসেনা ? তাহলে কোন অন্যায় আর কোন অপশক্তির বিরুদ্ধে এসব লাঠিয়ালের জম্ম!! তার মানে এটা স্পষ্ট নয় কি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা। নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধে জনগণকে ব্যবহার করে বর্তমান সরকারের নৌকা মনোনিত মেয়রের বিরুদ্ধে অবস্থান কতটা যুক্তিযুক্ত তা আমার বোধগম্য নয়। এটা নিজ দলের ভেতরে বসে আত্বঘাতি হামলার মতো বিধে চট্রগ্রামের রাজনীতিতে।
লাঠিগুলো কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন সেদিন বলেন,‘অপশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জনগণ এই লাঠি হাতে নিয়ে এগিয়ে যাবে। লাঠি হাতে থাকলে মনের সাহসটা বাড়বে। অন্যায়কারীরা দুর্বল হয়ে যাবে।’ এমন যদি হয় তাহলে অপশক্তি কারা তার মতে? সরকার বিরোদী যেসব কর্মকান্ডে সরকার বিব্রত সেসব কাজ যেমন জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ,জ্বালাও পুড়াও আন্দোলন,হরতাল মিছিল, বোমাবাজ এসবই তো অপশক্তি। তাহলে সাবেক মেয়র কি কখনো কর্নফুলীতে জঙ্গি আটক,হাটহাজারিতে জেএমবি সদস্য বিপুল অস্ত্র সহ গ্রেফতার,পটিয়া ও সীতাকুন্ডে জঙ্গি গ্রেফতার সহ সন্ত্রাস বিরোদী কর্মকান্ড বন্ধে তৎপর ছিল এসব লাঠিয়াল বাহিনী? কারো কাছে এমন কোন তথ্য আছে কি?
তিনি বলেছিলেন,”মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে এটা গ্রুপিং নয়, দ্বিধা-দ্বন্ধও নয়। আমার সাধারণ সম্পাদক যদি অন্যায় করে থাকে, আমার দায়িত্ব তাকে সংশোধন করা।’ খুব ভালো কথা তাহলে এমন যদি কোন উদ্দশ্য থাকে বা বর্তমান মেয়র ও মহানগরের সাঃ সম্পাদক কতৃক যদি দলের কোন ভাবমূর্তি নষ্ট হয় বা অন্যায় হয় তাহলে দলীয় মিটিং ও ফোরামে বসে আলোচনা করতে পারে। যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করে তথ্যবহুল বিষয়াদি আলোচনা করে সমাধা করা হোক তা সকলে চায় ।কেননা বর্তমান মেয়র বার বার আহবান করেন সংযত ভাষায়, কিন্তু সাবেক মেয়রের তা বোধোদয় হয় না।
এভাবে দলের সাঃসম্পাদক ও বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে বেপরোয়া অবস্থান দলের কতোটা ক্ষতি করে যাচ্ছে সাবেক মেয়র তা কি ভেবে দেখেছে কেন্দ্রীয় নেতারা । দুনেতার এমন বৈরি আচরণ দলের ভেতরে ভাঙ্গন তৈরি করবে। একজন আজম নাছিরকে পরাস্ত করতে গিয়ে পুরা মহানগর কিংবা চট্রগ্রামে আওয়ামীলীগের রাজনীতি নষ্ট করার কোন অধিকার কেন্দ্র দেয়না মনেহয়। উন্নয়ন শুরু হতেই ব্যর্থ বলাটা গল্প মনেহয়। যদিও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের দাবি চট্রগ্রামের আওয়ামী লীগে তার অবদান রয়েছে। তাই বলে কি নিজের সৃষ্টি করা সাজানো লীগের বাগানটা নিজেই ছাগল ঢুকিয়ে শেষ করে দেবেন? আগামী প্রজম্মে তরুণ রাজনীতিবিদেরা কোথায় নিরাপদ লীগের রাজনীতিতে সেটাও দেখা উচিত বয়ষ্কদের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে, অন্তর জ্বালা থেকে এসব বক্তব্য নয় বলে তিনি বলেন “বর্তমান মেয়র হিসেবে নাছির অযোগ্য, অথর্ব”। সচেতনমহল কিংবা রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় সরকার গবেষকদের তথ্যমতে ৫ বছরের পুর্ন মেয়াদের এক পুর্নাঙ্গ মেয়র হতে না হতেই ১৮মাস বয়সী শিশু সন্তান এবং উঠতি বয়সী মেয়রকে কেহ অযোগ্য বল্লেই কি সার্টিফিকেট হয়ে যায়। নাকি ৫ বছরের পুরা সময়টা ব্যয় শেষে মন্তব্য করবেন কে সফল আর কে অর্থব মেয়র ?
বর্তমান মেয়র আজম নাছির বেশ জনপ্রিয় বিধায় তৃণমূলে হতে উঠে এসেছেন ধীরে ধীরে, কোন হাইব্রিড নেতার মতো এক লাফে আকাশ স্পর্শ করার সাহস তিনি দেখেননি মনেহয়। এমনকি আজম নাছিরের হাতে কোন আরব্য উপন্যাসের কথিত আলা উদ্দিনের আশ্চর্য্য চেরাগ নেই যে,এক রাতে চট্রগ্রামের ৫০০ বছরের বৃটিশ আমলে গড়া প্রাচীন শহরকে রাতারাতি সিংগাপুর শহর বানিয়ে দিবে । সাবেক মেয়র এবিএম মহি উদ্দিন ১৭বছর মেয়র ছিলেন, মহানগরের সভাপতি ও ছিলেন তাহলে প্রশ্ন জাগে আপনি ১৭ বছরে যা পারেন নি,তা কি আজম নাছিরের কাছ থেকে ১৮মাসেই প্রত্যাশা করেন!!
একটা বন্দর নগরী শহরকে উন্নত করার মহাপরিকল্পনা করতে হলে সময় সাপেক্ষীকরণ বিষয় আর প্রথমে অবকাঠামো উন্নত করা জরুরী। আর মেয়র নাছির বার বার বলেছেন “চট্রগ্রামে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে হলে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে কেননা সবেমাত্র দায়িত্ব নিলেন চট্রগ্রামের”। জনগণের বুঝা উচিত আগামী ৫বছর পর কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে তা বিবেচনা করে মন্তব্য করা । সন্তান ভূমিষ্ট হতেই মা বাবা সন্তানের আয় রোজগার খেতে পাগল হলে তার ফল কখনো শুভ হয়না। এমনকি চারা গাছে ফল প্রত্যাশা করা বেহেতের।সময় মতো অপেক্ষা জরুরী।
গত (১০ এপ্রিল) লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশে মহিউদ্দিন আ জ ম নাছির এর বিরুদ্ধে ১২টি খুনের অভিযোগ করেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌঃ। যদিও তাৎক্ষনিক আজম নাছির মন্তব্য করেন এসব বানোয়াট ভিত্তিহীন কাল্পনিক। আদৌও কি একজন সুস্থ মানুষ এসব কল্পিত মন্তব্য করবে নাকি রাজনীতি জিনিসটি এমনিই হয়। নিজের ব্যর্থ ব্যথায় পরাজিত হয়ে আসন হারালে প্রলাপ বকে দিনকে রাত মনে করে অনেকে। এসব কাদা ছুটাছুটি কি দলের ভাবমুর্তি নষ্ট করেনা। ২০১৬ সালে ২৫ শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাঃ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চট্রগ্রামে এসে এসব গ্রুপিং বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বৈঠকে। এমনকি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করার কথা ও বলেছিলেন। আদৌও কি সাবেক মেয়র দলের সাঃসম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথা রেখেছেন? নাকি কয়েক মাস যেতে না যেতেই চট্রগ্রাম ফিশারীঘাট নিয়ে দলের ভিতরে কোন্দল করেছেন। একটা সুন্দর সিদ্ধান্ত ছিলো মেয়র আজম নাছিরের বর্তমান ফিশারীঘাট বাকোলিয়া থানার রিয়েল এস্টেট জায়গায় স্থানান্তর করার বিষয়টি।
কেননা বন্দরের ২য় হাতিরঝিলের দর্শনীয় স্থান ও বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে, চট্রগ্রাম কক্সবাজারের হাইওয়ে মেইন রোডে পাশে মাছের আড়ত না করে। কোলাহলমুক্ত সুন্দর পরিবেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো ফিশারীঘাট আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাকোলিয়াতে । কিন্তু অতি উৎসাহী ও কিছু মাছ ব্যবসায়ীর হীন মনমানসিকতা আর সিন্ডিকেটের কথায় সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন একটি পক্ষ নিয়ে বিরোধীতা শুরু করে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে চট্রগ্রামের আইন শৃঙ্খলা পরিবেশ ঘোলাটে করার মানসে ছেপে বসেন ।নিজের ব্যক্তিগত ঈর্ষার বহিঃপ্রকাশ যদি দল ও দেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে তাহলে কি বিষয়টি উচিত ছিলো?
দীর্ঘদিন মান্ধাতার নিয়মে একই জায়গা ফিশারীঘাট থাকতে হবে পরিবেশ দুষণ করে জনবহুল শহরের মাঝখানে, তা কি কারো কাম্য ছিলো!!এসব প্রশ্ন অনেক জনগণের। অনেকে মনে করেন গত মাসে প্রধানমন্ত্রী চট্রগ্রাম বন্দর সফরকালে বর্তমান মেয়র নাছিরকে চট্রগ্রামের উন্নয়নে কাজের অসন্তুষ্টি জানিয়ে কাজের অগ্রগতিতে নির্দেশ দেয়। এমনকি সাবেক মেয়রের কথা উল্লেখ্য করলে সাবেক মেয়রের এমন চাঙ্গাভাব বা এমন জেগে ওঠে বলে জানান অনেকে। অথচ তাদের মনে রাখা দরকার প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা উন্নয়নের কাজ তদারকি করতে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য ছিলো এটি।কাউকে উদ্বুদ্ধ করতে নয়।
বরং কাজের প্রতি চট্রগ্রামের উন্নয়নের প্রতি মেয়র নাছিরের নজর দিতে স্পৃহা বাড়াতে নাছিরকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। এটাকে যদি কেহ ভিন্নভাবে নেয় তবে তা ভুল হবে মনেহয় । জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রধান হিসাবে চট্রগ্রামের বর্তমান মেয়রকে বলতেই পারে উন্নয়ন আর দলের স্বার্থে। আজ ওটা বলেছে কাল সাবেক মেয়রকে দ্বন্দ্ব নিরসনে নির্দেশ দেবেনা কে জানে। এমনকি আগামী ২বছর পর চট্রগ্রামের দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখে আজম নাছিরকে মন্ত্রীর মর্যাদা আর স্বর্ণপদক দেবেনা কে জানে। কারন ধৈর্যের ফল সুমিষ্ট হয়,সেটা মেয়র নাছির ভালই জানে।
যেমনটি নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান ও আইভীর দ্বন্ধ নিরসনে যখন কেন্দ্রীয় লীগের নেতারা ব্যর্থ। তখন গণভবনে শামীম ওসমানকে ডেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন,শামীম আমার মাথার কাপড়টা সরিয়ে দেখো। কপালে এখনো দাগ রয়েছে।যার কারনে আমার মাথা পেটে গিয়েছিলো তাকে আমার বর্তমান মন্ত্রী সভায় স্থান দিয়েছি। আমি গনমানুষের জন্য রাজনীতি করি,নিজের ব্যক্তিগত ঈর্ষা ক্ষোভ আর অহংকার মিটাতে নয়। এটাই রাজনীতি এটাই গনতন্ত্রের নেত্রী,স্যালটু প্রধানমন্ত্রীর এমন সাহসী পদক্ষেপ কে।
বিজ্ঞ পাঠক সাবেক মেয়র দাবি করেন, অনেক আগে শেখ হাসিনা লালদীঘিতে মিটিং করছিলেন। সে মিটিংয়ে মেয়র গুলি করেছিলেন। এরচেয়ে অযৌক্তিক আর অসাড় কথা কি হতে পারে। মহানগরের সাঃসম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার মিটিং এ হামলা করছে । বড় বিচিত্র তথ্য আর নাটক নয় কি!! তৎকালিন কোন মিডিয়ায় এসব কেহ পড়েছিলো কিনা জানিনা। যদি বলতেন বিএনপি সমর্থিত জামাত শিবিরের ক্যাডার ডালিম/ নাছির হামলা করেছে, তবে যৌক্তিক ছিলো কোনমতে?? এ রকম ভিত্তিহীন বক্তব্য মানুষের হাসির খোরাক হয়,রাজনীতি হয়না।
বর্তমান রাজনীতি হিংসার রাজনীতির নয়। মহাত্বগান্ধীর অহিংসবাদ আর আধুনিক রাজনীতি বদলে গেছে সেকেলে রাজনীতি মাড়িয়ে। সুপার কম্পিউটার আর তথ্য প্রযুক্তির যুগে নিজেদের মনমানসিকতা ও পরিবর্তন জরুরী মনে করে জনগণ। চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মাত্র অভিযোগ করে বলেছেন,”মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র হতে না পেরে তাঁর বিরুদ্ধে নানাভাবে মিথ্যাচার করছেন। এতে করে জনমনে বিভ্রান্ত ও উন্নয়নকাজ ব্যাহত হচ্ছে”। কতো সুন্দর বাচনভঙ্গী আর সহজ সরল অভিযোগ তার। কোন উগ্র মেজাজী বক্তব্য তিনি কখনো সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে দেন নি। তার বিরুদ্ধে আনীত ভিত্তিহীন অভিযোগের উত্তর দিতে গিয়ে নানা রসিকতা করে জবাব দিয়েছেন। এটাই রাজনীতি এটাই দলের প্রতি শ্রদ্ধা।বরাবরের মতো মেয়র নাছির মনে করেন,”সাবেক মেয়র এক সময় বলতেন ১০ হাজার যোদ্ধা পাঠাবেন ইরাকে?কাস্টমসের দুর্নীতিবাজদের তালিকা করবেন?এমএ লতিফের মাথায় লাঠি মারবেন? অথচ উনার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন? একই টেবিলে বসে ভাতও খাচ্ছেন? ছালাম সাহেবের ফাঁসি দাবি করছেন, আবার উনার মেজবানে সবার আগে গিয়ে বসে থাকছেন? উনি তো অনেক কথা বলেন। এটাও তার প্রলাপ” বলে উড়িয়ে দেন।
এমনকি নাছির বলেছেন,কারও চরিত্র হনন করার পক্ষপাতি তিনি নন। নিচু মনমানসিকতা তার নেই। গতকাল উনি যা করেছেন, তা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন।
বয়সের ভারে নুজ্জ হয়ে পড়া বয়সী বটগাছ কোন না কোন গ্রামের মাটিতে এখনো ছায়া দিয়ে যাচ্ছে ।কিন্তু বয়সের ভারে সাবেক মেয়রের বিবেক বুদ্ধি এতোটা লোপ পাবে তা কখনো আশা করেনি চট্রগ্রামের জনগণ। আবার দুষ্টু লোকেরা বলছেন, উনি মেয়র হতে চেয়েছেন। এখন বয়স হয়ে গেছে। ভবিষ্যতেও অন্ধকার দেখছেন। তাই কথা এক জায়গায় স্থির নেই। অনেক টাইপের কথা বলেছেন। ঢালাও অভিযোগ, ভিত্তিহীন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট কোনো কথাবার্তা না রেখে লীগের রাজনীতিবিদদের এমন মন্তব্যে অন্যদল মজা নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যেই বৈঠক করে এসব সমাধান করার ও জোর দেন অনেক রাজনীতি সচেতনমহল।
গত ২৫শে ডিসেম্বর ১৬ইং ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন,আগামী তিন মাসের মধ্যে পার্টির অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করতে। করব। ছয় মাসের মধ্যে যেসব সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন হয়নি সেগুলো করে ফেলতে। নির্বাচনের জন্য অলআউট প্রিপারেশনে চট্টগ্রাম হতে যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দিলেও সভাপতি ও সাঃসম্পাদকের তর্কাতর্কিতে ঝিমিয়ে রয়েছে সব কমিটি। উল্টো সভাপতির অভিযোগ আর নানা মন্তব্যে দলের ভেতরে গ্রুপিং তৈরি করেছে। এতে সাবেক মেয়র দলের ক্ষতি করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আর্শিবাদপুষ্ট কেন্দ্রীয় সাঃসম্পাদকের নির্দেশ ও অমান্য করে যাচ্ছেন বলে মনে করেন চট্রগ্রামের লীগের একাংশ।
দুই নেতার মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে আলোচিত ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং চট্টগ্রামে বিএমএর নির্বাচন নিয়ে পরস্পরমুখী অবস্থান নেন মহিউদ্দিন ও নাছির। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) দুটি প্যানেলকে দুই নেতা সমর্থন দেন। দুই নেতার মধ্যে রেষারেষির প্রভাব নির্বাচনেও পড়েছে একাধিকবার। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেন এমনটি না হয়, সে জন্য বিরোধ মিটিয়ে দুই জনকে এক করার চেষ্টায় আছে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। নাহয় ২০১৯সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে দুনেতার কৃতকর্মের ফলশ্রুতি আর সাবেক মেয়রের এমন বাল্যসুলভ বিতর্কে দলে আত্বঘাতী হামলার মতো বিধে পাহাড়সম বের হবে নির্বাচনে।
জে,জাহেদ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
জাতীয় দৈনিক ও জাতীয় অনলাইন
পাঠকের মতামত