দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই উখিয়ায় শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে জল্পনা কল্পনা। ভোটের হিসাব নিকাশ নিয়ে চলছে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ। কে হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী? আর কে হচ্ছেন সরকার দলীয় মনোনয়নী প্রার্থী? কোন প্রার্থীর কি সুবিধা ও অসুবিধা এই সব নিয়ে। রাজনৈতিক সমীকরণ-মেরুকরণ, রাজনীতির ম্যার প্যাঁচ, ভোট ব্যাংক, প্রার্থীর ইমেজ এই গুলো রয়েছে আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে। তাছাড়া উখিয়ায় নৌকার মাঝি হওয়ার দূরে কে এগিয়ে রয়েছে সেটাই রয়েছে মূল আলোচনায়। বর্তমানে নৌকা প্রতীক পাওয়ার অর্থ হলো নির্বাচনের দৌড়ের অর্ধেক পথ এগিয়ে যাওয়া।
পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছে উখিয়া-টেকনাফের ভোটের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি শেষ খেলা কি খেলবেন সেটা নিয়ে! অতীত নির্বাচনের চিত্র বা পরিসংখ্যানে দেখা যায় বদি’র বৈদ্যালি বুঝে যে সব প্রার্থী সামনে এগুতেই ব্যর্থ হয়েছেন তারাই পা ফসকে পড়েছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে স্থানীয় সচেতন রাজনীতিবিদের ধারণা।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জয় পেতে হলে বদির বৈদ্যালি বা গ্যাছার চালান বুঝেই প্রার্থীদের এগোতে হবে! উখিয়ায় তৃণমূলের বিশাল একটা ভোট ব্যাংক সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি টানা ২ বারের উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তার স্ত্রী শাহিন আক্তার টানা ২ বারের উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। আবদুর রহমান বদি তার মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয়তা, ক্ষমতা ও অঢেল অর্থকে পুঁজি করে ভোটের সব হিসাব নিকাশ মুর্হুতের মধ্যে পাল্টে দেওয়ার রেকর্ড অতীতে অনেকবার দেখেছেন উখিয়া-টেকনাফের লোকজন।
স্থানীয় ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, চলতি মাসের শেষদিকে বা আগামী মাসের প্রথমদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হতে পারে। আসন্ন নির্বাচনে উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসাবে আপাতত যাদের নাম আলোচনা উঠে এসেছে ও উচ্চারিত হচ্ছেন, তারা হলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৩ বারের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, রত্না পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চৌধুরী, হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম ও উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাউসার জাহান নিগার। নির্বাচনের সময় আরো ঘনিয়ে আসতে আসতে প্রার্থী তালিকা আরো দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী শারীরিক অসুস্থতা ও বয়সের কারণে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরীর মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও তিনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে নেই, তাই তার নৌকার মাঝি হওয়া কঠিন। তাকে নির্বাচন করতে হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে।
রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চৌধুরীও তিনি এক সময় জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন, এখন তিনি মূলত আবদুর রহমান বদির অনুসারী, তিনি এখনও আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদান করেন নি, তবে মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগের সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। রত্না পালং ইউনিয়নের তার ভালোই জনপ্রিয়তা রয়েছেন,অনেকটা তিনিই রত্না পালং ইউনিয়নের ভোটের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি নির্বাচন করলে তাকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে।
হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসাবে বর্তমান দায়িত্বে রয়েছেন, তবে দলের নেতা কর্মীদের উপর তার তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। তার বড় ভাই শফিউল আলম কেবিনেট সচিব থাকাকালীন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি হলদিয়া পালং ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাছাড়াও তার ভাইপো এম জাহাঙ্গীর আলম উখিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন। এর সুবিধাও অধ্যক্ষ শাহ আলম পাবেন।
উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাউসার জাহান নিগার উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী স্ত্রী। তিনি তার স্বামী চিকিৎসা নিয়ে বেশি ভাগ সময় ব্যস্ত সময় কাটাছে। তারও মোটামুটি উখিয়ার সর্বত্রই পরিচিতি রয়েছে। তিনি একমাত্র মহিলা প্রার্থী সেটাকে কাজে লাগাতে হয় তো তিনি একটা চমক দেখাতে পারেন।
অধ্যক্ষ শাহ আলম ও কাউসার জাহান নিগার এর ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা আওয়ামী কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু দিন। তাছাড়া দলের হাই কমান্ড কি ভাবে তাদের বিষয় গুলো বিবেচনা করবে সেটা সময় বলে দিবে।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় টানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাথে তার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়া দলের নেতাকর্মীদের উপর তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সদ্য সম্পন্ন হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বড় বোন শাহীন আক্তার বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচতি হয়েছেন। সেটা নিয়েও জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন দলীয় মনোনয়ন তথা নৌকা পাওয়ার ক্ষেত্রে। জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করলে নৌকার মাঝি হওয়ার দৌড়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। রাজনৈতিক সমীকরণ ও মেরুকরণের তিনি অন্যান্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের চাইতে অনেক গুণ এগিয়ে রয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন লাভ ও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে। সম্প্রতি সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তিনি উখিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় চষে বেড়িয়েছেন। যেটা তার জন্য আগামী উপজেলা নির্বাচনে সাপে বর হয়ে দেখা দিবেন বলে তার অনুসারীরা মনে করেন।
দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি যদি কেন্দ্রীয় ভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসাবে উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী অথবা উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরী মধ্যে যে কোন একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে ভোটের মাঠে কঠিন পরীক্ষায় সম্মুখীন হতে হবে বলে রাজনৈতিক বিজ্ঞজনরা মনে করেন। সরওয়ার জাহান চৌধুরী ও সুলতান মাহমুদ চৌধুরী’র ২ জনেরই পুরো উপজেলায় দলীয় ও ব্যক্তিগত বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। বিগত ১৫ বছর এরা ২ জনই অসংখ্য মামলার আসামিও হয়েছেন দলীয় কার্যক্রম চালাতে গিয়ে। দলের জন্য তাদের ত্যাগ রয়েছেন প্রচুর।
উল্লেখ্য, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ক্যাশিমায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।