উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ে ভুয়া ছবি প্রকাশের জন্য ক্ষমা চেয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা স্বীকার করেছে, দুটি ছবি ‘ভুলভাবে’ প্রকাশ করা হয়েছে।
সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মুখপত্র মিন্দানাও ডেইলিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ভুলের জন্য পাঠক এবং ওই ছবি দুটির আলোকচিত্রীদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’
এর আগে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের ‘আসল সত্য’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গত জুলাই মাসে বইটি প্রকাশ করে, যেখানে অন্য দেশের পুরনো দুটি ছবি ব্যবহার করে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। আরেকটি ছবির ক্যাপশনে দেওয়া হয় ভুয়া তথ্য।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সও জানিয়েছে এমনটাই। রয়টার্স বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপত্র ‘দ্য মিয়াওয়াদি ডেইলি’ সোমবার ‘মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য টাটমাডো: পার্ট ওয়ান’ শিরোনামের বইটিতে প্রকাশিত দুটি ছবির জন্য ক্ষমা চেয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট জাতিসংঘের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নিপীড়নকে মিয়ানমারের জেনারেলদের গণহত্যা হিসেবে মন্তব্য করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মাথায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রকাশিত বইতে ইতিহাসের নির্লজ্জ মিথ্যাচার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রয়টার্স। রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের প্রধান বইয়ের দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বইটি।
ওই বইতে বাংলাদেশ ও তানজানিয়ার ছবি দুটিকে রোহিঙ্গাদের ছবি হিসেবে উপস্থাপন করেছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। যেমন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান লাশের ঐতিহাসিক ছবিটিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বইতে ১৯৪০-এর দশকে বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের হত্যাযজ্ঞের ছবি বলা হয়েছে।
আরেকটি ছবিতে রুয়ান্ডার হুতি শরণার্থীদের তানজানিয়া যাত্রার ছবিকে উপস্থাপন করে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ উপনিবেশের পর বাঙালিরা (রোহিঙ্গা বোঝাতে) মিয়ানমারের নিম্নাংশে (রাখাইনে) প্রবেশ করে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েক ডজন নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার জবাবে সেনাবাহিনী ওই নির্মম দমন অভিযান শুরু করে। জাতিসংঘ বলছে, সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে এ পর্যন্ত দশ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
ওই হামলার জন্য ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ নামের এক সংগঠনকে দায়ী করে আসছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তবে ওই সংগঠনটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে।
বর্মী সেনাদের বইয়ে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস খোঁজারও একটি চেষ্টা করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা নিজেদের রাখাইনের স্থানীয় বাসিন্দা বলে দাবি করে এলেও ওই বইয়ে তাদের দেখানো হয়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে।
বইয়ের মুখবন্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল চিয়াও চিয়াও ও লিখেছেন, রাখাইনে ‘বাঙালিদের ইতিহাস প্রকাশ্যে আনতেই’ তারা ‘প্রামাণ্য ছবিসহ’ এই সংকলনটি প্রকাশ করেছেন।
‘দেখা গেছে, যখনই মিয়ানমারে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে বা কোনো ধরনের জাতিগত সহিংসতা হয়েছে, ওই বাঙালিরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে।’
ওই বইয়ে থাকা ৮০টি ছবির মধ্যে বেশিরভাগই সাম্প্রতিক ছবি। বেশিরভাগ ছবিই মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। আর কিছু ছবি নেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’র পোস্ট করা ভিডিও থেকে।
রয়টার্স বলছে, যে আটটি ছবিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, তার মধ্যে তিনটি ছবি তাদের পরীক্ষায় ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। বাকি ছবিগুলোর বিষয়ে রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি।
পাঠকের মতামত