প্রকাশিত: ২৭/০৬/২০১৬ ৮:৫৮ পিএম

kfc-900x450দুনিয়া জোড়া খ্যাতি আছে যে কয়’ খাবারের দোকানের, তারমধ্যে কেএফসি’র নামটাই সম্ভবত সবার প্রথমে আসবে। উন্নতবিশ্বে তো বটেই, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেরগুলোর মানুষের কাছেও কেএফসি’র খাবার খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটু ফুসরত পেলেই আমরা ছুটে যাই ফাস্টফুডের স্বাদ নিতে। আজ যে মানুষের মধ্যে ফাস্টফুডের প্রতি এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়েছে তার পেছনেও রয়েছে কেএফসির ভূমিকা। যার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফাস্টফুডের দোকান।

আজ যারা কেএফসির খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি তাদের ক’জনই জানি—কী করে গড়ে উঠল কেএফসি। আর কিভাবেই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল সারাবিশ্বে।

কেএফসি’র পুরো নাম কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন। কর্নেল হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্স কেএফসি বা কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেনের প্রতিষ্ঠাতা। কেএফসি প্রতিষ্ঠার আগে যিনি জগতের এমন কোনো কাজ নেই—যেটার সঙ্গে নিজেকে জড়াননি।

খুব ছেলেবেলায় স্কুল থেকে ঝরে পড়েন ডেভিড। এরপর কাজ করেছেন ক্ষেত মজুরের, ট্রেনের ফায়ারম্যান, সেলসম্যান, আইনজীবী, গাড়ির টায়ার বিক্রেতা বা ফিলিং স্টেশনের কর্মচারি হিসেবে। শুধু কি তাই? শখের বসে বেশ কিছুদিন ধাত্রী বিশারদের কাজ করেছেন। নাম লিখিয়েছিলেন রাজনীতিতেও। শেষমেশ তিনি নেমে পড়েন রেস্টুরেন্ট বিজনেসে!

কর্নেল স্যান্ডাসের জন্ম ১৮৯০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। বাবা উইলবার ডেভিড ও মা মার্গারেট অ্যানের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। এক দুর্ঘটনায় স্যান্ডাসের বাবার পা ভেঙ্গে যায়। তার দুই বছর পরে ১৮৯৫ সালে মারা যান তার বাবা। বাবার মৃত্যুর কয়েক বছর পর আবার বিয়ে করেন স্যান্ডাসের মা মার্গারেট অ্যান।

সৎ বাবার পরিবারে পড়ে থাকতে ভালো লাগেনি স্যান্ডাসের। ১৯০৩ সালে স্কুল ছেড়ে দিয়ে এক খামারে কাজ শুরু করেন। এরপর ইন্ডিয়ানা পুলিশ বাহিনীর ঘোড়ার গাড়ি রঙ করার চাকরি নেন। ১৪ বছর বয়সে একটি খামারে খেতমজুরের কাজ করেন দুই বছর। সেখান থেকে মায়ের অনুমতি নিয়ে ১৯০৬ সালে ইন্ডিয়ানার নিউ আলবানিতে একটি গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে চাকরিরত তার চাচার সঙ্গে দেখা করেন। চাচা তাকে ওই কোম্পানিতেই কন্ডাক্টরের চাকরি দেন। এখানে বছরখানেক চাকরি করে আলবামার আরেক অঞ্চলে তার আরেকজন চাচার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি সেখানে স্যান্ডার্সকে একটি কামারশালায় ঢুকিয়ে দেন। এখানে দুইমাস যেতে না যেতেই আরেক এলাকা জাসপারে কয়লাচালিত ট্রেনের ছাইয়ের টাংকি পরিষ্কারের কাজ নেন। ১৬ বছর বয়সে কাজ পান ফায়ারম্যানের। এরমধ্যে নর্থফোক এবং ওয়েস্টার্ন রেলস্টেশনে দিনমজুরের কাজও জুটিয়ে নেন।

স্যান্ডার্সের স্বভাবে বেশি দিন বোধহয় এক জায়গায় কাজ করার অভ্যেস ছিল না। দুই বছর পর আবার তিনি ফিরে যান ইলিনয় সেন্ট্রাল রেলরোডে। কাজ নেন ফায়ারম্যানের। এরপর তিনি এক্সটেনশন ইউনিভার্সিটিতে আইন পড়তে শুরু করেন। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে লিটল রক নামের একটি আইন প্রতিষ্ঠানে বছর তিনেক প্র্যাকটিস করে বেশ কিছু পয়সা কামান স্যান্ডার্স। টাকার টানে বাঁধা না পড়ে আইন পেশাকে বিদায় দিয়ে আবার মায়ের কাছে ফিরে আসেন। ১৯১৬ সালে চাকরি নেন এক বিমা কোম্পানিতে। সেই চাকরি হারিয়ে বেশ কিছুদিন সেলসম্যানের কাজও করেছেন। ১৯২০ সালে তিনি একটি নৌকার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানি থেকে তিনি নদীতে চলা ডিঙ্গি নৌকা বিক্রি করতেন। একই সঙ্গে ১৯২২ সালে ইন্ডিয়ানার চেম্বার অব কমার্সে চাকরি নেন। কিন্তু এক সময় চাকরি ছেড়ে দেন। শুধু তাই নয়, ডিঙ্গি নৌকার কোম্পানিও বিক্রি করে দেন ৩৩ হাজার ডলারে।

এরপর পাড়ি জমান কেন্টাকি রাজ্যের উইনচেস্টারে। এখানে এক টায়ার কোম্পানিতে সেলসম্যানের চাকরি নেন। ১৯২৪ সালে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেলে কেন্টাকির স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তিনি তাকে নিকোলাসভ্যালির এক সার্ভিস স্টেশনে চাকরি দেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো ১৯৩০ সালে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। কোনো কূল কিনারা না পেয়ে এ সময় তিনি ভোক্তাদের খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন। যেহেতু চকচকে দামি কোনো রেস্তোরাঁ তার ছিল না, নিজের বাড়িতেই কাজ শুরু করেন। এসময় তার খাবারের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করলে ১৯৩৯ সালে নর্থ ক্যারোলাইনার অ্যাশেভ্যালিতে একটি মোটেল নেন স্যান্ডার্স। ওই বছরই নভেম্বর মাসে আগুন লেগে দোকানটি পুরোপুরি পুড়ে যায়।

জীবন যার সংগ্রামে গড়া তিনি পিছু হটে যাবেন কেন? এবার তিনি মোটেলটিকে ১৪০ আসনের একটি রেস্টুরেন্টে রূপ দেন। ১৯৫২ সালে স্যান্ডার্স ‘চিকেন ফ্রাই’ ধারণাটিকে তার আয়ের উৎসে পরিণত করার উদ্দেশ্যে একটি উপযুক্ত রেস্তোরাঁ খুঁজতে শুরু করেন। না পেয়ে শেষমেশ স্যান্ডার্স ও তার স্ত্রী মিলে সেলবাইভ্যালিতে একটি রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। একটি ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়। সেই রেস্তোরাঁই আজকের কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন। যা কেএফসি নামে সারাবিশ্বে পরিচিত।

১৯৫৫ সাল থেকে মাত্র দশ বছরের মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেএফসির ৬শ’টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালে তিনি তার রেস্তোরাঁটি আমেরিকান এক কোম্পানির কাছে দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করে দেন।

১৯৮০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯০ বছর বয়সে বিশ্বখ্যাত এই ব্যবসায়ী মৃত্যুবরণ করেন।

পাঠকের মতামত

দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রাখাইন, নতুন আশ্রয়প্রার্থীর আশঙ্কায় বাংলাদেশ

নজিরবিহীন সংকটে পড়তে যাচ্ছে প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতির সম্ভাবনা না থাকায় ...

আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশাল সুযোগ’ পেতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

মিসরের বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ...