গত ২৭ বছর থেকে কাজ করে যাচ্ছি দেশের জন্য, বাংলাদেশের মেয়ে আমি এটাই আমার গর্ব এবং অহংকার । দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি গ্রামে -গঞ্জে, বস্তিতে, রাস্তা ঘাটে। ঝড়-বৃষ্টি, জ্বলোচ্ছাস, ভূমিকম্পকে কোন ভয় না করে দেশের যে কোন দুর্যোগে ছুটে গেছি মানবতার সেবায় কাজ করার জন্য । দেশের উন্নয়নের জন্য। দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করছি মাঠে প্রান্তে পরিবার পরিজন ফেলে । শুধু একটা কথা মনে হয়েছে এইদেশ আমার, এইদেশের প্রতিটি জেলা ও জেলার মানুষ আমার । কখনো আমার মনে হয়নি আমি রাজবাড়ির মেয়ে। কোন কাজ করতে গিয়ে কখনো কোন পক্ষপাতিত্ব করি নাই নিজের জেলা বা আত্নীয় স্বজন কাউকে । কিন্তু কখনো কোন জেলার মানুষ আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়েছে আমি নাকি ভয়িইংগা, অন্যজেলা থেকে এসেছি বের করে দেবে, কিভাবে কাজ করি দেখে নেবে, আরও কত হুমকি । একজন নারী হিসেবে আরও কত চ্যালেঞ্জ, কত রকম রসালো গল্প চরিত্র নিয়ে, আমি সুন্দর এটাও আমার অপরাধ । বিশ্বাস করেন শুধু কষ্ট বুকে চেপে আর নীরবে চোখের পানি ফেলেছি সৃষ্টিকর্তার কাছে । শুধু নিজের প্রতি নিজে কনফিডেন্ট, নিজের সততার শক্তি দিয়ে চলছি। যতদিন বেচে থাকব এভাবে বাচব । এনজিও চেয়ারম্যান বলতেই বুঝে সবই আয়েশি জীবন, কোটি কোটি সম্পদের মালিক এর কিছুই আমার নেই । একজন মানবতার কর্মী হিসাবে বেশি কিছু থাকাও কি ঠিক? নিজেরে বিবেককে নিজে প্রশ্ন করি। যখন কাজে ছুটে বেড়াই, মা পিছু ডাকত, কখনো কখনো কান্না করতেন তার আদরের মেয়েটির খাবারের কষ্টে । উন্নয়নের যে যুদ্ধ মা ভয় পেতেন আমাকে নিয়ে, কখন যে আমি অসুস্থ্য হয়ে যাই। মাকে শুধু শান্ত্বনা দিতাম, আমার কিছু হবেনা। তুমি শুধু দোয়া কর, মাকে বলতাম আমিতো শুধু কারো মেয়ে, কারো মা, কারো স্ত্রী না,আমি বাংলাদেশের মেয়ে । দেশের প্রতি আমার কিছু দায়িত্ব আছে তা নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি । পরিবারের সদস্যদের বলে দিয়েছি, আমি বাংলাদেশের যে জেলায় মারা যাই সেখানে আমাকে ইসলামী শরীয়ত মতে কবর দিও। সারা জীবন যদি দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করতে পারি, তাহলে জীবনের শেষ মুহুর্তে কেন সুনির্দিষ্ট জায়গায় মাটি হবে? আবারও সবাইকে বলে রাখলাম আমি যে জেলায় মারা যায় সে জেলায় আমাকে কবর দিও। আজও আমি দেশের এই দুর্যোগে কাজ করে যাচ্ছি মাঠে মানুষের পাশে থেকে । নিজের ছোট বাচ্চাকে তার খালার কাছে রেখে মাঠে প্রান্তে মানবতার সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ছেলেকেও বলেছি বাবা আমি শুধু তোমার মা না, আমি এই দেশের মেয়ে। অনেক অসহায় নারী ও শিশুর রয়েছে, তাদের জন্য কিছু করার আছে । ছেলে আমাকে প্রশ্ন করল আম্মু তুমি কাকে বেশি ভালবাস? আমি তার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে, আমি কি কাজ করি, কাদের নিয়ে করি, কেন করি। তাকে ঘুরিয়ে দেখার পর সে আমাকে বলে আম্মু তুমি কাজ কর, আমি তোমাকে সহযোগিতা করব। আমার বয়স যখন আঠার বছর পার হবে তখন তোমাকে ছুটি দিয়ে দেব। তোমার সব কাজ আমি করে দেব। আজে এ লেখাটার পিছনে আমি মানসিকভাবে বিদ্ধস্থ । আমরা যারা নারী প্রধান এনজিও শুধু মাত্র উন্নয়ন মুলক কাজ করে যাচ্ছি তাদের জন্য এই লেখা । যারা ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম করে না তাদের সবার জীবনের শেষটা কষ্টে কাটায় । যা তারা কাউকে বলতে পারে না সামাজিক মর্যাদা ও পারিবারিক কারণে। সব সেক্টরের জন্য প্লট, আর্থিক সাহায়্যে এবং ব্যবসায়িদের জন্য আরও কোট কোটি টাকার লোন ও সুযোগ সুবিধা বরাদ্দ। আজকে এটা লিখার মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবী রাখলাম, আমার মত ও আমাদের মত এই পেশার নারীদের জন্য কিছু করেন। নারী প্রধান সরকার হিসাবে, একজন মানবিক নেত্রী হিসাবে, দেশ ও অসহায় মানুষের আস্থাভাজন হিসাবে, আপনার বুকে সবার ঠাই হবে এটাই দাবী। এবং আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ ও তাদের মা একজন দেশের উন্নয়নের যোদ্ধা ছিল, সে সম্মানটুকৃু যাতে তারা পায়। তার স্বীকৃতি স্বরুপ কিছু করা। আমরা যারা সারা জীবন শেষ করলাম মানবতার কাজে তাদেরই শেষ জীবন যায় অমানবিকতায় । বাংলাদেশের যে সম্পদ রয়েছে তা দিয়ে মানবিকতার সেবায় ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে চায়। আমার যারা নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করি তাদের একটি তালিকা থাকা দরকার । কোন স্বজন প্রীতি না করে, সত্যিকার অর্থে যারা কাজ করেছে তাদের তালিকা তৈরি করা দরকার। যারা শুধু মানবিক উন্নয়ন মুলক কাজ করেছে, তাদের জন্য রাষ্ট্রী মর্যাদা চাই। যে সমস্ত মহিলারা ব্যবসা করে, রাষ্ট্র তাদের জন্য সুদমুক্ত লোন দিচ্ছে, তাদের পুরস্কৃত করেছে পদবি দিয়ে। তাদের জন্য আর্থিক প্রতিষ্টানগুলো বসে থাকে সাহায্য দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের নির্দেশে। আর আমরা থাকি অসহায়ের মত তাকিয়ে । কি নিষ্ঠুর অসম বন্টন । বাংলাদেশে অনেক অবহেলিত জনগোষ্ঠী অধিকার পেয়েছে আশা করি আমরাও মাননীয় জননেত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি পাব।
লেখক
জেসমিন প্রেমা
চেয়ারম্যান
স্কাস