হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
২০১৫ সালের জুনে ¯্রােতের ধাক্কায় কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া সেতুর দক্ষিণ পাশের প্রায় ৪০০ ফুট দীর্ঘ সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যায়। তারপর থেকে ওই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল দেড় বছর। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে কক্সবাজার ও বান্দরবানের পাঁচটি ইউনিয়নের ৩ লাখের মতো মানুষকে। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বিলীন সংযোগ সড়কটি নির্মাণে এগিয়ে আসেন স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম।
তাঁদের উদ্যোগে ৩০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সংযোগ সড়কটি নির্মাণের পর এখন সেতু দিয়ে যানবাহন চলছে। তবে এলাকাবাসীর জিজ্ঞাসা, আগামী বর্ষায় গর্জনিয়া সেতু রক্ষা করা যাবে কিনা? কারণ হিসাবে তাঁরা বলছেন-সেতুর নিচের বালি খনন করে ¯্রােতের গতিপথ এখনো পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে রাক্ষসী বাঁকখালী নদীর পানি বেড়ে গেলে নবনির্মিত সংযোগ সড়কটি পানিতে তলীয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের’র হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ইতোপূর্বে ২০১৬ সালের এপ্রিলে কক্সবাজারে মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক মো.আলী হোসেনকে স্মারকলিপি দিয়ে তিন দফা দাবির দ্রুত বস্তবায়ন চেয়েছিলেন এলাকাবাসী। সমাবেশে তিন দফা দাবি পেশ করেছিলেন তৎকালীন গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী। দাবিগুলো ছিলো-বাঁকখালী নদীর চর খননের মাধ্যমে ¯্রােতের গতিপথ ঠিক করা, স¤্রাট শাহসুজা সড়ক ও গর্জনিয়া সেতুর দক্ষিণাংশের বিলীন সড়ক মেরামত করে যানবাহন চালু এবং বাঁকখালী নদীর ভাঙনের কবল থেকে ইউনিয়নের চারটি গ্রাম রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। কার্যত সেতুর দক্ষিণাংশের বিলীন সড়ক মেরামত করা ছাড়া বাকি দুটি দাবির বাস্তবায়ন এখনো হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে এলজিইডি প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁকখালী নদীর ওপর ১৬১ মিটার দৈর্ঘ্যের গর্জনিয়া সেতু নির্মাণ করে। সেতুটি রক্ষার জন্য ২০১৪ সালের এপ্রিলে নদীর তলদেশ খনন করে ¯্রােতের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু পলি জমে ওই অংশ ভরাট হয়ে যায়। পরে ২০১৫ সালের জুনে সেতুর দক্ষিণ পাশের প্রায় ৪০০ ফুট সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ দেড় বছর রামু উপজেলার গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ও ঈদগড়ের সঙ্গে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও বাইশারী ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কৃষকেরা।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গর্জনিয়া সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এখন সেতু রক্ষার জন্য নদীর গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বলেন, ‘গর্জনিয়া সেতু সচল করা হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে নদী খনন কাজ চলছে। কিন্তু আমরা পাউবোর পক্ষ থেকে বরাদ্দ পেলে নদীর তলদেশ খনন করে পানির সম্পূর্ণ গতিপথ পরিবর্তন করতে পারবো।’
পাউবোর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, সেতুটি রক্ষা করতে হলে ¯্রােতের গতিপথ পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রকল্পের কাজ আরম্ভ হবে।