রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে সংঘবদ্ধ জঙ্গিদের এ হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন নিহত হয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জুয়েল রানা এ খবর নিশ্চিত করে যুগান্তরকে বলেন, হামলায় গুরুতর আহত গুলশান জোনের এডিসি আহাদও লাইফ সাফোর্টে রয়েছেন। রাত ২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহত হয়েছেন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন।
আইনশৃংখলা বাহিনীর সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে জিম্মি করে রেখেছে ২৫ থেকে ৩০ দেশী-বিদেশী নাগরিককে। জিম্মিদের উদ্ধারে আইনশৃংখলা বাহিনী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনী আলোচনায় বসতে চায়- এ প্রস্তাব সন্ত্রাসীদের কাছে দেয়ার জন্য তারা জিম্মিদের মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে অনুরোধ জানায়।
এদিকে এ ঘটনার পরপরই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। কূটনৈতিক এলাকায় নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুলশানে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে নৌ কমান্ডো ছাড়াও জঙ্গি হামলা বা জিম্মি দশা থেকে উদ্ধারের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষায়িত টিম সোয়াতকে অভিযান পরিচালনার জন্য ঘটনাস্থলে আনা হয়।
রাত ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা রেস্টুরেন্টে অবস্থান করছিল। মাঝে-মধ্যেই ভেতর থেকে গুলির শব্দ আসছিল। জিম্মিদের উদ্ধারে পুলিশ অভিযান চালানোর সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে তিনটি সাঁজোয়া যান আনা হয়েছে।
এদিকে আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আহতদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- পুলিশ কনস্টেবল প্রদীপ (২০), আলমগীর (২০) ও পথচারী আবদুর রাজ্জাক (৩০)। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আহত আরও কয়েকজনকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাত পৌনে ১০টার দিকে গুলশান থানার ডিউটি অফিসার সাইদুর রহমান যুগান্তরকে জানান, রাত পৌনে ৯টায় একদল সন্ত্রাসী গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের ওই রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়।
সন্ত্রাসীদের সংখ্যা প্রথম দিকে ৮-১০ জন মনে হলেও পরে দেখা যায় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীর সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জন। তারা পুরো হোটেলটি জিম্মি করে ফেলে। হোটেলটিতে ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো দেশী ও বিদেশী নাগরিক রয়েছেন।
এর আগে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সন্ত্রাসীরা গুলি ও মুহুর্মুহু বোমা ফাটিয়ে এ হামলা চালায়। এতে এলাকাজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি করতে করতে হোটেলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তাদের হাতে ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি এবং তলোয়ার দেখা গেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরে পুলিশও সন্ত্রাসীদের দিকে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি চলতে থাকে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গুলির পাশাপাশি পরপর বেশ কয়েকটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় যারা ভয়ে ছাদে উঠে গিয়েছিলেন তারা জীবন বাঁচাতে নিচে লাফিয়ে পড়েন। এতেও কয়েকজন আহত হন।
আহতদের মধ্যে বেকারিটির সুপারভাইজার সুমন রেজা সাংবাদিকদের জানান, সন্ত্রাসীরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে হামলা শুরু করে। এ সময় ভয়ে তারা দিগ্বিদিক পালাতে থাকেন। কেউ কেউ চেয়ার-টেবিলের নিচে শুয়ে পড়েন।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরপর কয়েকটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় আহতাবস্থায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা যখনই হোটেলটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তখনই তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় আইনশৃংখলা বাহিনীকে অনেকটা হতবিহ্বল অবস্থায় দেখা গেছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীতে এমন হামলা হবে তারা চিন্তাও করতে পারেননি। তার চাকরি জীবনে কখনও এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে সন্ত্রাসীরা পার পাবে না। তাদের সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবেলা করা হবে।
এদিকে রাত ১১টার দিকে র্যাবের একটি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। আক্রান্তস্থলটিকে ঘিরে হেলিকপ্টারটিকে প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায়। তবে একটি সূত্র বলছে, হোটেলটির ভেতরে সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।