বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অনেকটা জোর করে যাত্রা করেছে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রা এমবি কর্ণফুলী জাহাজ। পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের প্রথম দিন চরম ভোগান্তির মধ্যে দ্বীপে পৌঁছতে হলো সাড়ে ৭ শত পর্যটককে। টানা ৫ ঘণ্টার ভোগান্তির পর দ্বীপে গেলেও ফেরার সময় শুধু ৩০ জন পর্যটক কক্সবাজার ফিরছেন।
চলতি মৌসুমে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
হয়েছে। জাহাজ চলাচলের প্রথম দিন মাঝ সাগরে শতাধিক পর্যটক অসুস্থ হয়ে গেছে। এসব পর্যটকের অভিযোগ, জাহাজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টায় কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে পর্যটকদের বহনকারি এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস
জাহাজটি সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে রওনা দেয়।
এমভি কর্ণফুলি জাহাজের কক্সবাজার অফিসের ইনচার্জ হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর
বলেন, সকালে কক্সবাজার থেকে সাড়ে ৭ শত যাত্রী নিয়ে কর্ণফুলি এক্সপ্রেস জাহাজ রওনা দিয়েছে। দুপুর ১ টার মধ্যে জাহাজটি সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে পৌঁছে। আর বিকাল সাড়ে ৩ টায় যাত্রীদের নিয়ে জাহাজটি সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারের উদ্দ্যেশে রওনা হয়। জাহাজের যাত্রীদের
জন্য ১০ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন মূল্যের টিকেট বিক্রি করা হয়। সর্বনিন্ম ৩ হাজার ২০০ থেকে ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাহাদুর বলেন, নাফ নদীতে ডুবোচর তথা নাব্যতা সংকটের কারণে সরকার চলতি মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন
নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার থেকে চলতি মৌসুমে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে আরও কয়েকটি জাহাজ পর্যটকদের
পরিবহনে যুক্ত হবে বলে জানান এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেসের এ কর্মকর্তা।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন (টুয়াক) এর সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ। কিন্তু হঠাৎ
করে চলতি মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ
ঘোষণা করায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা বিপাকে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হলেও পর্যটকদের টিকেটের চাহিদা ছিল অতিরিক্ত। তাই প্রথমদিনে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকদের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণ বাধাগ্রস্ত হলে দেশের পর্যটন শিল্পের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এতে পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ
হবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে। জাহাজে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি
দলও পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে, যাত্রা দেয়ার ৩ ঘন্টা পর মাঝ সাগরে শতাধিক পর্যটক অসুস্থ হয়ে
পড়েছে। জাহাজ থেকে কয়েকজন পর্যটক ফোনে প্রতিবেদককে জানান, জাহাজটিতে
কতৃপক্ষের অবেহলা রয়েছে। অপরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত এসির সংকটে জাহাজে থাকা
পর্যটকদের শতাধিক বমি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। জাহাজে চিকিৎসার কোন
ব্যবস্থাও নেয়।
জাহাজে থাকা কক্সবাজারের এক গণমাধ্যমকর্মী জানান, অসুস্থ পর্যটকরা শুয়ে
আছে। সেন্টমার্টিন পৌঁছার পর হয়তো চিকিৎসা পাওয়া যাবে। ঢাকার এক কলেজের প্রভাষক শামিম বলেন, আসলে এভাবে হবে কল্পনাও করিনি। জিবনে প্রথম হয়তো বমি করছি। অসুস্থ হয়ে পড়ছি তাই সেন্টমার্টিন থেকে ফিরেনি।
আরেক পর্যটক আমিনুল ইসলাম ইসলাম জানান, দিনে দিনে সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার আশা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। দ্বীপে অবস্থান করছেন তিনি। অসুস্থ শরীরে ফেরার সাহস হয়নি। জাহাজ ভ্রমণ এমন চরম তা জানা ছিল না। এমভি কর্ণফুলি জাহাজের কক্সবাজার অফিসের ইনচার্জ হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানান, তিনি কক্সবাজার রয়েছেন। জাহাজের পরিস্থিতি জেনে বলতে পারবেন। অসুস্থ হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে অনেক সময় জাহাজে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকলে বমি হতে পারে। বিষয়টি তিনি দেখছেন