ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর প্রয়াত গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আটক করা হয়েছে।সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত আমান আযমী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাভোগের সময় মারা যান গোলাম আযম। গোলাম আযমের চতুর্থ সন্তান আবদুল্লাহিল আমান আযমী।
সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত একটার কিছু আগে আবদুল্লাহিল আমান আযমীর ভাই সালমান আল-আযমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে দাবি করেন, ডিবি পুলিশের অন্তত ৩০-৩৫ জন তার ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে।
গোলাম আযমের বাড়ির কেয়ার টেকার আযাদ জানান, ‘আমি রাত নয়টার দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ির সামনে আসি। তখন গোয়েন্দা পুলিশ এসে আমার কাছে জানতে চান, আব্দুল্লাহিল আমান আযমী কোথায়? আমি কিছু জানি না বলাতে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে।'
তিনি জানান, গলির ভেতর প্রায় ২০টি মাইক্রোবাসে ৩০ জনের মত ডিবি পুলিশ এসেছিল। তারা গভীর রাতে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আটক করে নিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, 'চলে যাওয়ার সময় গোয়েন্দা পুলিশেরা আমাকে দেখিয়ে দিতে বলে এই ভবনের আশেপাশে কোথায় কোথায় সিসি ক্যামরা আছে'
আযাদ জানান, গোলাম আযমের বাড়িতে ক্যামেরা ছিল না। কিন্তু মহল্লার নিরাপত্তার ক্যামেরা ছিল গলিতে। সেগুলো তারা খুলে নিয়ে গেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, আবদুল্লাহিল আমান আযমীর বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসীদের উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আছে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উস্কানি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, রাত ১১টার কিছু আগে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বড় মগবাজার কাজী অফিস গলিতে গোলাম আযমের বাড়ি ঘিরে ফেলে। এসময় ওই গলিতে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে রাত সোয়া ১১টার দিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কিছু লোক বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
আশপাশের বাসিন্দারা জানান, ওই বাসার ভেতর থেকে তারা চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। পরে আমান আযমীকে নিয়ে দ্রুত বাসার ভেতর থেকে বের করে এনে গাড়িতে তোলা হয়। এর পর একটি গাড়ির বহর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।ওই গাড়ি বহরের সঙ্গে একটি মোবাইল জ্যামারবাহী গাড়িও ছিল।
জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, 'আটকের বিষয়টি আমরা নিশ্চিত নই। কারা অভিযান চালিয়েছে সে বিষয়টিও স্থানীয় থানাকে অবহিত করা হয়নি।'
রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান রাতে বলেন, 'এ ধরণের একটি খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই আমান আজমিকে নিয়ে যায় বলে শুনেছি।'
তিনি জানান, 'কারা তাকে নিয়ে গেছে তা আমরা নিশ্চিত হতে পারেনি। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তারপরও বিষয়টি আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।'