নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাইলেই গ্রামের মানুষ ইচ্ছেমতো যেখানে-সেখানে বাড়ি করতে পারবেন না। বাড়ি করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। এ সংক্রান্ত আইনও পাস হয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
সোমবার বিকেলে গণপূর্ত অধিদপ্তর মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি এ কথা জানান।
বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে ‘গৃহায়ন নীতিমালা : সাধ্যের আবাস’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী বলেন, আমি আমেরিকা থেকে টাকা কামাই করে আনলাম, আমি দুবাই থেকে টাকা কামাই করে আনলাম, জমি খরিদ করে ফেললাম এবং আমি একটা বাড়ি করে ফেললাম- এটা আর হবে না। এখন আপনাকে যেকোনো বাড়ি করতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউএনওর পারমিশন নিতে হবে। যার একটি বাড়ি আছে, সে আরেকটি বাড়ি করতে পারবে না। যে বাড়ি আছে, চাইলে সেখানে বহুতল ভবন করতে পারবে।
বস্তিবাসীদের জন্য সুখবর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ মিরপুরের বাউনিয়ায় বস্তিবাসীদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করছে। খুব অল্প পরিমাণ ও সহজে পরিশোধযোগ্য ভাড়ার বিনিময়ে বস্তিবাসীরা এসব ফ্ল্যাটে থাকতে পারবেন। এ বছরেই ৫৫০টি ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এ মাসেই উদ্বোধন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার মধ্যে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনের পরিষেবার ব্যবস্থা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ করবে। শুধু ঢাকা শহরে নয়, অন্যান্য শহরেও করতে পারি।
রাজউক, সিডিএ, কেডিএ, আরডিএ আবাসন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আগে সকল মানুষের বিষয়ে গুরুত্ব দিত না। এসব প্রতিষ্ঠানকে সবার জন্য আবাসন গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রাজউক উত্তরায় ১৫ হাজার, ঝিলমিলতে ১৪ হাজার এবং পূর্বাচলে প্রায় ৭০ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করবে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার। স্বাগত বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আখতার হোসেন।
‘মানববসত, ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের সচিব ড. নুরুল ইসলাম নাজেম।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। ৪০ বছর পর ২০১১ সালে তা দ্বিগুণ হয়ে ১৫ কোটিতে পৌঁছেছিল। ২০৫১ সালে এই জনসংখ্যা বেড়ে ৩০ কোটি হবার সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম হওয়ায় জনসংখ্যা হয়তো ৩০ কোটি না হয়ে ২৫ থেকে ২৮ কোটি হতে পারে। ২৫ কোটি হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব হবে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ৬৮৫ জন। যা হবে বিশ্বের সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। দেশের ২৫ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে এদের বসবাস। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানববসত অঞ্চল বাড়ছে না। এর মানে হচ্ছে, কৃষিজমি কমছে। ১৯৭৩-৭৪ সালে মোট ভূমির ৬০ শতাংশ ছিল নীট কর্ষিত ভূমি। ২০১০-১১ সালে কমে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৫৩ শতাংশ। পতিত জমির পরিমাণও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। একই সময়ে মানববসত ভূমির পরিমাণ বেড়েছে ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ। এই হারে কৃষি জমি কমতে থাকলে বাংলাদেশ অন্তত চারটি ঝুঁকির মুখে পড়বে।
তিনি জানান, ঝুঁকি এড়াতে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এই পরিকল্পনা গ্রামে এবং শহরের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদাভাবে করলে হবে না। উভয় মিলিয়ে করতে হবে। সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৪ উপজেলায় গ্রাম ও শহর মিলিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ সময় তিনি ১৪ উপজেলার উন্নয়ন পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আরো আলোচনা করেন- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান, রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি এ কে এম এ হামিদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আকতার মাহমুদ।
উপস্থিত ছিলেন- হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবু সাদেক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির।
পাঠকের মতামত