ঢাকা: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অর্থাৎ আগামী ২১ ফেব্রুয়ারিতে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে ১হাজার, ৫শত, জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সুবিধাসহ নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট নিয়ে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে গোটা দেশ।
ওই দিন সি-মি-উই-৫ কনসোর্টিয়াম তাদের গ্লোবাল অপারেশন চালু করতে যাচ্ছে। কক্সবাজারে প্রথম স্থাপিত সাবমেরিন স্টেশনের চেয়ে আট গুন ক্ষমতা সম্পন্ন হবে পটুয়াখালীতে নির্মিত এ সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনটি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনোয়ার হোসেইন জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই এক গর্বের বিষয় হবে। সমুদ্রের তলদেশের ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হলে বাংলাদেশ সর্বদা অনলাইনে থাকবে এবং আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ ট্রেডের সঙ্গে পুরাপুরিভাবে যুক্ত হবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে একটি সাবমেরিন ক্যাবল থেকে ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পায়। আর দ্বিতীয় ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ১৫০০ জিবিপিএস বাড়তি মিলবে।
তবে এ প্রজেক্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ হয়তো উদ্বোধনের দিন থেকেই পূর্নাঙ্গ ব্যান্ডউইথের সুবিধা পাবে না। রাজধানী ঢাকা এবং পটুয়াখালীতে সি-মি-উই ৫ এর স্টেশনের মধ্যে সংযোগ সংক্রান্ত বিষয় এতে বাধ সাধতে পারে। সংশ্লিষ্ট কাজ হয়তো সময়মতো সম্পন্ন হবে না।
কিন্তু এ বিষয়ে আশাবাদী বিএসসিসিএল। সময়মতোই সব কাজ শেষ করা হবে বলে মনে করছেন মনোয়ার হোসেইন।
এ পকল্পটি চালু হলে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নেটওয়ার্ক দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইথ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। তবে প্রথম প্রকল্পটির লাইফ টাইম শেষে দ্বিতীয় প্রকল্প দিয়েই পুরো দেশে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটার মাইটভাঙ্গা এলাকায় প্রকল্পটির কাজ করে স্টেশনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে।
সাবমেরিন কেবল টেলিযোগাযোগ বিভাগের আঞ্চলিক প্রকল্প পরিচালক পারভেজ মনন আশরাফ জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অন্তত পাঁচ কোটি। ক্রমশই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে কক্সবাজারে একটি মাত্র সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে দেশে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সাবমেরিন স্টেশনটির কেবল লাইন কাটা পড়লে বিএসসিসিএলের কাছে নেটওয়ার্ক সরবরাহের
বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাহকরা প্রায়ই সময়েই চরম র্দূভোগের শিকার হয়। বিশেষ করে কক্সবাজারের নির্মিত দুই’শ জিবিপিএস ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম সাবমেরিন স্টেশনটির লাইফ টাইম শেষে পটুয়াখালীর উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সাবমেরিন কেবল স্টেশন থেকে গোটা দেশে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ফলে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের সংযোগ স্থাপন করতে যাচ্ছে বিএসসিসিএল। দ্রুতগতির নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটসহ নানা সেবা পাবে গ্রাহকরা।
প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, পটুয়াখালীর কুয়াকাটার লতাচাপলি ইউনিয়নের আমখোলা গ্রামে ২০১৩ সালের শেষের দিকে অতন্ত ১০ একর জমির উপর ৬শ,৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশণের। প্রকল্পটির কাজ শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্য সাগরের নিচ দিয়ে ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ কেবল লাইনের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে আসা সঞ্চালন লাইন সংযুক্তির জন্য ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপনের কাজ সম্পান্ন হয়েছে। কুয়াকাটার স্টেশন থেকে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার দুরত্বে উপকূলের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে আসা লাইনটির সংযোগ স্থাপনের কাজ শেষ করেই চালু করা হবে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন স্টেশনটি।
এদিকে কর্তৃপক্ষ গত বছরের নভেম্বরে সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনটি চালু করা সিদ্ধান্ত নিলেও ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে এটি চালু করা হবে। কারন বর্ষা মৌসুমে কেবল সংযোগের চুড়ান্ত কাজ শুরু করার পর বৈরী আবহাওয়ার কারনে তা বন্ধ রাখা হয়। যা নভেম্বর মাসের শেষ দিকে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্টেশন চালু হলে ইন্টারনেট ব্যবহারে বর্তমানের চেয়ে গতি কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। শুধু ইন্টারনেট নয়, এটি চালু হলে তথ্য প্রযুক্তিতে বিশ্বের সাথে দেশের একটি নিবিড় বন্ধন তৈরী হবে। এছাড়াও গ্রামীন জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি উন্নতি সাধনের পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। ল্যান্ডিং স্টেশনের সংযুক্তির মাধ্যমে ডাটার পরিধি বৃদ্ধি এবং দেশের তথ্য প্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর সরবরাহ বৃদ্ধি করা হবে এবং সরকার এ খাতে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের সুযোগ হবে।
-