বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিতরণ কোম্পানি লোকসান করলেও গ্রাহক পর্যায়ের বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়ছে না। এবার আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিদ্যুৎ বিভাগে বাজেট নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি। বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির শর্ত দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুবার দাম বাড়ানো হয়েছে। এটি একটি নিয়মিত সমন্বয়। সরকার চাইলে আমরা দাম বৃদ্ধি করি। আমাদের আবার যখন দাম বৃদ্ধির কথা বলা হবে, তখন আমরা দাম বৃদ্ধি করবো। তবে আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না।
ঝড় ও বন্যার মধ্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহ
ঝড় ও বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ৩০ হাজার পোল বিনষ্ট হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে সবক’টি সাবস্টেশন পানির নিচে চলে গেছে। আমরা এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণের ব্যবস্থা সাজানোর চেষ্টা করছি. যাতে গ্রাহককে ঝড় ও বন্যার মধ্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সরবরাহ আরও বাড়বে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
গ্যাসের স্বল্প চাপ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝড়ের কারণে আমাদের একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী ১৪ থেকে ১৫ জুলাই টার্মিনালটি পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।
আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন। এ সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কোন কোন সমঝোতা স্মারক সই হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মহেশখালী থেকে সমান্তরালভাবে আটটি পাইপলাইন গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। বিষয়টি চীন সফরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থা ও বিতরণব্যবস্থার কিছু প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে যেসব বিষয়ে অনুদান পাবে, সেগুলোর চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হবে। টাকার অঙ্কে এই বিনিয়োগ এক বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই আমরা গ্যাস-সংকট দূর করতে পারবো বলে আশা করছি। এ জন্য আরও দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। এর বাইরে স্থলভাগে ও অগভীর সমুদ্রে নতুন করে কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী মাসের শেষের দিকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি সই হতে পারে।
নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট আট টাকা। এটি বেশি কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুবিধা হচ্ছে কুড়ি বছর ৮ টাকা ইউনিটেই বিদ্যুৎ আমদানি করা যাবে। জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বাড়লে যেমন বিদ্যুতের দাম বাড়ে, এখানে এটা হবে না।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমরা ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সেই হিসাবে এখন ২৬ হাজার মেগাওয়াট হলে ২৬০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসার কথা। কিন্তু আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও ছয় হাজার মেগাওয়াট পাইপলাইনে রয়েছে। এই পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ আসবে বেসরকারি খাত থেকে।
কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায় বিশ্বব্যাংক
নসরুল হামিদ বলেন, সঙ্গত কারণে এখানে বাজেটে বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। ২০৪১ সালের মধ্যে ১০ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য হাতে নিয়েছি। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায়। আমরা তাদের জমি দেবো। তারা সেই জমি উন্নয়ন করে দেবে। একইসঙ্গে গ্রিড লাইন নির্মাণ করে দেবে। এরপর আমরা দরপত্র আহ্বান করবো। এতে সৌর বিদ্যুতের দাম আরও কমে আসবে। আমরা আশা করছি ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের গ্রিডে ছয় হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎ যোগ হবে।
সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ডাকা দরপত্রের সময় বাড়ানো হচ্ছে জানালেও কতদিন বাড়ছে, এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।