ডেস্ক রিপোর্ট ::
হঠাৎ করে দেশে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি লাইসেন্স ও নবায়ন ফি ১০ থেকে ২৫ গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তা গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার খরচ বাড়াবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ বিশেষ কমিশন বৈঠকে আইএসপি নীতিমালার বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইএসপি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে গিয়ে কি ইন্টারনেটের মূল্যবৃদ্ধি করতে আমাদের উসকে দিচ্ছে? প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুমোদন পেলে আমাদের মূল্যবৃদ্ধি করা ছাড়া আর কি বা উপায় থাকবে? এর ফলে সরকারের পরবর্তী নির্বাচনেও প্রভাব পড়তে পারে। তাই এ স্পর্শকাতর বিষয়টির ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
জানতে চাইলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমএ হাকিম বলেন, এ উদ্যোগ গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার খরচ বাড়াবে। অথবা সেবার মান কমিয়ে বাড়তি খরচ বৃদ্ধির বিষয়টি সমন্বয় করতে হবে।
আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলছেন, নতুন প্রস্তাবটি ইন্টারনেট শিল্পের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, সরকার যেখানে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে বিটিআরসির এ নতুন প্রস্তাবনা বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করবে।
আইএসপি ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন এই প্রস্তাবনার আগে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে বিটিআরসি বসেনি। কোনো আলোচনা করেনি। তাহলে এ খাতের ভালো-মন্দের সিদ্ধান্ত তারা কীভাবে গ্রহণ করবে? অনতিবিলম্বে প্রস্তাবিত আইএসপির লাইসেন্স ও নবায়ন ফি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
এদিকে বিটিআরসির নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর উদ্বিগ্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ব্যবসায়ীরা জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। তবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে যদি প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট গ্রাহকদের ওপর মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি দেখতে পাই; তাহলে আমাদের প্রস্তাবিত আইএসপি লাইসেন্স ফি সংক্রান্ত আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে হবে। তবে তা সহসাই হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শাহজাহান মাহমুদ।
প্রসঙ্গত, আইএসপি লাইসেন্স ফি ১০ থেকে ২৫ গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নেশনওয়াইড আইএসপির জন্য নতুন লাইসেন্স ফি ঠিক করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এ ধরনের আইএসপির বার্ষিক লাইসেন্স নবায়ন ফি হবে ৫ লাখ টাকা। দুই ক্ষেত্রেই এর আগে ফি ছিল ১ লাখ টাকা করে। সেন্ট্রাল জোন আইএসপির নতুন লাইসেন্স ফি ১৫ লাখ ও লাইসেন্স নবায়ন ফি ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে জোনাল আইএসপির নতুন লাইসেন্স ফি ১০ লাখ ও নবায়ন ফি ২ লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে বিটিআরসি। বাড়তি লাইসেন্স ফি ছাড়াও এসব প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটের ব্যবসা করে বছরে যা আয় করবে তার ১ শতাংশ অর্থ ‘রেভিনিউ শেয়ারিং’ হিসেবে বিটিআরসিকে দিতে হবে।
এ ছাড়া আইএসপির বার্ষিক আয়ের আরও ১ শতাংশ বিটিআরসির সামাজিক সুরক্ষা তহবিলে (এসওএফ) জমা দিতে হবে। উল্লেখ্য, বিটিআরসির হিসাবে বর্তমানে দেশে সব মিলিয়ে ৫৯০টি আইএসপি সেবা দিচ্ছে। সারা দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের ৪৪ লাখ গ্রাহক রয়েছে।
পাঠকের মতামত