তুষার তুহিন :
চিন্তা মনি শীল। পুলিশ কনস্টেবল নম্বর ৩৪৮। বর্তমানে কর্মরত আছেন উখিয়া থানায়। কিন্তু ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যৌতুক মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে রামু থানায়। তিনি রামুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ২০১৫ সালের ৪৪ নম্বর মামলার পলাতক আসামী। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশও করেছেন উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। বিবাদী পক্ষ কক্সবাজার পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বরাবর আবেদন করেছেন। কিন্তু তারপরও বহাল তবিয়তে উখিয়া থানায় চাকরি করে যাচ্ছেন ওই চিন্তা মনি শীল।
আদালত সূত্র জানায়, চিন্তা মনি শীল রামুর জোয়ারিরনালার পূর্ব নোনাছড়ির রমনির পাহাড়ের মৃত বিমল চন্দ্র শীলের ছেলে। তাঁর ছেলে আশীষ আশীষ কুমার শীলের সাথে ২০১৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর টেকনাফের ডেইল পাড়ার সুমী রানী শীলের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস পর শ্বশুর চিন্তা মনি শীলের প্ররোচনায় যৌতুকের জন্য বৌকে মারধর ও নির্যাতন শুরু করেন ছেলে আশীষ কুমার শীল। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১ আগস্ট দুপুরে আশীষ তার বৌকে ১ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য মারধর করেন। ওই সময় শ্বশুরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে বাবা ও ছেলে মিলে সুমীকে ঘর থেকে বের করে দেয় । তখন সুমী গর্ভবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে অপারেশন সুমী ছেলে সন্তানের মা হন। কিন্তু তখনও খবর নেয়নি সুমীর শ্বশুর বাড়ির কোন লোকজন। এমন ঘটনা উল্লেখ করে ২০১৫ সালের ২২ মার্চ রামু সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যৌতুক চাওয়ার অপরাধে স্বামী ও শ্বশুরকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন সুমী রানী শীল। উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দায়ের করে বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় ওই বছরেই আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরয়োনা জারি করেন। সেই থেকে পলাতক অবস্থায় দেশের বিভিন্ন থানায় পুলিশে চাকরি করছেন চিন্তা মনি শীল। কিন্তু রামু থানা পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক আসামী।
এ বিষয়ে মামলার বিবাদীর বাবা রনজিত শীল জানান, তার মেয়ের শ্বশুর পুলিশ কনস্টেবল। বর্তমানে উখিয়া থানায় কর্মরত রয়েছেন। এ কারণে রামু থানা পুলিশ তাকে আটক করছে না। কয়েকদফা পুলিশকে অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এমনকি কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন নির্যাতিত নারী।
তিনি আরো জানান, ওই আবেদনে উখিয়া- টেকনাফ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদির সুপারিশ রয়েছে। ওই আবেদন পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল স্বারক নং-২৭৮৩ মূলে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে রামু থানাকে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনো কার্যকর করেনি রামু থানা পুলিশ।
তবে রামু থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, আদালতের পাঠানো পরোয়ানাতে থাকা ঠিকানায় চিন্তা মনি শীলকে ধরতে কয়েকদফা অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তিনি পলাতক রয়েছেন। চিন্তা মনি শীল পেশা কি তা তিনি জানেন না বলে দাবী করেছেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহালম বাবুল জানান, চিন্তা মনি শীলের বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি হয়েছে বছরখানেক আগে। পুলিশ তাকে খুজে পাচ্ছে না মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দিলে বিবাদী পক্ষ থেকে আদালতে অবহিত করা হয় চিন্তা মনি শীল পুলিশ সদস্য। এরপর আদালত চিন্তামনিশীলের বিরুদ্ধে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে পরোয়ানা ভুক্ত আসামী চিন্তামনি শীল নিজেকে সুমী রানী শীলের শ্বশুর বলে স্বীকার করে জানান, রামুর জোয়ারিনালায় ছিল তার অস্থায়ী বসবাস। তবে তার ছেলের বৌ যৌতুক মামলা করেছেন সেটা তিনি জানেন । কিন্তু সেই মামলায় যে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে তা তিনি জানেন না।
তিনি আরো জানান, যদি তার বিরুদ্ধে তেমন পরোয়ানা জারি হয়ে থাকে তবে তিনি ঊর্ধ্বতন অফিসারদের পরামর্শ মত ব্যবস্থা নিবেন।
এদিকে উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, চিন্তা মনি শীল উখিয়া থানায় কর্মরত আছেন। তবে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কিনা তিনি জানেন না। যদি রামু থানা পুলিশ গ্রেফতার পরোয়ানা বিষয়ে তাকে অবহিত করেন তবে তিনি চিন্তা মনি শীলকে আদালতে সোপার্দ করার ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। সুত্র\ দৈনিক কক্সবাজার
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত ট্রেন দুর্ঘটনার ভুয়া খবর সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে একটি মহল। ...
পাঠকের মতামত