প্রকাশিত: ০১/০৭/২০১৮ ১২:০৩ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:১৯ এএম
বালুখালি ক্যাম্পের ভেতরে ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করছে এক রোহিঙ্গা। ছবি- সাকিব উল ইসলাম

ডেস্ক নিউজ : ত্রাণ বিক্রির টাকায় ঘর ভাড়া দিতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়-সম্বল ফেলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এজন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে পাওয়া ত্রাণ খোলা বাজারে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে।

শনিবার (৩০ জুন)  সকাল থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত চারটি রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংস নির্যাতনের পর গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। বর্তমানে তারা উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টির মতো শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনাফের জাদিমুড়া পাহাড়ের ওপরে গড়ে উঠেছে একটি অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবির। সেখানে চার হাজার রোহিঙ্গার জন্য ১১৫টি ঝুপড়ি ঘর রয়েছে। প্রতিটি ঘরের মাসিক ভাড়া ৫০০ টাকা। স্থানীয় বাসিন্দা মো. ছব্বির, মো. ইলিয়াছ, সাইফুল ইসলাম ও নূর মোহাম্মদ নামের চার ব্যক্তি নিজেদেরকে ওই জমির মালিক দাবি করে ঘরের ভাড়া আদায় করছেন। এর মধ্যে মো. ছব্বিরের ৩০ ঘর, মো. ইলিয়াছের ২০, সাইফুল ইসলামের ২৫ ও নূর মোহাম্মদ ৪০টি ঘরের ভাড়া আদায় করছেন।

টেকনাফের লেদার তুলা বাগান এলাকায় আড়াই একর জমিতে রয়েছে রোহিঙ্গাদের আরেকটি শিবির।  সেখানে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গার জন্য ১৪২টি ঝুপড়ি ঘর রয়েছে এখানে। এই জমির মালিক দাবিদার দিল মোহাম্ম নামে এক ব্যক্তি প্রতিটি ঘর থেকে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাড়া তুলছেন। এছাড়া, আশেপাশে এলাকায় গড়ে ওঠা আরও  প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে ঘর ভাড়ার টাকা যোগাতে  হয়। তারা মূলত ত্রাণ বিক্রি করেই ঘর ভাড়ার টাকা ভাড়া পরিশোধ করেন। তবে এই ৫০০ টাকা যোগাতেই  হিমশিম খাচ্ছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো।

জানতে চাইলে টেকনাফের তুলা বাগান জায়গার মালিক দাবিদার দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘এই জায়গাটি আমার বাব-দাদার আমলের। এখানে ধানচাষ করে আমাদের পুরো পরিবারের সংসার চলতো।  মানবিক কারণে সেখানে এখন রোহিঙ্গাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে।’ তাহলে টাকা নিচ্ছেন কেন,  এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন তাদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেইনি। কী করবো, আমাদেরও তো বাচঁতে হবে। তাই তারা যা দিচ্ছে, তা নিচ্ছি। ’

টেকনাফের লেদা রাস্তার পূর্বে লবনের মাঠে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রোহিঙ্গা নাগরিক মো. একরাম। তিনি বলেন, ‘কম খেয়ে বেচেঁ থাকা যায়, কিন্তু ঘর ছাড়া কি সহজে বেঁচে থাকা যায়? ওপারে (রাখাইনে) সেগুন গাছের তিন তলা বাড়িতে সুখের সংসার ছিল, আর এপারে কাদাঁমাটিতেও সংসারের সুযোগ সহজে মিলছে না। যে জায়গায় ধানের চাষ হতো, সেখানে ছোট্ট একটি তাঁবুর নিচে প্রথমে ঠাঁই হয়েছিল। তবে ভাড়া দিতে না পারায় বেশি দিন সেখানে থাকা হয়নি। ত্রাণ বিক্রি করে মাসে ৫০০ টাকার বিনিময়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি।’

তিনি আরও  বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে নাফ নদী পেরিয়ে সাত মাস আগে  বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। সঙ্গে ছিল পরিবারের আট সদস্য।’ একরাম জানান, মিয়ানমারের পেরাংপুল গ্রামে তার বাড়ি । সেখানে তার তিন তলা কাঠের বাড়ির একেক তলায় পাঁচটি করে কক্ষ ছিল। নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতেন ।

একরাম জানালেন, লবনের মাঠে যে জায়গাটিতে পরিবার নিয়ে এখন আছেন, মো. ইলিয়াছ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই জায়গার মালিক বলে দাবি করেন। কিছু দিন যেতে না যেতে ঘরভাড়ার টাকা দাবি করেন ইলিয়াছ। টাকা দিতে না পারলে ঘর ছেড়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। তখন থেকে সরকারি-বেসরকারিভাবে পাওয়া ত্রাণ বিক্রি করে ভাড়ার টাকা শোধ করছেন তিনি। ‘কম খেয়ে হলেও ঘর ভাড়ার টাকা দিতে হচ্ছে। না হলে কই থাকবো।’,— বললেন এক সময়ের স্বচ্ছল গৃহস্ত বর্তমানে নিঃস্ব এক শরাণার্থী মো. একরাম।  টেকনাফ লামার বাজারে ত্রাণ বিক্রি করছিলেন রহিম উল্লাহ ও রহিমা বেগম নামে দুই রোহিঙ্গা। রহিম উল্লাহ বলেন, ‘বিভিন্ন এনজিও  থেকে পাওয়া কিছু ত্রাণ বাজারে বিক্রি করছি। কেননা, মাস শেষে ঘরভাড়া দিতে হবে। তাই সকাল থেকে এখানে বসে ত্রাণ বিক্রি করে কিছু টাকা উপার্জন করছি। ’

হ্নীলা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ঘরভাড়া দিতে স্থানীয় দোকানে কম দামে ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছে। বিশেষ করে ঘর ভাড়ার নগদ টাকার জন্য তারা ত্রাণ বিক্রি করছে।’

সাত হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। তাদের সবারই ঘরভাড়া পরিশোধ করতে হয়। এই টাকার জন্য তাদের ত্রাণ বিক্রি করতে হচ্ছে।’

টেকনাফ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি জমিতে যেসব রোহিঙ্গা শিবির গড়ে উঠেছে, সেখানে রোহিঙ্গারা বিনা ভাড়ায় থাকছে। এসব শিবির থেকে কারও ভাড়া নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তারপরও জমির মালিকানা দাবি করে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ঘরভাড়া তোলার বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

পাঠকের মতামত

তিন ব্যবসায়ীকে অর্থদন্ড উখিয়ায় খোলাবাজারে টিসিবি পণ্য জব্দ করলেন ইউএনও

কক্সবাজারের উখিয়ায় খোলাবাজারে অবৈধভাবে বিক্রি করা টিসিবি পণ্য জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার ...

‘সৈকত ও ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ নামে আরও এক জোড়া ট্রেন পাচ্ছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের যাত্রীরা

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের যাত্রীরা পাচ্ছেন আরও এক জোড়া ট্রেন। পাশাপাশি স্থায়ী করা হচ্ছে বর্তমানে চলাচলরত বিশেষ ...