চট্টগ্রাম - কক্সবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বর্তমান পুরাতন সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। রেলপথ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি খসড়া প্রকল্প তৈরি করেছে এবং ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবান করার লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার (০৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠিতব্য চলতি অর্থবছরে (২৫ অর্থবছর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) তৃতীয় বৈঠকে খসড়া প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হতে পারে। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় একনেক সভায় সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মোট ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকার প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার তহবিল দেবে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ৭ হাজার ১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার যোগান দেবে ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন(ইডিসিএফ) এবং কোরিয়ার ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশেন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ)।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নির্বির্ঘ্নে ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ নিশ্চিত করা এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি করা। যা রেলপথে ভারত, মিয়ানমার ও চীনের সাথে সংযোগের পথ সুগম করবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু থেকে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে: সারজিস
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে পুরানো এবং জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারে না। এছাড়া মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি এ রুটের গুরুত্বও বাড়বে। এরইমধ্যেই দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালুর মাধ্যমে ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ফলে পর্যটন নগরীর সঙ্গে নির্বিঘ্ণে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে বিদ্যমান পুরনো সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে কোরিয়ান সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের আমদানি ও রফতানি কার্যক্রমের ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে নির্বির্ঘ্নে রেল যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নতুন সেতুটি নির্মিত হলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত কল-কারখানার পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য পরিবহন করতে সক্ষম হবে।
মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৭০০ মিটার রেল-কাম-রোড ব্রিজ নির্মাণ, ৬.২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২.৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪.৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১.৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ।
সূত্র বাসস