উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬/০৯/২০২৩ ৮:৫৫ এএম

দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজে হাত দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছার মতোই সমানে কাজ করেছে জাপানের স্বার্থও। দুই দেশের স্বার্থ মিলেমিশে এক হলে উপকৃত হবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের মানুষ। সে সঙ্গে সারাদেশের মানুষও এর উপকারভোগী হবেন। পর্যটননগরী কক্সবাজারে ভিড় বাড়বে দেশ-বিদেশের মানুষের। দুই ধাপে ১৫৯ কিলোটিমার দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে বাস্তবায়নে অর্থায়ন করবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকা। পুরো কাজের তদারকি করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

চলতি মাসের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। এটি দুই ধাপে বাস্তবায়ন হবে। প্রথম ধাপে তিনটি বাইপাস, একটি আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনের উড়াল সড়ক এবং পটিয়ার সীমানার পুরো সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হবে। তিনটি বাইপাসের মধ্যে আছে দোহাজারী, আমিরাবাদ ও চকরিয়া। দোহাজারী বাইপাস করতে গিয়ে বর্তমান শঙ্খ নদীর ভাটির দিকে আরও একটি ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করা হবে। আবার চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতেও দুই লেনের একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। ওই সড়ক ও সেতুটি সরাসরি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।

কেরানীহাটে একটি আড়াই কিলোমিটারের উড়ালসড়ক (ফ্লাইওভার) নির্মাণ করা হবে যেটি শুরু হবে দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইনের আগে থেকে।

প্রকল্পের এই ধাপে সম্ভব্য খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা যার পুরোটাই জাইকা দেবে। দ্বিতীয় ধাপে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে ৯৫ কিলোমিটার সড়ক। তা-ও চার লেনে উন্নীত করা হবে, যথারীতি অর্থায়ন করবে জাইকা।

প্রকল্প পরিচালক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শ্যামল ভট্টাচার্য আমাদের সময়কে বলেন, জাইকার সঙ্গে আমাদের ঋণ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এখন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এরপর পরামর্শক নিয়োগ থেকে অন্যান্য কাজ শুরু হবে। ইতিপূর্বে বুয়েটকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তখন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) হিসেবে এ সড়ক সম্প্রসারণের একটি কাজে বুয়েটকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এখন প্রকল্পে ভিন্নতা এসেছে। আমরা প্রথম পর্যায়ে চারটি বাইপাস ও একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সাল নাগাদ মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ শুরু হতে পারে। এ বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে জাপান। মাতারবাড়ি বন্দরকে পুরোপুরি কার্যকর করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে সচল করার কোনো বিকল্প নেই। সেই চিন্তা থেকে জাপানই এগিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা দেনদরবার করেও তেমন ফল পায়নি বাংলাদেশ সরকার। জাপানের কাছেও সরকার একাধিকবার সড়কটি সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সরকার এবং জাপানের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কৌশলগত দূরত্বের কারণে এক পর্যায়ে এমন শঙ্কা দেখা দেয় যে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে চার লেনে উন্নীত করা ছাড়া অন্য পথ নেই। এমন সময় জাপানই আগ্রহ দেখিয়ে দ্রুত এগিয়ে এসেছে। পুরো প্রক্রিয়া এমন দ্রুত এগিয়েছে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এটির সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন হতে পারে। তবে পুরোদমে কাজ শুরু হবে নির্বাচনের পর।

এর মধ্যে জাপান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের যেখানে অতিরিক্ত বাঁক আছে সেগুলো চিহ্নিত করেছে। কারণ এসব বাঁকের কারণে বড় ও ভারী গাড়ি চলাচলে বেশ অসুবিধা হয়। বুয়েট এ সমস্যা চিহ্নিত করার পর জাপানও নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পর তা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান আমাদের সময়কে বলেন, আগামী অক্টোবর নাগাদ আশা করি একটি ভালো খবর আমরা জানাতে পারব। এখনই সব কথা বলছি না।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দেশের ব্যস্ততম সড়কের একটি। এটির বেশির ভাগ অংশের প্রশস্ততা ১৮ থেকে ৩৪ ফুট। ফলে দূরপাল্লার গাড়িগুলো নিজস্ব গতিতে চলতে পারে না। ১৫৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে একটি দ্রুতগতির বাসের সময় লাগে গড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা। অতিরিক্ত বাঁক, সাইড রোড থেকে হরহামেশা গাড়ি সড়কে উঠে আসার কারণে সড়কটি বাংলাদেশের অন্যতম দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়ক হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে। নতুন প্রকল্পে সাইড সড়কগুলোর ওপর দিয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের কাজ ২০২৮ সালের মধ্যেই শেষ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের অর্থাৎ অবশিষ্ট ৯৫ কিলোমিটার সড়কে চার লেনে সম্প্রসারণের কাজও শুরু হয়ে যাবে।
– আমাদেরসময়

পাঠকের মতামত

উখিয়ার সোনার পাড়া হাটেই বিক্রি হচ্ছে ৮০ লাখ টাকার সুপারি, খুশি চাষিরা

আব্দুল কুদ্দুস,কক্সবাজার কক্সবাজারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে সুপারির। ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা। ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্প মুখি নয়, কলেজ মুখি হতে হবে শিক্ষার্থীদের-শাহজাহান চৌধুরী

নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষায় মেধা প্রস্ফুটিত হয়। উচ্চ শিক্ষায় অভিভাবক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে আগামীর সুন্দর ...

চেয়ারম্যান ও ৩ প্যানেল চেয়ারম্যান অনুপস্থিত : হ্নীলা ইউনিয়নের সেবা কার্যক্রম বন্ধ

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ইউনিয়নেরে চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান ৩ জন অনুপস্থিত ...