দীর্ঘ অপেক্ষার পর কক্সবাজার পর্যন্ত স্থায়ী নতুন আন্তঃনগর ট্রেন পেল স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রবাল ও সৈকত এক্সপ্রেস নামের ট্রেন দুটি পরিচালনায় আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রেন দুটি যাত্রী পরিবহন শুরু করবে।
উদ্বোধনের পর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটে একটি বিরতিহীন (আংশিক বিরতি) ট্রেন চালু করে রেলওয়ে। এই ট্রেনে টিকিটের তীব্র চাহিদার কারণে এক মাস পর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ১ জানুয়ারি থেকে আরো একটি বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে সরাসরি ট্রেনের দাবি থাকলেও রেলওয়ে সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে ঈদ উপলক্ষে চালু হওয়া একটি বিশেষ ট্রেনকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির মুখে এখনো চালু রেখেছে রেলওয়ে। ওই ট্রেনটিকে পূর্ণাঙ্গ আন্তঃনগর ট্রেনে রূপ দিয়ে প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন চালানোর একটি প্রস্তাব রেলের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হলেও সেটির অনুমোদন দিতে বিলম্ব হচ্ছিল ।
গত ১১ ডিসেম্বর প্রবাল এক্সপ্রেস ও সৈকত এক্সপ্রেস নামের দুটি আন্তঃনগর (উভয়পথে) ট্রেন চালাতে রেলভবনকে প্রস্তাব দেয়া হয়। রেলভবন থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর প্রস্তাবটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রেলপথ মন্ত্রণালয় দ্রুত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন চালানোর অনুমোদন দেয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান জনবল দিয়ে এই রুটের নতুন দুই জোড়া ট্রেন চালাতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিসে নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২০ এর ২(২.০) ধারার আলোকে বাংলাদেশ রেলওয়ের মার্কেটিং শাখা কর্তৃক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ক্যাটারিং সেবা দিতে সাময়িক অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্যাটারিং সেবা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ ও ট্রেনগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের পর এই পথে টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি। ঢাকা থেকে দুটি সরাসরি ট্রেন থাকলেও চট্টগ্রাম থেকে স্থায়ী কোনো ট্রেন ছিল না। একটি অস্থায়ী বিশেষ ট্রেন থাকায় আমরা ট্রেনটিকে প্রতিদিন উভয়মুখে ৪বার চালানোর পরিকল্পনা করেছি। পাশাপাশি আন্তঃনগর ট্রেনে রূপ দেয়ার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হয়েছে। আপাতত লোডের সংখ্যা কম হলেও ভবিষ্যতে যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় ট্রেনের কোচ ও সেবা বাড়ানোর মাধ্যমে পর্যটন শহরগামী যাত্রীদের সেবা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ সংক্রান্ত নথিপত্রে দেখা গেছে, তথ্যমতে, নতুন অনুমোদিত ট্রেন দুটির নাম হবে যথাক্রমে সৈকত এক্সপ্রেস (৮২১ ও ৮২৪) ও প্রবাল এক্সপ্রেস (৮২২ ও ৮২৩)। ট্রেন দুটির মোট লোডের সংখ্যা ১৬/৩২। পিএইচটি টাইপের কোচ দিয়ে ট্রেনগুলোর প্রতিটির আসন হবে অন্তত ৭৪৩টি। এর মধ্যে ৮২১ নং ট্রেনটি ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। ৮২২ নং ট্রেনটি সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছবে। অপর দিকে ৮২৩নং ট্রেনটি দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার এবং ৮২৪ নং ট্রেনটি সন্ধ্যা ৮টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে।
রেলওয়ের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশের মধ্যে কক্সবাজারগামী ট্রেনেই টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ঢাকা থেকে দুটি ট্রেন থাকলেও সারাদেশের অন্য কোনো গন্তব্য থেকে কক্সবাজার যাওয়ার কোনো ট্রেন নেই। চট্টগ্রাম থেকে দৈনিক দুটি ট্রেন সরাসরি কক্সাবাজার চলাচল করায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামে এসে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ভ্রমণের সুযোগ পাবে যাত্রীরা। বিশেষ করে চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রেলরুট সংলগ্ন জেলার যাত্রীরা ট্রেনে করে চট্টগ্রামে এসেও কক্সবাজার ভ্রমণের সুযোগ পাবে রেলের নতুন এই উদ্যোগের কারণে।
পাঠকের মতামত