উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চবির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১২(২) ধারা অনুযায়ী প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদে (সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত প্যানেল হতে নিয়মিত ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ অথবা পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল (৩ নভেম্বর) অপরাহ্নে তিনি উপাচার্য পদে যোগদান করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার গত ১৩ জুন ২০১৯ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ১৯৫৬ সনে কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আফসার কামাল চৌধুরী এবং মা মরহুমা বেগম লুৎফুন্নাহার কামাল। তাঁর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) জনাব মো. লতিফুল আলম চৌধুরী। তিনি ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জননী।
এছাড়াও প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ১৯৯১ সনে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৮১ সনে এম.এ. এবং ১৯৭৮ সনে বি.এ. অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৫ সনে চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৩ সনে কক্সবাজার সরকারী মহিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন।
তিনি ১ জানুয়ারি ১৯৯৬ চবির বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি ২৫ জানুয়ারি ২০০৬ সনে প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি নজরুল জন্মশত বর্ষ উদযাপন পরিষদ কর্তৃক ‘চট্টগ্রাম একুশে পদক ২০১০’ পদকসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মানসূচক পদকে ভূষিত হয়েছেন। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। তিনি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সৌদিআরব, সিংগাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ সফর করেন।
তিনি ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ ছাড়াও তিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের অনুসন্ধান কমিটির (প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট নাম সুপারিশ প্রদানের জন্য) সদস্য ছিলেন। তিনি নির্বাচক মন্ডলীর সদস্য হিসেবে জয়ীতার (বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারী নির্বাচন) সাথে কাজ করেছেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম রজত জয়ন্তী, একুশে ফেব্রুয়ারি এবং মহান স্বাধীনতা দিবস ও মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ভারত, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব অব হীরণ লাইব্রেরি, কলকাতা, ভারত-এর সদস্য ছিলেন। তিনি ‘কুচবিহার অনাসৃষ্টি’ (বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা), পশ্চিমবঙ্গ-এর উপদেষ্টা, ‘লোক বাংলা’ (লোকসংস্কৃতি বিষয়ক সাময়িকী), ঢাকা, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেরিটেজ রিসার্চ সেন্টার (BHRC), ঢাকা, বাংলাদেশ-এর সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে প্রকাশিত বিভিন্ন জার্ণাল, পান্ডুলিপি (গবেষণা পত্রিকা), বাংলা বিভাগ এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্বর্ণ পদক এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একুশে পদকে ভূষিত হন।