উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮/১১/২০২২ ৯:৫৬ এএম

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি ও সমাবর্তন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে ডিনদের সঙ্গে নিজের দপ্তরে বসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। হালকা চালে শুরু হয় সেই আলোচনা। কীভাবে অনুষ্ঠান করা যায়, সেটি নিয়েই হচ্ছিল নানা কথা।

এর মধ্যে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী উপাচার্যকে সমাবর্তনের আগে সিন্ডিকেটের ডিন ক্যাটাগরির নির্বাচন দেয়ার অনুরোধ জানাতেই বদলে যায় সভার পরিবেশ। কথা-পাল্টা কথা চলার সময় নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষুব্ধ উপাচার্য শাসাতে শুরু করেন নিজামীকে। একপর্যায়ে বলে ওঠেন ‘চুপ বেয়াদব, একদম চুপ। বের হয়ে যান।’

আলোচিত এই সভাটি হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার সকালে। তবে অভ্যন্তরীণ সভা হওয়ায় এতদিন সেখানে কী আলোচনা হয়েছিল, তা সেভাবে প্রকাশ্যে আসেনি।

সেদিনের সভার ১ ঘণ্টা ২৯ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ দৈনিক বাংলার হাতে এসেছে। সেই অডিও ক্লিপে উপাচার্য-ডিনের বাগ্‌বিতণ্ডার বিস্তারিত শোনা যায়।

অডিও ক্লিপটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আলোচনার একপর্যায়ে হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বা সমাবর্তন করব, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনই রক্ষা করছি না। অনেক সিন্ডিকেট সদস্যের পদ খালি। সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নেই। আমরা ডিনরা আছি। অথচ ডিনরা সিন্ডিকেট সদস্য হতে পারবে না।’ তখন উপাচার্য বলেন, ‘আমাকে সময় দিন।’ হেলাল উদ্দিন জানতে চান, ম্যাডাম আর কতদিন সময় দেব। সমাবর্তনের আগে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচন না দিলে আমি অনুষ্ঠানে আসব না।

ডিনের এ কথাতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন উপাচার্য। বলতে থাকেন, ‘আমি সিন্ডিকেট নির্বাচন করব না। সমাবর্তন করব না। আপনি যান।’

কথা-পাল্টা কথার একপর্যায়ে ডিনকে বেয়াদব উল্লেখ করে উপাচার্য টেবিল চাপড়ে বলতে থাকেন, ‘বেয়াদব, চুপ, একদম চুপ। বের হয়ে যান।’

সেটি শুনে হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, ‘আপা আপনি সীমা লঙ্ঘন করবেন না। আপনি গায়ের জোরে সবকিছু করে যাবেন, আইন মানবেন না। নিজের মতো করে সিন্ডিকেটে সবকিছু পাস করিয়ে নেবেন, তা তো হতে পারে না।’

এভাবে দুজনের বাগ্‌বিতণ্ডা চলতে থাকে ৫-৬ মিনিট ধরে। এতেই মূলত পণ্ড হয়ে যায় সভা। সভাকক্ষ ছেড়ে চলে যান উপাচার্য। দুজনের বাগ্‌বিতণ্ডার সময় সভায় উপস্থিত অন্য সাত ডিন চুপ ছিলেন। পরে হেলাল উদ্দিন নিজামী অন্য ডিনদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে এভাবে উপাচার্য বেয়াদব বলে গেলেন। আপনারা কেউ কিছু বললেন না। আপনারা বিচার করুন।’ তখন কয়েকজন তার পক্ষে কথা বলতে শুরু করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। চবি সিন্ডিকেটের ছয়টি পদে শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিতরা প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়া ও শিক্ষকদের পদোন্নতির কারণে বহু বছর ধরে সেসব পদে কোনো শিক্ষক প্রতিনিধি নেই। কয়েক বছর ধরে সিন্ডিকেটের এসব শূন্য পদে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষকরা। সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরিতে নির্বাচন দিতে গত ১২ অক্টোবর উপাচার্যকে চিঠি দেন ডিনরা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতিও এসব পদে নির্বাচন দিতে উপাচার্যকে এক মাস সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে।

সাম্প্রতিককালে সিন্ডিকেট নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে প্রশাসনের নানা অনিয়মের কারণে। গত কয়েক মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিজ্ঞপ্তির বাইরে অতিরিক্ত ১৩ জন শিক্ষক নিয়োগ, মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অতিরিক্ত তালিকায় থাকা প্রার্থীকে নিয়োগ, ভালো ফলধারীদের বাদ দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্ত অমান্যসহ নানা অভিযোগ ওঠে। অথচ এসব কিছুই পাস করা হয় সিন্ডিকেট সভাতেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে নির্বাচন দিচ্ছে না প্রশাসন। সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি না থাকায় একদিকে যেমন অনিয়ম বৈধতা পাচ্ছে, তেমনি শিক্ষকরাও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডিন ও জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। এর পরও অনিয়ম থেমে নেই। মূলত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক প্রতিনিধি না থাকায় কেউ এসবের প্রতিবাদ করেন না। বাইরে থেকে আসা প্রতিনিধিদের ম্যানেজ ও সুবিধা দিয়ে এসব অনিয়ম পাস করিয়ে নেয়া হচ্ছে। শিক্ষক প্রতিনিধিরা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন এই ভয়ে উপাচার্য নির্বাচন দিচ্ছেন না। সেদিনের সভায় নির্বাচনের দাবি জোরালোভাবে তোলার কারণেই হেলাল উদ্দিন নিজামীর ওপর এক প্রকার চড়াও হয়েছেন উপাচার্য।’ সেদিনের বাগ্‌বিতণ্ডার বিষয়ে জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন নিজামী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে বিশ্বাস করেন না, তাই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদকে কার্যকর করতে চান না। সাড়ে তিন বছরেও তিনি সিন্ডিকেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন দেননি। আমরা যখন এটি নিয়ে কথা বলতে গেছি, তখনই তিনি অভব্য আচরণ করেছেন। কেননা এখন তিনি ও তার প্রশাসন আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি থাকলে তো তিনি এসব করতে পারবেন না।’

উপাচার্যের এমন আচরণকে স্বভাবজাত বলে উল্লেখ করেন হেলাল উদ্দিন নিজামী। বলেন, ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কতটা অশালীন, তা এখন সবাই জেনেছে।’

হেলাল নিজামীই তাকে ‘বেয়াদব’ ডেকেছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সেদিনের সভায় সমাবর্তন ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে কথা হচ্ছিল। এর মধ্যেই হেলাল নিজামী বলে ওঠেন সিন্ডিকেটের ডিন প্রতিনিধি নির্বাচন দিন। আমি বলেছি সময় লাগবে, আগে সমাবর্তনটা হোক। কিন্তু তিনি বলতে থাকেন আমি সমাবর্তন দিতে বাধ্য। আমি বলেছি আপনি স্টক এক্সচেঞ্জে (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) কমিশনার ছিলেন, এখানে এসে নেতা হতে চাচ্ছেন- সময় লাগবে তো। এরপর তিনি উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে সমাবর্তন বন্ধ করে দেয়ার কথা বলতে থাকেন। আমি বলেছি বেয়াদবি করবেন না, এটা উপাচার্যের দপ্তর। তখন তিনি বলেন আপনিই বেয়াদবি করতেছেন।সুত্র: দৈনিক বাংলা

পাঠকের মতামত

যে কারনে মামলার মুখে পড়তে পারে ইউনিয়ন ব্যাংক

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ‘নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’ এ মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ...