দুপুর থেকে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি। মুহুমুহু স্লোগানে মুখরিত গোটা নয়াপল্টন এলাকা। দুটি ট্রাকের উপর লাগানে মাইকে বাজছিলো দলীয় ও গণসংঙ্গীত। বিকালে হঠাৎ পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর সরগরম বিএনপি অফিস থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পুলিশ প্রায় সাড়ে চারশ নেতাকর্মীকে আটকের পর অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। এ সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢুকতে চাইলেও তাকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাত সাড়ে সাতটার দিকে তিনি কিছু সময়ের জন্য কার্যালয়ের ভেতরে যান। তবে রাত আটটার পর তিনিও অফিসের সামনের রাস্তা থেকে বাসায় চলে যান। এরপর নিস্তবদ্ধতা নেমে আসে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
Video Player is loading.
Play
Unmute
Remaining Time -8:20
Fullscreen
Close PlayerUnibots.in
এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সাংবাদ কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ছটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঢুকতে বাধা দেয়ায় ফুটপাথে অবস্থান নেয় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই মূহুর্তে নয়াপল্টন পার্টি অফিসের সামনে থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করে নিন।
তিনি বলেন, একটা পার্টি অফিসের সামনে এভাবে পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা, আমাকে অফিসে ঢুকতে না দেয়া অন্যায়। এটা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে পার্টি অফিসে এসেছি। আমাকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
রাত সাড়ে ৭টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন এখন পর্যন্ত সিনিয়র নেতাসহ সাড়ে চারশ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আজকের ঘটনায় যারা নিহত এবং আহত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণসহ এই ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন তিনি। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলার জন্য সরকারকে দায়ী করেন মির্জা ফখরুল।
ডিএমপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে প্রচুর বোমা পাওয়া গেছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার সন্ধ্যায় কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হলে রাস্তায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। পুলিশ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে কয়েক দফা অনুরোধ করেও কাজ না হওয়ায়া তাদের ওপর চড়াও হয়। এতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ এসময় রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস শেল ছুড়ে। নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মকবুল হোসেন (৪০) নামে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার স্ত্রীর দাবি, মকবুল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। একই দাবি তার বড় ভাইয়েরও। তিনি বলেন, সকালে দোকানের জন্য পুতি কিনতে মকবুল সদর ঘাটে গেছেন।
ওই সংঘর্ষের পরই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে ডিবি পুলিশ। বিকেল ৫টা ৬ মিনিটে বিপ্লব কুমার সরকার ডিবির মতিঝিল বিভাগের একটি ইউনিটসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢোকেন। তারা কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দলটির প্রায় সাড়ে চারশ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।