শাহনাজ শারমিন::
খেলাটা দু-চোখের খেলাটা পুরনো ... কিছুটা ছোয়া ছুঁই ... ছুটে যেতে যেতে যেতে পরে যাবে ধরা ... খেলাটা আকাশের খেলাটা মেঘেদের কিছুটা বৃষ্টির মতোই ... ভিজে যেতে যেতে যেতে ভালোবাসে যারা... অজুহাত খোঁজা মন সারাদিন... কত আর বোঝাবো নিজেকে ...চলো বসা যাক, ভালোবাসা যাক যেন আর কিচ্ছু পারি না ... ক্ষণস্থায়ী এই জীবনের অনুভূতিগুলো কত বিচিত্র তাই না!
আর এই অনুভূতি কি ভালো লাগার নাকি ভালোবাসার? মানুষ কী স্থির হৃদয়ের? এখনই হাসি আবার এখনই কান্না। দুঃখ-কষ্ট থাকলেও সব ভুলে আবার যে যার মতো চলতে থাকি, এ যেনো একটা প্রতিযোগিতার জীবন। কেউ কাউকে বুঝতে দেই না মনের একান্ত গোপন কথা। ভালোবাসার গল্পগুলো বড়ই রহস্যময় ও বৈচিত্র্য।
ব্যাপারগুলোকে আমরা একেক জন একেকভাবে বিবেচনা করি আবার কেউ কেউ এড়িয়ে যাই। সবকিছুর ভীরে কিন্তু চাপা পড়ে যায় ভালোলাগার ব্যাপারটি। প্রকৃতপক্ষে, আমরা কি ভালোবাসা আর ভালোলাগার সংজ্ঞা জানি? দু’টি কি একই জিনিস না আলাদা?
শুধু কি নিজেদের কথা বললেই হবে? বিশ্ব কাপানো বিখ্যাত মহারথীরা কি ভালোবাসা সম্পর্কে অজ্ঞ? সেটা কিভাবে হয়। আসুন না তাদের ভাবনায় দেখি ভালোলাগা আর ভালোবাসা কী?
ভালোবাসার সংজ্ঞা বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। ব্যক্তিভেদে এই সংজ্ঞা বদলে যায়। প্রেম বা ভালোবাসার তাত্ত্বিক অর্থ এত বিস্তৃত এবং গভীর যে, ব্যাখ্যা না দিয়ে সংজ্ঞার সীমাবদ্ধতার মধ্যে এর বিভিন্নমুখী তাৎপর্যকে তুলে ধরা সম্ভব নয়। সম্ভবত এই একটি মাত্র জটিলতার কারণেই ভালোবাসার সংজ্ঞা নিয়ে অধিকাংশ দার্শনিক মাথা ঘামাননি।
ভালোবাসা সম্বন্ধে পৃথিবীর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক বার্নার্ডশ বলেছেন, ‘প্রেম হলো সিগারেটের মতো যার আরম্ভ অগ্নি দিয়ে, আর পরিণতি ছাইয়ে।’
কীটসের মতে,‘ভালোবাসা যে পেল না, আর ভালোবাসা যে কাউকে দিতে পারল না, সংসারে তার মতো দুর্ভাগা নেই।’
ভালোবাসার সম্পর্ক অনেক বছর এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আবার পারস্পরিক বন্ধুত্ব বা পছন্দের বিষয়গুলি ভাগ করে নেয়ার কারণেও সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক অক্সিটোসিন এবং ভাসপ্রেসিন নির্গত হয়।
অধিকাংশ মানুষের মতে, ভালোবাসাকে একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় যেটা একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি আকর্ষিত হয় বা একে অপরকে অনুভব করে। কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা প্রতি ক্ষেত্রে কারো উপস্থিতি অনুভব করা ভালোবাসার সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত।
কিন্তু ভালো লাগার সংজ্ঞা কি হতে পারে? ভালোলাগার সংজ্ঞা হলো যা কিছু সুন্দর যা কিছু দেখলে হৃদয় উদ্বেলিত হয় তাই হলো ‘ভালো লাগা’। হতে পারে আপনি পাহাড়-সমুদ্র কিংবা বাসার ছাদে জ্যোৎস্না রাতে ভরা পূর্ণিমা রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে অভিভূত হয়ে গেলেন সেটা কি ভালো লাগা নয়?
অনেকেই এ ব্যাপারে বলেন, জীবনে অনেককেই আমার ভালো লেগেছে কিন্তু বিশেষ কাউকে এখনো খুঁজে পাইনি’। প্রথম দৃষ্টিতে ভালো লাগবে তার মানে এই নয় যে আপনি তার প্রেমে পড়ে গেলেন। প্রতিদিনই নির্দিষ্ট কেউ একজনের সঙ্গে আপনার যখন দেখা হবে কথা হবে। চলতে চলতে এক সময় এই ভালো লাগা থেকেই ভালোবাসায় জড়িয়ে যাবেন।
আবার যার সঙ্গে কোনো দিন দেখা হবার সম্ভাবনা নেই এমন কারো সঙ্গে যদি দেখা হয়ে যায় আপনার তাহলে মনের মধ্যে কোনো আকর্ষণ তৈরি হয় তখন তাকে কি বলবেন? এটা হলো ভালো লাগার এক চরম অনুভূতি।
তবে বর্তমানে ভার্চুয়াল জগৎটা প্রেমকে বা জীবনের বন্ধনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। কত দূর-দূরান্ত থেকে প্রেম হচ্ছে, বিয়ে হচ্ছে।
একটি মজার বিষয় হচ্ছে, আমরা অনেকেই ভালোবাসা আর ভালো লাগাকে একসঙ্গে মিলিয়ে ফেলি। কেউ কেউ এই ভালো লাগাকে ভালোবাসা বলে পুষতে থাকেন।
সব সম্পর্কই কি ভালোবাসা? অন্যের সঙ্গে আপনার পরিচয় বা সম্পর্ক থাকার মানেই কি সেটা ভালোবাসা হয়ে যায়? নাকি এ সম্পর্ক নিছক ভালো লাগা? একজন মানুষ যখন কোনো তারকা বা দারুণ আকর্ষণীয় ব্যক্তির প্রতি টান অনুভব করে তখন তাকে ভালোলাগা বলা যেতে পারে।
সবাইকে ভালো লাগতে পারে, কিন্তু সবাইকে ভালোবাসা যায় না আর সব ভালোলাগাকে ভালোবাসায় রূপ দেয়া যায় না। কিন্তু ভালোবাসা হলো ভালো লাগার চূড়ান্ত রূপ। ভালোবাসার মানুষকে অবশ্যই ভালো লাগতে হবে।
বিবার্তা