চাকরি পাওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভাইভা বা ইন্টারভিউ। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি আচার আচরণ, পরিচ্ছন্নতা, চিন্তা-ভাবনা, পোশাক এবং চরিত্র— ইত্যাদি বিষয়ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি সাক্ষাৎকারের প্রথম ইম্প্রেশন আপনার প্রথম দর্শন। হোক পুরুষ কিংবা নারী।
ইন্টারভিউতে একজন নিয়োগকর্তা শুধু জ্ঞানই যাচাই করেন না তার সঙ্গে এটাও দেখে নেন আপনি চাকরিটির জন্য আগ্রহী কিনা। অসাবধানতা বসত পরে আসা পোশাক নিয়োগকর্তাদের কাছে আপনাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। তাই ইন্টারভিউর সময় সঠিক পোশাক পরা উচিত। জানুন একজন নারীর চাকরির ইন্টারভিউয়ের পোশাক কেমন হওয়া উচিত।
চাকরির ইন্টারভিউয়ে নারীদের আদর্শ পোশাক কোনটি?
চাকরির ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে পোশাক নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি ও স্মার্ট লুক ইন্টারভিউতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেক্ষেত্রে এমন পোশাক নির্বাচন করুন যা আপনার ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলবে। ফরমাল পোশাক এবং মার্জিত লুক যেকোনো ইন্টারভিউতেই বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। বাঙালি নারীর সৌন্দর্য শাড়িতেই ফুঁটে ওঠে। ইন্টারভিউতে ফরমাল পোশাকগুলোর মধ্যে অন্যতম শাড়ি। তবে বর্তমানে সেলোয়ার কামিজই বেশি পরা হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে ফরমাল শার্ট-প্যান্ট আর স্যুটের প্রতিও মেয়েদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তবে একজন নারী কেমন পোশাক পরবেন তা নির্ভর করবে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর। যেমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো ইসলামিক ঘরানার। সেখানে কোর্ট বা শার্ট প্যান্ট না পরাই ভালো। আবার কিছু ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান আছে, যারা স্যুট বা কোর্টকেই বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। ইন্টারভিউতে একজন নারীর পোশাক কেমন হবে তা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে।
ইন্টারভিউতে নারীদের অফিসিয়াল পোশাক কোনটি?
ইন্টারভিউতে ফরমাল পোশাক বলতে স্যুট বা শাড়ি কেই বোঝানো হয়। শাড়ির ক্ষেত্রে সুতি শাড়ি পরাই উত্তম। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের দিকে বাড়তি নজর দিন। বেশি ডিজাইনযুক্ত ব্লাউজের বদলে এয়ার হোস্টেস গলার ও থ্রি কোয়াটার হাতাযুক্ত ব্লাউজ পরতে পারেন। স্কার্ট পরলে, স্কার্টের লেন্থের দিকে বিশেষ নজর রাখুন। যাতে লেন্থ অন্তত হাঁটু পর্যন্ত হয়। অনেক নারীই আছেন যারা হিজাব পরিধান করেন। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডিজাইনযুক্ত হিজাব এড়িয়ে চলুন।
কোন রঙের পোশাক পরবেন?
চাকরির ইন্টারভিউতে খুব বেশি উজ্জ্বল যেমন- লাল, কমলা, ম্যাজেন্টা রঙের পোশাক না পরাই উত্তম। স্যুট পড়লে বেছে নিন নেভিব্লু, ধূসর বা কালো রঙ। শাড়ির ক্ষেত্রেও সুতির হালকা রঙের শাড়ি পরুন। পোশাকের রঙ যাতে একেবারেই ঝকমকে না হয়, সেদিকে নজর রাখা জরুরি।
পোশাক ছাড়াও যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
১. ইন্টারভিউয়ে যাওয়ার জন্য যতটা সম্ভব কম জুয়েলারি ও অ্যাক্সেসরিজ পরার চেষ্টা করুন। ছোটো কানের দুল, হাতে একটা ঘড়ি এর থেকে বেশি কিছু না পরাই ভালো।
২. পোশাকের সঙ্গে মানানসই জুতো পরা জরুরি। সেইসঙ্গে বেশি হাইহিল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
৩. এলোমেলো অবস্থায় চুল খুলে ইন্টারভিউ না দিতে যাওয়াই ভালো। আবার চুলের অত্যাধিক স্টাইলও ইন্টারভিউর সময় কাম্য নয়। পরিপাটি করে চুল বেঁধে নিন।
৪. বেশি বড় নখ ও জমকালো রঙের নেলপলিশ এড়িয়ে চলুন। আপনার স্কিন টোনের সঙ্গে খাপ খায় এমন নেইল পালিশ ব্যবহার করুন
৫. অতিরিক্ত মেকআপ করা উচিৎ নয়। খুবই হালকা মেকআপ করুন যাতে তা অতিরঞ্জিত মনে না হয়।
৬. যদি শাড়িতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তাহলেই কেবল শাড়ি পড়ুন নয়তো শাড়ি পড়বেন না।
৭. হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করুন তবে তা খুবই অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে যাতে তা কারো বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
এছাড়াও সঙ্গে রাখতে পারেন আধুনিক ব্র্যান্ডের যেকোনো ব্যাগ। আর মনে রাখতে হবে যে, ‘ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দ্য লাস্ট ইমপ্রেশন’। চাকরির ইন্টারভিউর ক্ষেত্রে আপনার ফার্স্ট ইমপ্রেশনই চাকরি পাওয়া বা না পাওয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। তাই নিজের ড্রেস-আপ এবং ব্যক্তিত্বকে ইন্টারভিউয়ারদের সামনে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। চাকরির ইন্টারভিউতে যতটা সম্ভব সজীব, পরিচ্ছন্ন ও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন