নিউজ ডেস্ক::
বিতর্কিত ও সনদ ব্যবসায়ে নিয়োজিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে নানাভাবে নেয়া সনদধারীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে বাতিল হচ্ছে ১০ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখা থেকে নানভাবে গ্রহণ করা সব সনদ। আর বিধি অনুযায়ী, এসব সনদধারীদের চাকরি হারাতে হবে। এ কারণে আতঙ্কে আছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারীরা।
তবে গত ১০ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কত শিক্ষার্থী সনদ নিয়েছে তার কোন তথ্য নেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩৭ টি শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা কোন প্রতিকারও চাইতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ১০ বছরে অন্তত ৫০ হাজার শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ নিয়েছেন। এই সনদের যোগ্যতায় অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এর মধ্যে অনেকে সরকারি চাকরিও করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে চাকরি পেয়েছেন, সেই যোগ্যতা যদি অকার্যকর হয়, সনদ যদি অবৈধ হয় তবে তার চাকরিও অবৈধ হবে। এ কারণে চাকরি হারাতে হবে এসব সনদধারীদের। জানা গেছে, চলতি বছরের ২৫ জুলাই হাইকোর্ট এক চূড়ান্ত রায়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ওই রায়ে যেহেতু ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেহেতু ওই সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে দেওয়া সব সার্টিফিকেটও অবৈধ।
ইউজিসির চেয়ারম্যানের মতে, চার মালিক থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অবৈধ ঘোষণা করে। তারপর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা হাইকোর্টে রিট করে স্থগিতাদেশ নিয়ে এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই হাইকোর্ট তাদের চূড়ান্ত রায় জানিয়ে দেয়।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী লাইব্রেরিয়ান নিয়োগে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নিয়ে বিপাকে পড়েছিল শিক্ষা প্রশাসন। আবেদনকারীদের সংযুক্ত সনদগুলোর মধ্যে ৭১৬টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ৪ হাজার ৬৮৫টিই ছিল দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডি শাখার ১৭১টি সনদ প্রাথমিক যাচাইয়ে সঠিক বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মাউশি। এর আগে ২০১১ ও ২০১২ সালে দারুলের সনদে চাকরি পেয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন আরো হাজার খানেক সহকারি গ্রন্থাগারিক। কয়েকমাস আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো দারুলের সনদে সহকারি গ্রন্থাগারিকসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান বলেন, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানসন্ডি শাখার সনদ বৈধ হবে এমন একটি নির্দেশনা সেসময় আমাদের দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে যে সব শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়টির ধানমন্ডি শাখার সনদ দেখাতে পেরেছিল, সেগুলোকে যোগ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এরকম বহু শিক্ষক দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ নিয়ে বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন বলে তিনি জানান।
তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়কে অবৈধ ঘোষণার পর এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে নেওয়া যে কোনও সিদ্ধান্তের কারণে কোন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি তার দায় নেবে না। এরপর বিভিন্ন সময়েই এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২০১১ সালের পর থেকে দারুল ইহসানের কোনো সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না ।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত কিছুর পরও সব সময়ই ইউজিসির ওয়েবসাইট এবং প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন, ডাইরি সব জায়গায় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও পরিচিতিসহ বিস্তারিত উল্লেখ ছিল। এ সব কারণে সব দায় শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, শিক্ষা প্রশাসনেরও আছে।
পাঠকের মতামত