সঞ্জয় বড়ুয়া ।।
চাঁদ দেখার অপেক্ষায় সবাই। এ চাঁদ যেনতেন চাঁদ নয়, এই চাঁদ ঈদের চাঁদ। চাঁদ দেখার সাথে সাথেই খুশির বন্যা বইবে। সারাদেশের মতো বন্দরনগরীতেও সবাই মেতে উঠবে ঈদের আনন্দে। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় সরগরম হয়ে উঠবে নগরীর বাজার আর শপিং সেন্টারগুলো।
সবার মতো ছোট্ট জিসানও প্রতিবছর ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখার অপেক্ষায় থাকবে আজ সন্ধ্যায়। সন্ধ্যাকাশে চাঁদ দেখলেই ছুটে যাবে ছোট চাচ্চুর কাছে। প্রতিবার এই চাঁনরাতেই জিসানের সবরকম আবদার পূরণ করেন তার ছোট চাচ্চু সরোয়ার। জিসানের সবধরনের ঈদের উপহার যা যা লাগবে সবই কিনে দেন। দেওয়ানহাট নিবাসী ইঞ্জিনিয়ার সরোয়ার আলম বলেন, চাঁনরাতে কেনাকাটার মধ্যে ঈদের অন্যরকম আমেজ। বাপদাদাদের দেখাদেখিতে সেই ছোটবেলা থেকে আমরাও চাঁদ রাতে ঈদের কাপড়সহ নানারকম উপহার সামগ্রী কিনে থাকি আত্মীয়স্বজনদের জন্য। ঈদের আগে এভাবে সবাই মিলে কেনাকাটা করা আমাদের মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের একরকম নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে কর্মব্যস্ত জীবনে ঈদের আগে বন্ধ থাকাতে সানন্দে কেনাকাটা উপভোগ করতে পারি।
এসময় রিয়াজ উদ্দিন বাজার, হকার মার্কেট, টেরি বাজারসহ নগরীর অন্যান্য শপিং সেন্টারগুলোতেও ঈদের কেনাকাটায় মুখর হয়ে উঠে। বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জে এবং চট্টগ্রামের স্থানীয়দের মাঝে চাঁদ রাতে কেনাকাটা করা একরকম নিয়মে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, চট্টগ্রামের স্থানীয়দের মাঝে চাঁদ রাতে কেনাকাটা করা একরকম ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ঈদের চাঁদ আকাশে দেখলেই সবাই দলবেঁধে কেনাকাটা করতে ছুটে যায়। গ্রামের বাজারগুলোতে এসময় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। নগরীর বড় বড় বাজারগুলোতেও স্থানীয়দের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠে কেনাকাটা। সবাই মাঝে তখন ঈদের আমেজ। ব্যবসায়ীরাও চাঁদ রাতে ভোর পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখে। রাতভর কেনাকাটার পর নামাজ শেষে সবাই মেতে উঠে কোলাকুলিতে।
ঈদের সময় ব্যবসায়ী বাবার সাথে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পায় মোগলটুলীর বাসিন্দা মেহের আফরোজ তাসনোভা। এই তরুণী বলেন, বাবা এতটাই ব্যস্ত থাকে যে ঈদের আগে ছাড়া কখনোই কোথাও যায় না আমাদের সাথে। ঈদের আগে বাবার কোন কাজ থাকে না। তাই এই সময়, বিশেষ করে চাঁদ রাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে ঈদের কেনাকাটা করি।
পরদিন ঈদ, তাই অল্প সময়ে সবকিছু কমদামে পেতে চাঁন রাতে কেনাকাটা করে লোকজন। এই সময় কেনাকাটা করতে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে জানিয়ে টেরিবাজারের আরেক ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, অল্পদামে কাপড়চোপড় পাওয়ার আশায় এসময় লোকজন বেশি ভিড় জমায়। ক্রেতাদের মাঝেও যেমন থাকে কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার তাড়না, তেমনি ব্যবসায়ীরাও চায় দ্রুত সবকিছু বিক্রি করে ঈদের দিন পরিবারের সবার সাথে একটু বেশি সময় কাটাতে। তাই এসময় রাত যতই বাড়তে থাকে ততই ক্রেতাদের উপস্থিতির সাথে সাথে বিক্রিও বেড়ে যায় অনেক। বিশেষ করে নগরীর কর্মব্যস্ত লোকজন এবং মধ্যবিত্তদের মাঝে চাঁদ রাতে কেনাকাটা করাটা নিয়মে পরিণত হয়েছে।
কর্মজীবী, দরিদ্র, মধ্যবিত্ত সবাই চাঁদ রাতে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটার সুযোগ বেশি পায় উল্লেখ করে রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে আশেপাশের বিভিন্ন জেলা বা বিভাগীয় শহরের লোকজনের আবাস। কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের বন্ধের আগে সবার সুযোগ মিলে কেনাকাটা করার। কাজ শেষে এই চাঁদ রাতেই কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার তাড়না থাকে তাদের মাঝে। আর ন্নিবিত্ত আর মধ্যবিত্তরাও এসময় অল্প দামে ঈদের কেনাকাটার আশায় ভিড় জমায় বাজারে। তাই চাঁদ রাতে বাজারগুলোতে ভিড় যেমন থাকে তেমনি বিক্রিও বেশ জমজমাট হয়।
চাঁদ রাতে কেনাকাটা করাটা চট্টগ্রামে মানুষদের কাছে অন্যরকম ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিপণি বিতান মার্চেন্টস্ ওয়েলফেয়ার কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাগির বলেন, বন্দর নগরীর স্থানীয় লোকজন চাঁদ দেখার পর থেকে কেনাকাটায় মেতে উঠে। দেশের অন্যান্য স্থানগুলোর তুলনায় চট্টগ্রামে চাঁদ রাতে কেনাকাটা করার চল বেশি। তবে ইদানিং সেটা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে অনেকেই নতুন ডিজাইনের পোশাক কিনতে আগেভাগেই অনলাইন শপিং সাইটগুলো থেকে বা ঈদের অনেক আগেই কেনাকাটা সেরে ফেলে। তবে চাঁদ দেখার সাথে সাথে মার্কেটগুলোতে ভিড় অন্য সময়ের তুলনায় বেশি হয় জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, নগরীর সব মার্কেটগুলো এই চাঁদ রাত থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত খোলা থাকে। পরদিন ঈদ, তাই যতক্ষণ বেচাবিক্রি শেষ না হয় ততক্ষণ আলো জ্বলে নগরীতে। ভোরের আলোর সাথেই সাঙ্গ হয় এই কেনাকাটার। তারপর সবাই নতুন পোশাক গায়ে মেতে উঠে ঈদের আনন্দে।