জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠকে তথ্য
চার বছরে রোহিঙ্গা বেড়েছে এক লাখ
বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার করে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বাড়ছে। এটি নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গাদের পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছে সরকার।
গতকাল রোববার রোহিঙ্গা নিয়ে জাতীয় টাস্কফোর্সের (এনটিএফ) ৩৯তম বৈঠক শেষে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ ছাড়া বৈঠকে ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীসহ সংশ্নিষ্ট অঙ্গ সংস্থার প্রতিনিধি, বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলকে (ইউএনএফপিএ) রোহিঙ্গাদের পরিবার পরিকল্পনার কাজগুলো জোরদার করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে শিগগির কাজ শুরু করবে। এ বিষয়টি ইউএনএফপিএর আঞ্চলিক প্রধানকে আগেই জানানো হয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশে রেহিঙ্গা জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
তাহলে সরকারি হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা কত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কাছে ১১ লাখ রোহিঙ্গার একটি হিসাব রয়েছে। তবে ৩০ হাজার করে রোহিঙ্গা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে গত ৪ বছরে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে যোগ হয়েছে। তবে সেখানে নতুন করে কোনো শুমারি হয়নি।
এনটিএফের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। আজ সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত বাংলাদেশে আসবেন। তিনিও কক্সবাজারে যাবেন। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে এনটিএফের বৈঠক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রধান অগ্রাধিকার। এ ছাড়া ভাসানচরে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা গেছেন। সেখানে জাতিসংঘ এখনও পুরোপুরি যোগ দেয়নি। বিশেষ করে ভাসানচরে খাদ্যের জোগান বাংলাদেশই দিয়ে আসছিল। তবে বৈঠকে বাংলাদেশ আশ্বাস পেয়েছে যে, বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সেখানে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। ফলে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের খাদ্যের সংকট হবে না। রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে জাতিসংঘের নেওয়া কার্যক্রমগুলো বৈঠকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘ রাখাইনে কী করছে, সে সম্পর্কে বাংলাদেশকে জানিয়েছে। রাখাইনে বিভিন্ন গ্রামে জাতিসংঘ কার্যক্রম চালাচ্ছে।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, এরই মধ্যে রাখাইনের ৬৩টি গ্রামে জাতিসংঘ তাদের কার্যক্রম বিস্তার করেছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে যে চুক্তি রয়েছে, তার আলোকে এ কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিকভাবে রাখাইনের গ্রামগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে জাতিসংঘ।
মিয়ানমারের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা ও মানদণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সহায়ক পরিবেশ তৈরির প্রধান শর্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা রাখাইনে যেন নিরাপদ বোধ করে। সেই সঙ্গে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টিও রয়েছে। এ ছাড়া খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিতের বিষয়টিকে মানদণ্ড ধরে কাজ করা হচ্ছে।
চলতি বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। মিয়ানমারের কাছ থেকে তালিকা আসবে। তাদের একটি কমিটি রয়েছে। তাদের বাংলাদেশ সফর করার কথা রয়েছে। রাখাইনে যেসব অবকাঠামো বানানো হয়েছে, সেগুলো গিয়ে দেখার বিষয় রয়েছে। সহায়ক পরিবেশ কতখানি হয়েছে, তা সরাসরি পরিদর্শন করে জানতে হবে।
প্রত্যাবাসন না হওয়ায় বাংলাদেশ হতাশ কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের চেষ্টা করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের জন্য এটি বোঝা। তা ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি তরুণ দল রয়েছে। তারা হতাশ হয়ে পড়লে অনেক ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। আমরা আশাবাদী, এ বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারব।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের গ্রেড-৯ পর্যন্ত মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমে শিক্ষার বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কক্সবাজার ও ভাসানচরে জাতিসংঘ এ কার্যক্রম বাড়াবে। এ ছাড়া বৈঠকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে দুটি নীতিমালা গ্রহণ করার কথা জানানো হয়। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার প্রশিক্ষণ পাবে। রোহিঙ্গারা যখন নিজ দেশে ফেরত যাবে, তখন জীবিকার জন্য এ দক্ষতা ব্যবহার করতে পারবে।
জ্বালানিতে কৃচ্ছ্রতা: পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সরকার সারাদেশে একটি নীতিমালা নিয়েছে জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়ে। এ নীতিমালার আলোকে রোহিঙ্গাদের জন্য ডিজেল ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা সাধনের বিষয়টি বৈঠকে জানানো হয়েছে। ভাসানচরে ডিজেল জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়। সেখানে সৌরবিদ্যুৎ নিশ্চিতে উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
পাঠকের মতামত