কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালটিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি চলছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ছাড়া অন্যান্য ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসক দেখা যায়নি। ফলে হাসপাতালে ভর্তিকৃত প্রায় আট শ রোগী পড়েছেন বিপাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে আব্দুল করিম নামে এক সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলেও সেবা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দা বসে আছেন। কবে মিলবে তার চিকিৎসা সেবা সেটি জানেন না তিনি। সদর হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করলেও বেশিরভাগ চিকিৎসকেরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন এবং প্রাইভেটে রোগী দেখছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মারধরের শিকার হন ডা. সজীব কাজী নামের এক চিকিৎসক। হামলার শিকার সজীব হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও সিসিইউতে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার পর সদর হাসপাতালে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক দেন চিকিৎসকসহ নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে বুধবার বেলা ১২টার পর প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক বৈঠকের প্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে জরুরি বিভাগের সেবা চালুর কথা জানান হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো।
এদিকে চিকিৎসক সজীব কাজীকে মারধরের চিত্র হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। সেখান দেখা যায়, মারা যাওয়া রোগীর স্বজন ও দূবৃত্তরা তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে মারতে মারতে চারতলা থেকে নিচে নামায়, এরপর সেখানেও মারধর করে। এসময় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে অন্য চিকিৎসকেরা এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে।
এরপরই হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবিতে জরুরি বিভাগসহ কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে চিকিৎসকেরা। পরে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করে এবং বুধবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করে।
এদিকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি পালন করায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জনসাধারণ। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ডেঙ্গুসহ নানা রোগের প্রায় আট শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পৌর এলাকার সাজ্জাদ হোসেন নামে এক রোগীর স্বজন জানান, চিকিৎসা বন্ধ থাকায় তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। নার্সরা কিছুটা সেবা দিলেও চিকিৎসক না আসায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।
আন্দোলনরত মেডিকেল অফিসাররা জানান, হাসপাতালে তাঁদের কোনো নিরাপত্তা নেই। যেভাবে তাদের সহকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে, তাতে তাঁর মৃত্যু হতে পারত। তাই যতক্ষণ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হবে ততক্ষণ তারা কর্মবিরতি করবেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, ‘মারা যাওয়া রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল ছিল। রোগীর এমন পরিস্থিতিতে তাকে কার্যকর সেবা দেওয়ার জন্য স্বজনদের দরকার হয়। কিন্তু ওই সময় স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও চিকিৎসক সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, যার কোনো ঘাটতি ছিল না। তারপরও চিকিৎসকের ওপর হামলা করে মৃতের স্বজনেরা।’
হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রাখার কথা জানান হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশিকুর রহমান।