ডেস্ক রিপোর্ট ::
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে থাকায় চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে মিয়ানমার। এজন্য সম্প্রতি একটি সীমান্ত অর্থনৈতিক করিডোর চালুর ব্যাপারে চুক্তিও করেছে দেশ দুটি। এতে চীনের বহুল প্রত্যাশিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-বিআরআই পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও সুবিধা হয়েছে। এই অবস্থায় বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও চীনকে পাশে পাওয়ার আশা করছে মিয়ানমার।
১৭০০ কিলোমিটারের এই করিডোর ভারত মহাসাগরে চীনের আরেকটি সহজ প্রবেশাধিকার দেবে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের গাওয়াদার বন্দরের মাধ্যমে আরব সাগরের প্রবেশাধিকার পেয়েছি দেশটি।
চীনের ওয়েস্ট নরমাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক লং জিংচুম ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু’কে বলেন, চায়না-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোর-সিএমইসি স্থলবেষ্টিত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বড় নিয়ামক হতে পারে। এর মাধ্যমে চীনের ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশসহ এলাকাটির সঙ্গে ভারত মহাসাগরের যোগাযোগ তৈরি হবে।
সিএমইসি মালাক্কা প্রণালীর ওপরও চীনের বাণিজ্য ও জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করবে। সরু প্রণালীটি প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। প্রণালীটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে চীনা পরিকল্পনাকারীরা বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ ইতোমধ্যে দেশটির সঙ্গে তারা বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে দেশটি চীনের প্রধান অর্থনৈতিক যোগাযোগ মাধ্যমটির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
সিএমইসি প্রকল্পটি চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে মধ্য মিয়ানমারের মানদালায় পর্যন্ত চলবে। সেখান থেকে বঙ্গোপসাগরের পাড়ে কিয়াউকপিও অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে তা ইয়াঙ্গুনের দিকে মোড় নেবে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস’র খবরে বলা হয়, এই করিডোর মিয়ানমারের তিনটি অর্থনৈতিক কেন্দ্রের সঙ্গে ইউনানকে যুক্ত করবে। এই অঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক সমন্বয়ের লক্ষ্যেই এটা করা হচ্ছে।
গত আগস্ট মাসে চীনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্সিয়াল ব্যাংক-আইসিবিসি ইয়াঙ্গুনে নতুন শাখা উদ্বোধন করেছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমেই সিএমইসি প্রকল্পের অর্থায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ঝিনহুয়া।
বিশ্লেষকদের মতে, মানবাধিকার সংগঠন ও পশ্চিমা সরকারগুলোর পক্ষ থেকে মিয়ারমারের ওপর চাপ থাকাসহ তিনটি কারণে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাচ্ছে দেশটি। ইউনান অ্যাকাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্স’র অধ্যাপক ঝু ঝিনমিং’কে উদ্ধৃত করে গ্লোবাল টাইমস’র খবরে বলা হয়, ‘অভ্যন্তরীণভাবে বিনিয়োগের অভাবে মিয়ানমারের অর্থনীতি খুবই ধীরগতিতে উন্নতি করছে। আর বৈশ্বিকভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার হুমকিও আছে দেশটির বিরুদ্ধে। তাই মিয়ানমারের জন্য এখন যেকোনও সময়ের চেয়ে চীনকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
তবে চীনের এই বিশাল প্রকল্পটিতে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। কারণ প্রকল্পের রুটগুলো মিয়ানমারের বিদ্রোহী অধ্যুষিত শান ও কাচিন প্রদেশের মধ্য দিয়ে গেছে। এ কারণেই গত জুন মাসে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেনঘি’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সূত্র: দ্য হিন্দু।