রোববার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের প্রায় পুরোটাই চুরি হয় দাবি করে এজন্য জনপ্রতিনিধি-আমলা উভয়কে দায়ী করেন ইনু। তার ওই বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাতে কেউ দুঃখ পেলে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি পাঠান মন্ত্রী।
পরে মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিষয়টি উঠলে ওই বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন ইনু। বিষয়টি সংসদে গড়ালে সহকর্মীদের দাবির মুখে ক্ষমা চান তিনি।
এদিন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী মতবিনিময় সভায় জঙ্গি নির্মূলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমি জানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিহ্নিত শিবির রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার শিক্ষকের ভেতরে অনেক শিক্ষক এক্কেবারে জামাতের রুকন। কই তাদেরকে তো ছাঁটাই করতে পারছেন না?
“আমি প্রকাশ্যেই বলি এসব কথা, এজন্য লোকে আমারে পছন্দ করে না। সবাই বলে আপনি গরম লোক, কিন্তু আমি আসলে ঠাণ্ডা মানুষ। আমি চোরকে চোর বলি, আমার অপরাধ এটা, রাজাকারকে রাজাকার বলি আর জঙ্গিকে জঙ্গি বলি।”
জাসদ সভাপতির এ বক্তব্যের পর সভাস্থলে মুহুর্মুহু করতালি শুরু হয়।
বক্তব্যে নিজের জীবন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, “আমি জানি, আমার পেছনে একটি বুলেট ঘুরতেছে। কিন্তু কিছু করার নাই, আরবিতে একটা প্রবাদ আছে- ‘যা হওয়ার তাই হবে’। এই পৃথিবীতে ৭০ বছর বাঁচলাম আর কতো! ”
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে ইদানিং খুন করে পার পাওয়া যায় না। এজন্য আমি খুব খুশি। ৪০ বছর পরেও বিচার হয়। তাইলে আমাকে যদি কেউ হত্যা করে সেই খুনি বাংলার মাটিতে পার পাবে না। শান্তিতে কবরে থাকতে পারব। আমার সন্তানকে বলেছি- ভয় পেও না। জীবনকে যারা ভালোবাসে তারা মৃত্যুকে ভয় পায় না।”
জঙ্গিবাদকে ইসলামবিরোধী ও মনগড়া মতবাদ আখ্যা দিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, কোরআনে, হযরত মোহাম্মদ (স.) বিদায় হজের ভাষণে এ ধরনের সন্ত্রাসকে ‘কুফরি’ বলা হয়েছে।
“বিদায় হজের ভাষণে নবী মোহাম্মদ (স.) বলে গেছেন- আমার পরে তোমরা একভাই আরেক ভাইকে হত্যা করার মতা কুফরি কাজে লিপ্ত হবে না। সুতরাং জঙ্গিবাদ একটি মনগড়া ধারণা, ভ্রান্ত ব্যবস্থা।”
গুলশান ও শোলাকিয়ায় সাম্প্রতিক হামলায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে আসার পর ঢাকার নামি এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে।
এর মধ্যেই বুধবার সেখানে জঙ্গিবাদবিরোধী মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা’।
জঙ্গি হামলার জন্য কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ না করার পরামর্শ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “নর্থ-সাউথের ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২/৪ জন ছেলের জঙ্গি হয়ে যাওয়াটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। এটা আমাদের সারাদেশের সমস্যার একটি চিত্র।
“শুধু নর্থ-সাউথ কিংবা মাদ্রাসার দোহাই দিচ্ছেন কেন? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগেই তো জামাত-শিবিরের রগকাটা বাহিনীর জন্ম দিয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তো রগকাটা বাহিনীরা হলও দখল করেছিল।
“আমি প্রশাসনকে বলেছি- নজর যদি দিতে হয়, তাহলে সব সরকারি, বেসরকারি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় নজর দিন; যাতে একটি ছেলেও জঙ্গিবাদের ভ্রান্ত ধারণায় না জড়ায়।”