আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের মেয়েদের কাছে বেশি শুনি, আমি অমুক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মেনটেইন (সম্পর্ক রাখা) করি। ইডেন গার্লস কলেজের ছাত্রীদের কাছে এটা বেশি শুনি। এটা খুব সাহসের সঙ্গে উচ্চারণ করে। আমি অমুক ভাইকে মেনটেইন করি।’
আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত দপ্তর উপ-কমিটির প্রস্তুতি সভায় এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য করে কাদের বলেন, ‘তোমরা মেনটেইন করবা আওয়ামী লীগকে, শেখ হাসিনাকে। আর কাকে মেনটেইন করবা? আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু। তার আদর্শ। শেখ হাসিনার কর্মী আমরা। এর বাইরে কিসের মেনটেইন। এটা কি ঘর-বাড়ি মেইনটেন হচ্ছে নাকি? আশ্চর্য ব্যাপার। এসব বদ অভ্যাসগুলো...স্লোগানও দেয়। এসব বিষয়গুলো সুশৃঙ্খল করতে হবে। দপ্তরেরও দায়িত্ব আছে।’
ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা নাম-পরিচয় উল্লেখ করে সালাম দেয়, যা অতীতে দেখেননি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নাম বলতেই হবে! আমি এ জন্য নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটি। ডানে কে? বায়ে কে? এটা আর দেখি না। সালাম দিচ্ছে নাম ধরে ধরে। এ কি অনুশীলন। হলের নাম, অমুক ভাইয়ের নাম।’
ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের ধানমন্ডিতে আসার সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ ছাত্রসংগঠন। এদের সকাল নেই, দুপুর নেই, বিকেল নেই এসে এখানে লাইন ধরে। আমি আসলে রুমে ঢুকতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। এটা একটা লড়াই। এটা এই বয়সে সম্ভব না। তারপরও কষ্ট করে আসি।’
বরগুনা সম্মেলন শেষে ঢাকায় আসার পরে আবারও আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসার কথা উল্লেখ করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘তারপরও বয়সটা বুঝতে হবে। একদিন নেত্রী টের পেয়েছেন। বকাবকি করায় আমি ফিরে গেছি। উনি বলেছেন বাসায় যাও। আর না হয়, প্রত্যেকদিন আমি এসেছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে ব্যানার, ফেস্টুন ঝোলানো নিয়ে তিনি বলেন, ‘কোথায় থেকে কে-চিনি না, জানি না, রাস্তার টোকাই, সেও এসে নেতা হয়ে যায়। নিজের ছবি, ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড লাগাচ্ছে। এরপরে তো আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে আকাশ দেখা যাবে না। সম্মেলন যত ঘনিয়ে আসছে, আকাশ দেখা যাবে না মনে হয়। এ রকম শুরু হয়ে গেছে। এটা একটু নিয়ন্ত্রণ করা দরকার মিস্টার বড়ুয়া (দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া)।’
জাতীয় সম্মেলন তাৎপর্যময় বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ সম্মেলন পরবর্তী ডিসেম্বরের (২০২৩) শেষে অথবা জানুয়ারির (২০২৪) প্রথমে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অভিমুখে আমাদের নিয়ে যাবে।’
দপ্তরের কাজ খুব স্পর্শকাতর উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের একটা রুম বরাদ্দ আছে। সেটা যেন যথাযথভাবে সংরক্ষিত থাকে। সবার দায়িত্ব আছে। চিরদিনই আমরা কেউ নিজের অবস্থানে থাকব না। দলের জন্য শৃঙ্খলা তৈরি করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। পাশে দর্শনার্থীদের বড় রুম রয়েছে। সেখানে তারা বসুক। আমাদের কাউকে দরকার হলে, ওখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। অথবা পাশে প্রচারের রুম আছে সেখানে বসেও কথা বলব।’
তাঁকে দেখলে দর্শনার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের রুম থেকে বের হয়ে যান বলে জানান ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘এখন আমি না থাকলে ভরে যায়। এটাতো ঠিক না। আমাকে দেখলে পালিয়ে যেতে হবে, দৌড়ে ছুটে যেতে হবে—এমন অবস্থাতো আর চিরদিন থাকবে না। একসময় আসবে, আমি এই পদে না থাকলে সালাম দিতেও কষ্ট হবে। কে আবার দেখছে, মুখটা আরেকদিকে ফিরিয়ে নিবে। সেটাতো দেখছি। জলিল ভাইয়ের সুদিনও দেখেছি, দুর্দিনও দেখেছি।’
সম্মেলনে ৮ হাজার কাউন্সিলর এবং ১৬ হাজার ডেলিগেট থাকবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এটা এর চেয়ে বেশি হওয়া যাবে না। তবে জেলাওয়ারি আমন্ত্রিত অতিথির দাওয়াতপত্র দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।