ছেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ যেন এক মহা আনন্দের খবর বাবার কাছে। শুধু কি কষ্টই চোখে পানি নিয়ে আসে, না মাঝে মাঝে আনন্দের খবরেও চোখ দুটো ভিজে যায়। তেমনি এক খবরে চোখ ভেজালেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল সামসুল।
আর তার চোখ ভেজার পুরো কাহিনীটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে বর্ণনা করেছেন সিলেট রেঞ্চের পুলিশের সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদ। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সামসুল ও তার পরিবারের আনন্দের বিষয়টি তুলে ধরেন এই কর্মকর্তা।
পাঠকের জন্য ফাহাদ মোহাম্মদের (Fahad Mohammad) ফেসবুক ওয়াল থেকে লেখাটি কপি করে হুবহু প্রকাশ করা হলো।
“স্যার আমার ছেলে মাসুম মেডিকেলে চান্স পাইছে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে পোস্টিং (আনন্দে সে ভর্তির সুযোগকে পোস্টিং বলেছে) হইছে। স্যার আমার ছত্রিশ বছরের চাকরি জীবনের সফলতা। এই ছেলে-মেয়েদের মানুষ করার জন্য জীবনের সব সুখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছি। স্যার, ছেলে যখন পড়তে বসে তখন আপনার ভাবি আর আমি পাশে বসে থাকি। ছেলের মা ছেলেকে বিভিন্ন প্রকার ফল, চা খেতে দেয় এই সময়। ছেলে যদি ২টা পর্যন্ত পড়ালেখা করে আমরাও বসে থাকি। গতবার যখন মেডিকেলে চান্স পায়নি তখন ছেলে কান্না থামাতে গিয়ে আমিও অনেক কষ্টে চোখের পানি ধরে রেখে একা একা কেঁদেছি।
জানেন স্যার এই ছেলে যখন জন্ম হয় তখন ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেছিলো ‘এই বাচ্ছার আশা ছেড়ে দিন।’ স্যার আমি আশা ছাড়িনি। এক ডাক্তার থেকে অন্য ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। তখন এক ডাক্তার মায়ের দুধের পাশাপাশি ইনফেন্ট (গুঁড়ো দুধ) খেতে বলেছিল। স্যার সেই ছেলে আজ মেডিকেলে চান্স পাইছে। এই আনন্দ কোথায় রাখিব বলেন। আমার ছেলে অনেক মেধাবী স্যার। গতবার যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস না হইত তাহলে আমার ছেলে চান্স পাইত। মেডিকেলে ভর্তি হতে না পারলেও সে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হইছিলো। সে আরো ভালো সাবজেক্ট পাইতে পারতো কিন্তু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেবে বলে অন্য সাবজেক্টে ভর্তি হয় নি।
স্যার আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। এখন যাই স্যার সবাইকে মিষ্টি খাইতে হবে।”
চশমাটা উপরে তুলে রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সামসুল বাসার দিকে রওনা দিলেন। আমার কাছে ক্ষমতা থাকলে সামসুলকে দুদিনের ছুটি দিতাম। আনন্দটা উপভোগ করার সুযোগ তার প্রাপ্য।
উল্লেখ্য, সামসুলের বাকি দুই মেয়েও উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ভালো মানের চাকরি এবং তাদের স্বামীও উচ্চশিক্ষিত।
পুলিশ পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা সন্দিহান সামসুল তাদের জন্য একটা উদাহরণ মাত্র। আরো শত শত কনস্টেবল সামসুলের ছেলে-মেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। বরং আপনি এখনো কিছুই করতে পারছেন না, আপনার সন্তানের বেশিরভাগ গেছে রসাতলে। অন্যের সমালোচনা করার আগে আয়নায় নিজের চরিত্র এবং অবস্থানটা দেখেই মুখ খুলুন।