ডেস্ক রিপোর্ট ::
দেশের এনজিও খাত এখন জঙ্গি অর্থায়নে সম্পৃক্ততার সন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ। তাই তাদের সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনজিও ব্যুরো। বলা হয়েছে, কোনো এনজিওর বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের প্রমাণ মিললে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে আরো সতর্ক হতে এনজিও কর্মকাণ্ডে অর্থ যোগানদাতাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠান। কোনো এনজিওর কোনো সদস্য জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেও তার জন্য ওই সংস্থাকেই দায়ী করবে এনজিও ব্যুরো।
এনজিও ব্যুরোর যুগ্ম পরিচালক কে. এম. আব্দুস সালাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে এনজিওদের সম্পৃক্ততা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের সংবাদ এনজিও খাতের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এ অবস্থায় জঙ্গিবাদ ও জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে আরো সতর্ক ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
এতে আরো বলা হয়, এনজিও ব্যুরো মানিলন্ডারিং ও জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জঙ্গি অর্থায়ন সংক্রান্ত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিযাল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। এছাড়া এনজিও ব্যুরো জঙ্গি অর্থায়ন রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গেও কাজ করছে।
চিঠিতে বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পুনরায় নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, কোনো এনজিও বা এনজিওতে কর্মরত কোনো ব্যক্তির জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবহিত করার অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি, নির্বাহী কমিটি ও কর্মরত প্রত্যেক কর্মচারীর তথ্য যথাযথভাবে যাচাই করার কথা বলা হয়েছে। সংস্থার কোনো সদস্য বা কর্মচারীর জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংস্থাকে দায়ী করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনজিও আ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যুরো প্রতিষ্ঠার পর থেকে জুলাই পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ৬১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ এই অর্থের যথার্থ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। এনজিও খাতে আসা বৈদেশিক সহায়তার সঠিক ব্যবহার নিয়ে সন্দিহান খোদ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশ্বের ধনী দেশগুলো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে এই অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এই খাতের বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের নির্বাহী পরিচালক (আইএনএম) অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী বলেন, প্রতি বছরই বিদেশ থেকে এনজিওগুলোর অনুকূলে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে আসছে। কিন্তু অনেক এনজিওরই কার্যক্রমের কোনো স্বচ্ছতা নেই। এনজিওর খরচের বিষয়ে কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও সরকারের কাছে নেই। আবার অনেক এনজিও নীতিমালা ভঙ্গ করে জড়িয়ে পড়ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে। এনজিওগুলোর নামে বিদেশ বিপুল পরিমাণ টাকা এলেও যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাবে এ টাকা কোথায় যাচ্ছে তা জানা যাচ্ছে না।
এনজিও ব্যুরোর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক এনজিওর বিরূদ্ধে জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। এজন্য আমরা বেশ কিছু এনজিওকে নজরদারিতে রেখেছি। তাদের সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা করছি। কোন দেশ এসব সংস্থার অর্থায়ন করছে, বিদেশি অনুদানের অর্থ তারা কোনে খাতে ব্যয় করছে, হিসাবে গরমিল আছে কিনা এবং কর্মকর্তাদের গতিবিধি সবকিছু নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অনিয়ম ও জঙ্গি অর্থায়নের প্রমাণ মিললেই তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।’
এনজিও ব্যুরোর তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদেশি অনুদানে পরিচালিত ২,৪৯৮টি এনজিও রয়েছে।
বিবার্তা