বাংলামেইল :
টেকনাফের রোহিঙ্গা বস্তিতে জঙ্গি ধরতে গেলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের বাধা দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও তার সহযোগীরা। এমনটাই অভিযোগ বিজিবি কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের। রোহিঙ্গা জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হিসেবে সরকারদলীয় এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অবশ্য আগে থেকেই অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বদি।
অবৈধ রোহিঙ্গা জঙ্গি বস্তিতে বিজিবির অভিযানে কেন বাধা দেয়া হয়েছে এবং জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) নেতাদের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, তা জানতে এমপি আবদুর রহমান বদির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি তখন বলেন, ‘জঙ্গি ধরার খবর শুনে আমি ইনানী বিচ থেকে টেকনাফে ছুটে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে বিজিবিকে বললাম যাদেরকে ধরলেন এখান থেকে দ্রুত নিয়ে যান। আমি নিজেই তাদেরকে তখন গাড়িতে তুলে দেই।’
আজ শনিবার দুপুর ২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুরে অবস্থতি অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে অভিযান চালায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। সেই অভিযানে বাধা দেন আবদুর রহমান বদি ও তার সহযোগীরা। তবে বিজিবির অনড় অবস্থানে একপর্যায়ে পালিয়ে যান এমপি বদিসহ চার জনপ্রতিনিধি। অন্যরা হলেন- টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন।
পরে সেখান থেকে জঙ্গি সংগঠন আরএসও’র আলোচিত নেতা হাফেজ ছালাউল ইসলাম, মৌলভী ছৈয়দ করিম, মওলানা মো. ইব্রাহিম এবং একজন সৌদি নাগরিককে আটক করে বিজিবি। তাদের ক্যাম্পে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বিজিবি টেকনাফের ২নং ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, ‘অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে বাধা দেন স্থানীয় এমপি আবদুর রহমান বদিসহ টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন এবং বাহারছড়ার চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন। তবে একপর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই চার জনপ্রতিনিধি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।’ টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শফিউল আলমও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এমপি বদিকে এ বিষয়ে বলা হলে তিনি উল্টো ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলছে আমি বাধা দিয়েছি, তাকে জিজ্ঞাসা করেন- ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন কিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে জঙ্গিদের ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি কি সেখানে যাবো কোনো জঙ্গিকে ছাড়িয়ে আনতে? আপনিই বলেন?’
তিনি আরো বলেন, ‘অভিযানের সময় এলাকার লোকজন জড়ো হয় সেখানে। আমি তাদেরকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেছি। কাউকে আমার বাধা দেয়ার প্রশ্নই আসে না।’
এদিকে স্থানীয়রা জানান, আবদুর রহমান বদিরাও জাতিতে ছিলেন রোহিঙ্গা। তার বাবা এজহার কম্পানি স্বাধীনতার আগেই মিয়ানমারের আরাকান থেকে কক্সবাজারে এসে বসবাস শুরু করেন। আর সে কারণেই রোহিঙ্গাদের প্রতি দুর্বল বদি। তাই পরিকল্পনা করে তিনি রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম তুলিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হতে সহায়তা করছেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে বদিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকা কি আমি করি? সেটা তো করে জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারমান, স্কুলের মাস্টাররা। এলাকার এক স্কুলমাস্টার ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে দেখে আমি তাকে পিটিয়েওছিলাম। এটা কি আমার দোষ হয়েছে? এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে নিউজও হয়েছে।’
সংবাদ বাংলামেইল২৪ডটকম থেকে সংগৃহিত
পাঠকের মতামত