আম্মু তো আসলো না। নানি আমার জন্মদিনে তুমি আম্মুর গল্প শোনাও। সেই ছেলেবেলার আম্মুর গল্প’। মা হারা নাতনি তাবাসসুম টাপুরের কথা শুনে গলা শুকিয়ে আসে নানি শাহিদা মোশাররফের।
এসপি বাবুল আক্তারের মা হারা দুই সন্তানের মধ্যে তাবাসসুম টাপুরের আজ জন্মদিন। পাঁচ বছরে পা রেখেছে টাপুর। দিনটি উপলক্ষে বিশেষ কোনো আয়োজন করা হয়নি। আগামী শুক্রবার ঘটা করে কেক কাটা হবে।
শত কাজের ব্যস্ততায়ও মেয়ে হারানোর কষ্ট ভুলে থাকতে পারেননি মা শাহিদা। তবে মা মিতু খুনের আদ্যোপান্ত আজও জানা হয়নি টাপুরের।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁও মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ায় সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের শ্বশুরের বাসায় গেলে জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন শাশুড়ি শাহিদা মোশাররফ।
শাহিদা মোশাররফ বলছিলেন, ‘আচ্ছা বাবা তুমিই বলো, ওর মায়ের গল্প আমি কি শোনাবো! কি গল্প আছে যা এখন বলা যায়। নিজেই নিজের থেকে পালিয়ে বেড়াই। চেষ্টা করেও কি আর মেয়ে হারানোর যন্ত্রণা ভুলে থাকা যায়! অবুঝ শিশু দুটোর কথার কোনো জবাব দিতে পারি না। জানি না আদৌ পারবো কিনা!’
শাহিদা মোশাররফ বলেন, টাপুর আজ পাঁচ বছরে পা দিয়েছে। সকালে খাওয়ার সময় টাপুর বলছিল নানি, ‘আজ তো আমার জন্মদিন। আম্মু কি আজও আসবে না? আমার কাছে তো আম্মুর মোবাইল নাম্বার নেই। তুমি কল করো। আসতে বলো।’
কাকে কাকে দাওয়াত করতে হবে নিজে থেকেই বলছে টাপুর। আম্মু কেন এতো দিনেও আসে না। আম্মুকে ছাড়া জন্মদিনের অনুষ্ঠান হয় নাকি?
শাহিদা মোশাররফ বলেন, মা মাহবুবা আক্তার মিতু খুন হয়েছেন তা আজও জানে না মেয়ে টাপুর। ঘটনাপ্রবাহ, নানু বাড়িতে মানুষের আনাগোনা, পুলিশি টহল আর দীর্ঘ সময় মায়ের অনুপস্থিতিই নাড়া দিয়েছে হয়তো মা আর ফিরবে না।
মাকে ছাড়া ঈদ কেটেছে। বাবার সঙ্গে ঢাকার খিলগাঁওয়ে নানু মোশাররফ হোসেনের বাসায় গত ঈদ উদযাপন করেছে মাহির ও মেয়ে তাবাসসুম টাপুর। কিন্তু ওর(টাপুর) ধারণা জন্মদিনে অন্তত মা দূরে থাকতে পারবে না।
বাসায় নেই বাবুল আক্তার। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বিকেলে ঘুরতে বের হয়েছেন। মাহিরের গলা ব্যথা। ঠাণ্ডা লাগিয়েছে বাচ্চাটা। ফেরার পথে মাহিরকে ডাক্তারও দেখাবেন বাবুল। অধিকাংশ সময় বাবুল আক্তার বাসায় থাকেন। সময় দেন মাহির-টাপুরকে।
কেঁদে কেঁদে শাহিদা মোশাররফ বলছিলেন, ‘জীবন থেকে গল্প হারিয়ে গেছে। সাজানো বাগান ভেঙে গেছে। ওর দোষ(মাহবুবা আক্তার মিতু) খুঁজে পাইনি আজও। বিচারের আশা ছেড়ে দিছি। রিজিকের ভরসাও তার কাছেই। তিনি(আল্লাহ) যদি থাকেন তবে বিচার একদিন হবেই হবে। ওরাও(মাহির-টাপুর) মা হারানোর কারণ জানতে পারবে।’