নিউজ ডেস্ক::
দেশের সাংবাদিকদের ৯২ শতাংশ মনে করেন সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা নেই। ৫৭ শতাংশ কাজ করেন অতিরিক্ত চাপ নিয়ে। ৩১ শতাংশ মনে করে তাঁরা যে বেতনভাতা পান তা দিয়ে জীবন চালানো বেশ কঠিন। একই সংখ্যক সাংবাদিকের ধারণা, যোগ্যতা অনুযায়ী তাঁদের বেতন ভাতা অনেক কম।
দেশের পেশাদার সাংবাদিকরা চাকরি নিয়ে কতটুকু সন্তুষ্ট তা নিয়ে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী। গবেষণা প্রতিবেদনে তিনি এসব তথ্য জানান। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) অর্থায়নে তিনি এ গবেষণা করেন।
গবেষণায় ঢাকা শহরের ১৫টি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র নিয়ে কাজ করেন; যার ৯টি বাংলা ও ৬টি ইংরেজি। এছাড়া ২১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, দুটি বেসরকারি এফ এম রেডিও চ্যানেল, ৪টি অনলাইন সংবাদ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ মোট ৪২টি সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে গবেষণা করেন সাইফুল আলম। তথ্য সংগ্রহের জন্য ৩৩৪ জন সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ সাংবাদিক স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী।
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গবেষণার জন্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন সাইফুল আলম চৌধুরী।
সাংবাদিকরা চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা এর বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের বিষয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ৩৩৪ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৩০৭ জন অর্থাৎ ৯২ শতাংশ মনে করেন সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা নেই। তাঁরা জানান, যেকোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে, আর চাকরি চলে গেলে অভিযোগ করার মতো সুযোগ নেই। টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের মধ্যে এ নেতিবাচক ধারণা সবচেয়ে বেশি।
গবেষণায় দেখা যায়, ২৭ শতাংশ সাংবাদিক জানিয়েছেন, তাঁরা চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট, ২৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ অসন্তুষ্ট, ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ কিছুটা সন্তুষ্ট। ৭২ শতাংশের বেশি সাংবাদিক অসন্তুষ্ট। তবে বিভিন্নভাবে তাদের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি মাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়।
কর্মপরিবেশ নিয়ে সন্তোষজনক মত দেন ৩৬ শতাংশ। তা উপযোগী বলেছেন ২৬ শতাংশ সাংবাদিক। অসন্তোষ বলে মত দিয়েছেন ১৩ শতাংশ সাংবাদিক। গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের কর্মচাপ সম্পর্কে প্রায় ৫৭ শতাংশ মনে করেন তাঁরা অতিরিক্ত কাজ করেন এবং এই প্রবণতা দেখা যায় বাংলা সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলে। আবার ৬৫ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন তাঁদের সুনির্দিষ্ট কর্মচাপ আছে।
৫৪ শতাংশ সাংবাদিক নিজের ইচ্ছে কিংবা পছন্দে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর সাংবাদিকতাকে একটি মর্যাদাকর পেশা ভেবে যোগদান করেন ৩২ শতাংশ।
৭৩ শতাংশ জানিয়েছেন পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সাংবাদিক নিয়োগ হয়। ৩১ ভাগ সাংবাদিক মনে করেন যে, তাঁরা যে বেতন পান তা দিয়ে ব্যয় নির্বাহ কঠিন এবং সমসংখ্যক মনে করেন তাদের যোগ্যতার তুলনায় বেতন কম। ৫৭ ভাগ সাংবাদিক ওয়েজবোর্ড অনুসরণ করার কথা বলেন।
কর্মস্থলে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সন্তুষ্টি বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১৮ ভাগ কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আর ৭ শতাংশ নারী সাংবাদিক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
তবে গবেষক মনে করেন, ভবিষ্যতে আরো বেশি পরিমাণ সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্ত করে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের ঢাকার বাইরের আঞ্চলিক সংবাদ কর্মীদের নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করলে গবেষণার ফলাফল অন্যরকম হতে পারে।
গবেষণার ব্যাপারে সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘সব ধরনের গণমাধ্যমের জন্য সরকারিভাবে একটি সর্বজনীন ও সময়োপযোগী চাকরি বিধি প্রণয়ন, সময় উপযোগী ওয়েজবোর্ড চালু করা প্রয়োজন।’
সাইফুল আলম চৌধুরী জানান, সব রাজনৈতিক বিষয়ের উর্ধ্বে গিয়ে সাংবাদিকদের সুবিধা- অসুবিধা ও স্বার্থ দেখার মতো ইউনিয়ন গঠন করা, আর বেতন কাঠামো অনুসরণে ব্যর্থ হলে গণমাধ্যমের ডিক্লারেশন ও লাইসেন্স বাতিলের মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা প্রয়োজন।
গবেষক এনটিভি অনলাইনকে আরো বলেন, 'সাংবদিকদের বেতন যেখানে ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে না সেখানে গণমাধ্যমের সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়ছে, আদৌ এদের প্রয়োজন আছে কিনা? সুতরাং গণমাধ্যমের ভবিষ্যতের জন্য সামগ্রিক পলিসির মধ্যে এনে কড়াকড়ি আরোপ করা প্রয়োজন।' আর যাচ্ছেতাইভাবে নিয়োগ প্রতিরোধে সাংবাদিকদের জন্য প্রেস কাউন্সিল কিংবা পিআইবির মাধ্যমে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যোগ্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে সনদের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি।