মক্কাবাসী সেখানকার আকাশে লেজার লাইটের বর্ণিল আলোতে প্রতিফলিত হতে দেখল পবিত্র কুরআনের প্রথম আয়াত। নগরীর চার কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘জাবালে নূরে’র ওপর আয়াতটি প্রতিফলিত হয়। এই পাহাড়ের ‘হিরা গুহা’তেই রাসূল সা:-এর ওপর সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয় আয়াতটি।
মঙ্গলবার আরব নিউজ এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে মক্কার ইতিহাস কেন্দ্রের পরিচালক ড. ফাওয়াজ দাহাসের সূত্রে জানানো হয়, মুসলিমদের কাছে জাবালে নূরের ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে এবং তা মক্কার গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার অন্যতম। এজন্য এখানে এই প্রদর্শনী।
প্রদর্শিত আয়াতটি হলো- (অর্থ) ‘(হে নবী) আপনি আপনার রবের নামে পড়ুন, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আলাক্ব, আয়াত : ১)
আরবি সংবাদমাধ্যম খালিজ টক জানায়, ঐতিহাসিক পাহাড়টির নাম মূলত ‘জাবালে হিরা’ কিন্তু এটিকে ‘জাবালে নূর’ নামকরণের কারণ হলো- সেখানেই পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং তার নূরে (আলো) আলোকিত হয় গোটা বিশ্ব।
ড. ফাওয়াজ বলেন, মহানবী মোহাম্মদ সা: এই পর্বতে জীবনের শুরুতে একাধারে কয়েক দিন অবস্থান করতেন। সেই সময়ের বহুশ্বরবাদ বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি এখানে অবস্থান করতেন এবং মহান রবের মহত্ত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করতেন। তাই বিশ্বের অন্যান্য শহরগুলোর মধ্যে মক্কার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, শহরটি যেন একটি উন্মুক্ত জাদুঘর। এখানকার প্রতিটি পর্বত, উপত্যকা ও প্রস্তরখণ্ডের রয়েছে স্বতন্ত্র ইতিহাস যার সাথে মিশে আছে মহানবী সা: ও তাঁর সাহাবিদের গল্প।
জাবালে নুরের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল-আজহারি বলেন, জাবালে নূরের ওপর স্থাপিত লেজার লাইটে প্রজ্জ্বলিত পবিত্র কুরআনের প্রথম আয়াতটি দর্শনার্থীদের মধ্যে ভিন্ন ধরনের অনুভূতি তৈরি করেছে। তা দেখে দর্শকদের মধ্যে তৈরি হয় আধ্যাত্মিক আবহ, ভক্তি ও শ্রদ্ধা।
দর্শনার্থীদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করতে ইসলামের ঐতিহাসিক স্থানগুলো আরো আকর্ষণীয় করাই সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০-এর অন্যতম লক্ষ্য।
প্রাক-ইসলামী যুগ থেকে বর্তমান সময় উপস্থাপনের মাধ্যমে মহানবীর ইতিহাসকে দর্শনার্থীদের কাছে পরিচিত করাই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর অন্যতম উদ্দেশ্য। এখানে সাংস্কৃতিক ও পর্যটন স্পট ছাড়াও থাকবে রিভিলেশন গ্যালারি ও হলি কুরআন মিউজিয়াম।
এরই অংশ হিসেবে সাময়া ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে মক্কায় মিউজিয়াম অব রিভেলেশন ও মিউজিয়াম অব মাইগ্রেশন দুটি সাংস্কৃতিক প্রকল্প গড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একইসাথে মক্কার রয়েল কমিশন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ৬৭ হাজার বর্গমিটারের চেয়েও বড় স্থানজুড়ে হিরা সাংস্কৃতিক জেলা প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।
জাবালের নুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-হুসাইনি বলেন, ‘সাংস্কৃতিক প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্থাপনাগুলো সুসংগঠিত হবে। আমরা পুরো প্রকল্পের সমাপ্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। তা আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটাবে।’
সূত্র : আরব নিউজ, খালিজ টক ও অন্যান্য