এম রহমান, সাংবাদিক:
ঢাকা: স্বাধীনতা পুরস্কার। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ এই পদক প্রদান করা হয়ে আসছে।
সেই হিসাবে ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছিলেন। সে সময় পুরস্কারের মেডেল, সম্মাননাপত্র কোনো উত্তরাধিকারীকে না দিয়ে বাংলাদেশ জাদুঘরের একটি কর্নারে যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।২০১৬ সালে এসে বর্তমন আওয়ামী লীগ সরকার জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়।
জিয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের বিষয়ে বর্তমান সরকারের যুক্তি:-
চলতি বছরের জুলাই মাসে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে একটি নথি কমিটিতে পাঠানো হয়। যেখানে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি পদ বা রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণের বিষয়টি হাইকোর্টে রিট পিটিশন আদেশের মাধ্যমে অবৈধ ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া নথিতে স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত সংশোধিত নির্দেশমালার বিষয় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। তাই এই পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রার্থী নির্বাচনকালে দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসাধারণ অবদান রেখেছেন এমন সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেই বিবেচনা করা হয়।
জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হাইকোর্টের রায়। যেখানে রায়ের প্রথমেই বলা হয়, ১৯৭৫-এর নভেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের মার্চ পর্যন্ত সংসদ ছাড়াই বাংলাদেশে সরকার চলেছে। একনায়কতন্ত্র হিসেবে দেশ চালিয়েছে সরকার। যেখানে ছিল না কোনো গণতন্ত্রের ছোঁয়া।
কমিটি সুপ্রিমকোর্টের আপিলেট ডিভিশনের আদেশটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। সেখানে বলা হয়, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তি পাওয়া উচিত। যেন মানুষ সংবিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ভয় পায়।’ যেহেতু রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা আরোহণকে আপিলেট ডিভিশন অবৈধ ঘোষণা করেছেন, এটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আমলে নিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
এছাড়া কমিটি মনে করে, স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত ২০১৬ সাল পর্যন্ত সংশোধিত নির্দেশাবলী ২০০৩ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ পুরস্কার জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হলে আগামী প্রজন্মের কাছে তা ভুল ইতিহাস হিসেবে উপস্থাপিত হবে। একইসঙ্গে একটি ভুল বার্তা যাবে। যে কারণে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
স্বাধীনতা পদক প্রদানের ক্ষেত্রে যে বিষয়ের প্রতি নজর দেয় হয়:-
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিদ্যা, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, পল্লী উন্নয়ন, সমাজসেবা/জনসেবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন,জনপ্রশাসন,গবেষণা ও প্রশিক্ষণ, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য যে কোন ক্ষেত্র। এই বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখেই স্বাধীনতা পুরস্কার দেন সরকার।
বিএনপির দাবি:-
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার করেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানরে অবদান অস্বীকার করছে তারাই মূলত স্বাধীনতা বিরোধী। সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। তবে সরকার তা কখনই পারবে না। কারণ ইতিহাস কখনো মিথ্যে বলে না।
উপরের সকল তথ্য পর্যালোচনা করে দেখে নিজেরাই জেনে নিন স্বাধীনতা পুরস্কার কি, কেন এবং কে পেতে পারেন?। আর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের বিষয়টিও বিবেচনা করতে পারবেন। যাইহোক সরকার জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহার করেছেন।বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই এটাকে খুব ভালো চোখে দেখছে বলে আমার মনে হয় না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সফল রাষ্ট্র নায়ক। তিনি এ ধরনের বিষয়ে মাথা না ঘামালেও পারতেন। তবে এই বিষয়টি পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আমার মনে হয়। যার আঘাত বাংলাদেশের রাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বাঙালী জাতির উপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুত্র :