মাওলানা মুফতী রিদওয়ানুল কাদির .
ঈমানদারদের জন্য জুমার দিনটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
মুসলমানরা জুমার নামাজ আদায়ে আল্লাহর ঘর মসজিদে সমবেত হন।
জুমার আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব।
জুমার নামাজের হুকুম
পবিত্র জুমা দিবসে মুসলমান ধনী-দরিদ্র, উচু-নীচু, ছোট-বড় সকলে একই কাতারে দাঁড়িয়ে জুমার নামাজ আদায় করে। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র জুমার নামাজ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের উপর ফরজ করেছেন।
ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, যে ব্যক্তি অলসতা করে জুমার নামাজ পড়বেনা, সে মারাত্মক কবীরা গোনাহকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আর জুমার নামাজকে অস্বীকারকারী সরাসরিভাবে কাফির এবং ঈমানহারা সাব্যস্ত হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা:
হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিন নামাজের জন্য তোমাদের আহ্বান করা হয় তখন তোমরা বেচাকেনা ত্যাগ করে তাড়াতাড়ি আল্লাহকে স্মরণ করতে উপস্থিত হও।
যখন সালাত বা নামাজ শেষ হয় তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়। (সূরা জুমা: ৯)।
জুমার নামাজের অপরিসীম ফজীলত
জুমার নামাজের ফজীলত সম্পর্কে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতা থাকে, যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করে তার নাম লিখে রাখে।
এর উদাহরণ হল, প্রথম ব্যক্তি একটি উট কোরবানীর সাওয়াব পাবে, এরপর যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে একটি গরু কোরবানীর সাওয়াব পাবে, এর পর যে প্রবেশ করবে যে দুম্বা কোরবানীর সাওয়াব পাবে, এরপর যে প্রবেশ করবে সে মোরগ কোরবানীর সাওয়াব পাবে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
কিন্তু আমাদের চিত্র তার সম্পূর্ণ উল্টা। যেখানে আমাদের সলফে সালেহীনরা সকাল সকাল জুমায় যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন, সেখানে আমরা সকাল সকাল যাবো দূরের কথা, বরং আজান হলেও মসজিদগুলো থাকে একেবারেই ফাঁকা।
বয়ান চলাকালীন সময়েও অনেকেই মসজিদের উঠানে গল্পগুজব করে সময় পার করে। যখন নামাজ আরম্ভ হয়, তখন তড়িঘড়ি করে মসজিদে প্রবেশ করে, আবার নামাজ শেষ হতে না হতেই মসজিদ থেকে বের হতে পাগল হয়ে যাই!
আমাদের কাজকর্ম দেখে মনে হয়, যেন আমরা মসজিদে নই, বরং জেলখানায় ঢুকেছি।
আহ!
জুমার নামাজ না পড়ার শাস্তি :
হাদিসে জুমার নামাজ না পড়ার প্রতি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভীতি প্রদর্শন করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমার নামাজ পড়ে না, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন।’ (তিরমিজি : ৫০২)।
আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রয়োজন ব্যতিরেকে জুমার নামাজ তরক করে তার নাম এমন কিতাবে মোনাফেক হিসেবে লেখা হয়, যার লেখা মুছে ফেলা যায় না এবং তা পরিবর্তিতও হয় না।’ (মেশকাত : ১২৯৭)।
যে ব্যক্তি বিনা কারণে তিন জুমার নামাজে যাওয়ায় অবহেলা করে সে যেন ইসলামকে অবজ্ঞা করল এবং তার হৃদয়ে মরিচা পড়ে যায়। ( মুসনাদে আবু ইয়া’লা)
দু:খের বিষয় বর্তমানে জুমার নামাজে আজানের পরও মসজিদগুলো ফাঁকা থাকে। খুৎবার শেষ পর্যায়ে তড়িঘড়ি করে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করে যা ধর্মীয় দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়।
দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজের অনেক মুসলিম ভাইয়েরা আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এর বাণী শ্রবণের পরেও জুমার নামাজ আদায় করে না বরং সমাজে নানাবিধ অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে।
পবিত্র শুক্রবার জুমা দিবসে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীর জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্য-ন্যায়, ত্যাগ ও সৎকর্মের অনুশীলন এবং দেশের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত কামনা করাটাই হলো একজন সত্যিকার মুমিনের পরিচয়।
মাওলানা মুফতী রিদওয়ানুল কাদির
খতীব, উখিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, উখিয়া, ককসবাজার।
মোবা- 01812-766893
Email- [email protected]
পাঠকের মতামত