নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজারের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। খুন, অপহরণ, ডাকাতি ও ছিনতাই নিত্য নৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিল্মী স্টাইলে খুন করা হচ্ছে আওয়ামীলীগ নেতাসহ সাধারণ মানুষকে। গত মে মাস থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত সময়ে আনসার কমান্ডার ও পশুচিকিৎসক এবং আওয়ামীলীগ নেতা ও প্রবাসীসহ ১০জন নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। টেকনাফ, চকরিয়া, রামু, মহেশখালী ও সদরে এসব হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঘরের ভেতর ও যানবাহন থেকে অপহরণের শিকার হয়েছেন প্রবাসীসহ ডজনাধিক ব্যক্তি। তাদের কাউকে প্রশাসন উদ্ধার করতে পারেনি। মুক্তিপণ দিয়েই মুক্ত হয়েছেন সকল অপহৃতরা।
পাশাপাশি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি। ঘটনার পর স্ব স্ব এলাকার দায়িত্বরত পুলিশ সিনেমার মতো আক্রান্ত স্থানে যান এবং গদবাধা বক্তব্য শুনিয়ে ব্যারাকে ফিরেছে।
জেলা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা ব্যক্তিদের নির্লিপ্ততা ও অপরাধী লালনই এসব ঘটনা ক্রমে বাড়ছে বলে মনে করছেন বোদ্ধামহল। ফলে আতংকে দিনাতিপাত করছে কক্সবাজার জেলাবাসী।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের পরিসংখ্যান মতে, ৩ জুলাই রাত ১০টার দিকে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী কুতুবজোম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সোনাদিয়া ওয়ার্ডের চারবারের নির্বাচিত মেম্বার আব্দুল গফুর ওরফে নাগু মেম্বারকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার রাতে স্থানীয় পূর্বপাড়া মসজিদ থেকে তারাবিহ নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে খুব কাছ থেকে প্রথমে গুলি ও পরে এলোপাতাড়ি কুপায় ৪-৫জন দুর্বৃত্ত। তার শোর চিৎকারে পরিবার ও স্থানীয় লোকজন রাত সাড়ে দশটার দিকে রক্তাক্ত নাগু মেম্বারকে প্রথমে মহেশখালী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেন। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুতুবজুম ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন খোকন ও মহেশখালী থানার ওসি বাবুল চন্দ্র বণিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুর্বৃত্তরা নাগু মেম্বারকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার ৪ ঘন্টার মাথায় টেকনাফ উপজেলা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামকে নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। টেকনাফ সদরের পল্লান পাড়ার বাসায় অতর্কিত ঢুকে মুখোশপরিহিত দূর্বৃত্তরা ঘুমন্ত সিরাজুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এসময় তার স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারও গুলিবিদ্ধ হন।
খবর পেয়ে টেকনাফ থানা পুলিশের এসআই কাঞ্চন ঘটনাস্থল থেকে সিরাজ মেম্বারকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
একই ভাবে গত ২২ এপ্রিল টেকনাফে বাড়ীতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে মুহাম্মদ হাশেম (৩৫) নামে এক যুবককে খুন করে। রাত সাড়ে ৯ টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাজমা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাশেম সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার নজির আহমদের ছেলে।
এবিষয়ে পরেরদিন টেকনাফ থানায় যোগাযোগ করা হলে পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে এবং ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে গদবাধ বক্তব্য গণমাধ্যমে দিয়েছিলেন।
নাগু মেম্বার খুনের ১২ ঘন্টা পার না হতেই ৪ জুলাই বেলা ১০টার দিকে একই ইউনিয়নের প্রবাসী শহিদুল্লাহ (২৯) গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুনের শিকার হয়েছেন। তিনি কুতুবজোম ইউনিয়নের কামিতাপাড়া গ্রামের মো. জহিরুল ইসলাম খলিলের ছেলে। জমির বিরোধ নিয়ে বড় মহেশখালীর মধুয়ার ডেইল গ্রামের বশির আহাম্মদ ভাড়াটে খুনি দিয়ে তাকে হত্যা করিয়েছেন বলে পরিবার সূত্র দাবি করেছে।
অপরদিকে, গত ১ জুলাই কক্সবাজার শহরের নতুন জেলখানার পেছনের সিকদার ঘোনা এলাকা থেকে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার দীল মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ জেলা কারাগারের অনতিদূরে উত্তরণ আবাসিক এলাকায় পাওয়া গেছে। সেহেরী খেয়ে ফজরের নামাজ পড়তে বের হওয়া মুসল্লিরা মোহাম্মদ ইসমাইলের লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করা হয়।
ইসমাইল অবশ্যই একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসি এবং দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার শেখ আব্দুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও আরেক সন্ত্রাসি জাকের মোস্তফা হত্যা মামলার ৫ নম্বর আসামি এবং বেশ কয়েকটি সন্ত্রাস, ছিনতাইয়ের মামলায় অভিযুক্ত।
৩০ জুন রাত ১১টার দিকে চকরিয়ার বদরখালীতে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা সিকদারকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
তাকে সবার সামনে বাজার থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেছেন নিহতের ছেলে মুহাম্মদ শাহজাহান।
রামুর পাহাড়ি জনপদ ঈদগড়ে ১৫ জুন দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন শরীফ পাড়ার ফয়েজ আহমদ মিয়াজীর ছেলে গ্রাম্য পশু চিকিৎসক মহি উদ্দিন। নির্মিতব্য একটি বাড়ির ভেতর গভীর রাতে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়ার পথে বৃহ®পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি প্রাণ হারায় হত্যা করা হয় বলে দাবি তার পরিবারের।
হত্যার ১২ ঘন্টার মাথায়, ঈদগড়ের ছগিরাকাটায় নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন জিয়া উদ্দিন বাবলু (৩০) নামে এক প্রবাসী। তিনি স্থানীয় কৃষক হাফেজ আহমদের ছেলে। দেন দরবার শেষে এক লাখ টাকা পরিশোধ করার পর শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টায় ঈদগড়-বাইশারী সড়কের ব্যাঙডেবা এলাকার পাহাড় থেকে বাবুলকে মুক্তি দেয় অপহরণকারিরা। এমনটি জানিয়েছিলেন ইউপির ছগিরাকাটা এলাকার সদস্য মনিরুজ্জামান।
তাকে অপহরণ করার আগে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালায় নুরুল আজিম নামের এক সিএনজি চালককে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। পরে সোর্স মাধ্যমে পারিবারিক দুরাবস্থা জানার পর বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে মাত্র ২ হাজার ৫’শ টাকা নিয়ে তাকে পাহাড়ের সেই ঢালা এলাকায় ছেড়ে দিয়ে যায় অপহরণকারিরা। অপহৃত নুরুল আজিম ঈদগড় বড়বিল এলাকার বদিউল আলমের ছেলে। তিনি জানিয়েছেন, অপহরণকারিরা তাদের কাছ থেকে প্রথমে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে, ২৫ জুন রাত ৮টারদিকে ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়কের হিমছড়ি ঢালায় যাত্রীবাহী বেশ কয়েকটি যানবাহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাওয়ার সময় এক বাসের ৪যাত্রী ঈদগড় করলিয়ামুড়া গ্রামের রশিদ আহাম্মদের ছেলে মনিরুল হক খোকন (৩২), ছগিরাকাটা গ্রামের আব্দু জব্বরের ছেলে ছাগল ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (৪০) ও ব্যাঙডেভা গ্রামের আনছার আলীর ছেলে নবী আলম(৩০) এবং ঈদগাঁওর ইসলামাবাদ খোদাইবাড়ী গ্রামের মৃত ছৈয়দ আহমদের ছেলে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কালুকে অপহরণ করে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায়।
পরে দেন দরবার করে নির্ধারিত পরিমাণ মুক্তিপণ দিয়ে ১২ ঘন্টা, ২৪ ঘন্টা ও ৪৮ ঘন্টাপর অপহৃতরা ঘরে ফিরেছেন।
ঈদগড় আর আর এফ পুলিশ ক্যা¤েপর আইসি মোহাম্মদ হাসেম ডাকাতি ও অপহরণের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, রাত ৮ টা পর চলাচল করায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। তাই তিনি রাত ৮টায় পুলিশ ডিউটি চলে আসার পর ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কে যাতায়ত বন্ধ রাখতে যাত্রীদের অনুরোধ জানান।
পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়ক ব্যবসহারকারিদের মতে, গত দু’বছরে শতাদিক ডাকাতি ও অর্ধশত জন লোককে অপহরণ করা হয়। এদের মুক্তি দেয়ার বিপরীতে কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করা কয়। কিন্তু প্রশাসন এই পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত উল্লেখযোগ্য কোন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। শেষ মেষ নিরুপায় হয়ে অপহৃতের পরিবার মুক্তিপণ দিয়ে স্বজনকে ফিরিয়ে এনেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, অপরাধী চক্রের সাথে প্রশাসনের কারো কারো ‘ভাল’ যোগাযোগ রয়েছে। ডাকাতি ও অপহরণের মুক্তিপণের ভাগ তাদের কাছে ঠিকই পৌঁছে যায়। সংশ্লিষ্ঠ এলাকার নিম্ন পদস্থ চাকুরেসহ ওসি ও জেলা পুলিশের প্রধানের কাছেও যোগ্যতা মাফিক ‘নজরানা’ পৌঁছে দেয়া হয়। তাই অপরাধী দমনে দৃশ্যত কোন তোড়জোড় না করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়া হয় ‘পুলিশ অপহৃতকে উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে’।। এসব কারণে শণিরদশা কাটছেনা এবং পুরো পাহাড়ি জনপদে আতংক বিরাজ করছে।
আক্রান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মতে, যেকোন হত্যাকান্ড ও অপরাধের সুষ্ঠু বিচার না হলে এলাকায় হত্যাসহ আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হতেই থাকে। আগে অপহরণ হত সড়কে আর এখন বাড়ি থেকে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে এসে গুলি করে মারা হচ্ছে। ঈদগড়-বাইশারীর চার পাশে পাহাড়ে আস্তানা গেড়ে বেশ কয়েকটি অপরাধীচক্র বিভিন্ন সময়ে ঈদগড়, ঈদগাঁও, বাইশারী সড়কে ডাকাতি ও লোকজনকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে একের পর এক লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে। অপহরণকারির কবলে পড়েন ব্যাংকার, শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ এলাকার সাধারণ লোকজন।
অপরদিকে, কক্সবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা ঘটে গত ১৩ মে। শুক্রবার টেকনাফ মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনসার ব্যারাকে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদল হামলা চালিয়ে ক্যাম্পের আনসার কমান্ডার আলী হোসেন (৫৫)কে গুলি করে হত্যা করেন। এসময় হামলাকারিরা আনসারদের ব্যবহৃত ১১টি সরকারি অস্ত্র ও ৬৯০ পিস বুলেট লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার কিংবা অপরাধী ধরতে কার্যত ব্যর্থ হয়। দৃশ্যত কোন সফলতা না পেয়ে তারা ক্যাম্প এলাকায় সভা করে বলে আরএসও এ হামলা চালিয়েছে এবং অস্ত্র গুলো মিয়ানমার নিয়ে গেছে। এ তথ্য প্রচারের পর প্রশ্ন উঠে-তাহলে সীমান্ত প্রহরায় বিজিবি কি ব্যর্থ? না হলে লুণ্ঠিত এসব অস্ত্র মিয়ানমার যায় কিভাবে?
তবে পরবর্তীতে র্যাব-৭ আনসার ক্যাম্প লুটের ঘটনায় ৩০ জুন ৫জনকে আটক করে। তাদের মাঝে দু’জন আরএসও সদস্য রয়েছে বলে সেদিন জানানো হয়।
যেদিন এসব রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়, সেদিন কক্সবাজারের রামুর ঈদগড়ের সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মং শৈহ্লা মারমা (৫৫) কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাত ১০ টার দিকে বাইশারী বাজারের উত্তর পাশে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় হত্যার শিকার মং শৈহ্লা স্থানীয় ধাবনখালী পাড়ার বাসিন্দা মৃত আগ্য প্র“ মারমার ছেলে।
এর আগে, ১৪ মে একই এলাকার উপরশাখ পাড়ায় উ গাইন্দ্যা (৭০) নামের এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ভিক্ষু হওয়ার আগে তার নাম ছিলো, মং শৈ উ চাক। গ্রাম থেকে একটু দূরের বিহারে একাই থাকতেন তিনি।
গত ১৪ জুন কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ শাহফকির বাজার এলাকায় এক সালিশ বৈঠকে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়েছে খুন করে সদ্য প্রবাস ফেরত আবছার কামাল (৩৫) কে। তিনি সদরের উপকূলীয় ভারুয়াখালীর হাজিপাড়ার নজির আহমদের ছেলে। এসময় বিচারকসহ আরো অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। রাত পৌনে ১২ টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গত ২৪ জুন শহরের পাহাড়তলী ইউছুফআলীর ঘোনা এলাকায় পূর্ব শত্র“তায় নুরুল আবছার নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে প্রতিপক্ষ। তিনি মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। মুমূর্ষ আবছার কে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। সেখানে প্রায় সপ্তাহ দেরেক চিকিৎসা শেষে সম্প্রতি ঘরে ফিরেন তিনি। কিন্তু এর আগে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে পুলিশ উল্টো তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় ডাকাতির মামলা রুজু করে বলে আহতের পরিবার সূত্র জানায়। এতে তাকে হাসপাতালে আনতে এবং চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে সহায়তাকারিদেরও আসামী করা হয়। হামলাকারিদের হয়ে সদর থানার কর্তা ব্যক্তিদের সাথে বিশেষ সম্পর্কিত এক গণমাধ্যম কর্মী মামলা রুজু করতে ভুমিকা রাখেন বলেও জানান আবছারের পরিবার।
চকরিয়ায় গত ২ জুলাই শবে কদরের রাতে ফরিদুল আলম নামের এক ঠিকাদারের বাড়ির দরজায় কলিং বেল টিপে ভেতরে ঢুকে একদল সশস্ত্র ডাকাত অস্ত্রের মূখে লুটে নিয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের জিদ্দাবাজার এলাকায় ঘটেছে এ ঘটনা। ডাকাতির সময় পাশের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে ডাকাতদল সিএনজি অটোরিক্সায় করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুণ্ঠিত মালামালের তালিকা তৈরী করে আসে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্বৃত্ত কর্তৃক এসব হত্যা ও ডাকাতি এবং অপহরণ ঘটনা ছাড়াও পারিবারিক কলহে খুন হয়েছেন আরো কয়েকজন। ঘটেছে ছিনতাই এবং অপরাধ মূরক নানা ঘটনা। যা সাধারণ মানুষকে আতংকিত করে রেখেছে।
জেলার ক্রম বাড়তে থাকা অপরাধ সম্পর্কে জেলাবাসীর মনে আতংক এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সচেতন সবার মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে অনেক সমাজ সচেতন ব্যক্তিও নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের মতে পুলিশের কর্মকান্ড ও অপরাধ লালন নিয়ে ওপেন কথা বললে যেকোন মুহুর্তে খড়গ আসতে পারে। সময়টা ভাল যাচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, অনেক থানা ও তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের সাথে এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রকারির ‘দহরম’ সম্পর্ক রয়েছে। যেকোন অপরাধের পর তাদের মাধ্যমে অপরাধির পক্ষ হয়ে তদবির করার কারণে আড়াল থেকে যায় অপরাধ কর্ম। যা পুরো জেলার আট উপজেলাতেই বিদ্ধমান। ক্ষেত্র বিশেষে জেলা পুলিশের কর্তা ব্যক্তির সাথেও অপরাধীর গড়ফাদার ও নিকটাত্মীয়রা ‘উষ্ণ’ সম্পর্ক বজায় রাখেন। তাই সব ধরণের অপরাধী বীরদর্পে অপকর্ম করে ছাড় পাচ্ছে। তাঁদের মতে, এসব কাঝে ব্যবহার হচ্ছেন সুযোগ সন্ধানী অনেক গণমাধ্যমকর্মীও। তাই অপরাধ ক্রমে বাড়ছে বৈ কমছেনা।
আবার অনেক সময় সংগঠিত অপরাধ সম্পর্কে জানতে বা অপরাধীর বিষয়ে তথ্য দিতে অনেক থানার ওসি, তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে সহকারি পুলিশ সুপার ও উর্ধ্বতনদের সরকারি মুঠোফোনে কল করা হলেও সংশ্লিষ্টরা ফোন রিসিভ করেন না। তাই অনেক সময় সুযোগ থাকা সত্তেও পুলিশ অপরাধ সংগঠনের আগে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্ত হন।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় মুঠোফোনে কল করা হয় পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথকে। তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে বিষয়টি ক্ষুদ্র আকারে লেখে কল রিসিভ অথবা কল বেক করতে অনুরোধ জানিয়ে এসএমএস পাঠানো হয় তাঁর মুঠোফোনে। কিন্তু রাত প্রায় ১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তার ফিরতি কল কিংবা এসএমএস না পাওয়ায় পুলিশের বক্তব্য ছাপানো সম্ভব হয়নি। সুত্র :দৈনিক দৈনন্দিন