শাহীনশাহ :: প্রায় দু দশক আগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়া টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কক্সবাজার জেলা বিএনপির সহ সভাপতি সরওয়ার কামালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী ফরোয়ানা জারী করেছে বিজ্ঞ আদালত। গত ১০ আগষ্ট কক্সবাজার আদালতের যুগ্ন দায়রা জজ ৮৬৩ স্মারক নং এ গ্রেফতারী ফরোয়ানা জারী করেন। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে টেকনাফের এ বিএনপি নেতাকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের সহকারী দায়রা জজ আদালতে আতœসমর্পনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। নি¤œ আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা বাতিল চেয়ে বিএনপি নেতা সরওয়ার কামালের এক আবেদননের শুনানী শেষে বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও শেখ মোঃ জাকির হোসেনর বেঞ্চ এই আদেশ দেন। ‘ পলাতক ব্যক্তি প্রতিকার পেতে পারেনা’ এই যুক্তি দেখিয়ে সরওয়ার কামালকে আতœসমর্পন করতে বলা হয় এই আদেশে। জানা যায়, হ্নীলা নাইক্যংখালী গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার মৃত ইউছুপ আলীর পুত্র তাজুল মুল্লুককে হত্যার ঘটনায় ১৯৮১ সালের ২৫ জুলাাই নিহতের বড় ভাই বদিউর রহমা (বর্তমানে মৃত) বাদী হয়ে সাবেক টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান জেলা বিএনপির সহ সভাপতি সরওয়ার কামাল, জামায়াত নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মীর কাশেম, (আজ ২৮ আগষ্ট তার জানাযা) ও দরবেশ আলী মেম্বারের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। সে নাইক্ষ্যংখালী এলাকার মৃত হায়দর আলী মাতবরের ছেলে। বিচারিক আদালত ১৯৮৯ সালের ২৬ জুলাই ওই মামলায় সরওয়ারকে ১০ বছর সাজা দেয়। সরওয়ারের বিরুদ্ধে আপিল করলে ১৯৯১ সালে ২৮ আগষ্ট হাইকোর্ট তার আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন মন্জুর করে। এরপর কারাগার থেকে বেড়িয়ে আসে সরওয়ার কামাল। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি করে ১৯৯২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট সরওয়ার কামালের দন্ড কমিয়ে ৮ বছর সাজা নির্ধারণ করে এবং তাকে বিচারিক আদালতে আতœসমর্পন করতে বলে। এর আগেই ১৯৯১ সালের ১৩ জুন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি আবেদন করেছিলেন সরওয়ার কামালের স্ত্রী লুৎফুন নাহার। ওই আবেদনে ১৯৯৩ সালের ১২ এপ্রিল বিগত বিএনপি সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস সরওয়ার কামালের সাজা মওকুপ করে দেন। এদিকে সাজা কমিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের নথি পাওয়ার পর ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন সরওয়ার কামালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে বিচারিক আদালত। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি পরওয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন করলে বিচারিক আদালত তা খারিজ করে দেয়। এর পর তিনি হাইকোর্টের এক আবেদনে বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার পরও বিচারিক আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি করতে পারেন না। কিন্তু ওই সময় সেই আবেদনও খারিজ করে দিল আদালত। হাইকোর্টে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন এসএম জাফর সাদিক। সরকার পক্ষে ছিলেন সহকারী এটর্ণি জেনারেল গাজী মামুনুর রশিদ।
এদিকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী ফরওয়ানা জারি হওয়ায় স্থানীয়রা উল্লাসে ফের্টে পড়ে। নিহত তাজুল মুল্লুকের ছেলে সিরাজুল মোস্তফা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, সত্যের জয় উদ্ভাসিত হয়েছে। এলাকাবাসীর অনেকে বলেন, মামলাটি ওয়ারেন্ট হওয়ার সাথে সাথে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে তৎকালীন তাজুল মুল্লুকের খুনি সরওয়া কামাল। তার সাথে যোগাযোগ রয়েছে বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা কথিত মাষ্টার রশিদের। এ রশিদই জানে পলাতক আসামী কোথায় রয়েছে। মামলাটি পুনরায় চালু হওয়ার পর থেকে তাজুল মুল্লুকে বংশধরকে নিয়মিত হয়রানী করছে মাষ্টার রশিদ। এ ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, যে কোন আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।