সৈয়দুল কাদের ::
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলাই দেশের জ্বালানি খাতের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গৃহীত বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের সুফল দেশবাসীবাসী পেতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে এসপিএম প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র বন্দর ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। গভীর সমুদ্র বন্দর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মহেশখালীর মেগা প্রকল্পে পাল্টে যাচ্ছে সারাদেশের চিত্র। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান সরকারের একের পর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপে পরিবর্তন এসেছে সব খাতেই। উন্নয়নের এই দৌঁড়ে এগিয়ে আছে দেশের জ্বালানি খাত। সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে সর্বাধুনিক পদ্ধিতে গভীর সমুদ্র থেকে তেল খালাসে কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ প্রকল্প। এটির মাধ্যমে মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম পাশে গভীর সমুদ্রে স্থাপিত বয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাস করা হবে।
এই তেল পাইপলাইনের মাধ্যমেই ১১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে তেল খালাস শুরু করলে বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা। ১২ দিনের কাজ হবে ৪৮ ঘণ্টায়। ৫০ হাজার ঘনমিটারের ৩টি ও ৩০ হাজার ঘনমিটারের ৩টি ট্যাংকে তেল মজুত রাখা যাবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, এসপিএম প্রকল্পের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে দেশের আমদানি-নির্ভর জ্বালানি তেল খালাসে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ৭ হাজার ১৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি চালু হলে প্রতি বছর ৯ মিলিয়ন টন তেল খালাস করা যাবে। ৪৮ ঘণ্টায় খালাস হবে ১ লাখ ২০ হাজার টন ক্রুড অয়েল (অপরিশোধিত তেল)। ৭০ হাজার টন ডিজেল খালাসে সময় লাগবে মাত্র ২৮ ঘন্টা। কমিশনিং ও টেস্টিং শেষে চলতি বছরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকল্পটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
এসপিএম বয়া মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগরে স্থাপন করা হয়েছে। বিদেশ থেকে বড় জাহাজে আমদানি করা জ্বালানি তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীতে স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে জমা হবে। সেখান থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপো, ইস্টার্ন রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাংক ছাড়াও প্রয়োজনে তেল বিপণন কোম্পানির বিভিন্ন স্টোরেজ ট্যাংকে জমা করে সারাদেশে সাপ্লাই করা হবে। এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জ্বালানি খালাসে প্রতিবন্ধকতায় আর পড়তে হবে না। এতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
মহেশখালী দ্বীপে বন বিভাগের ১৯১ একর জমিতে এসপিএম প্রকল্পের মূল অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ৩টি করে মোট ৬টি স্টোরেজ ট্যাংক। স্টোরেজ ট্যাংকগুলো সমতল থেকে প্রায় ২০ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে বন্যা কিংবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্টোরেজে পানি উঠতে না পারে। এসপিএম থেকে ৩৬ ব্যাসার্ধের ২টি পৃথক পাইপলাইন গিয়ে মিলিত হয়েছে গভীর বঙ্গোপসাগরের বয়াতে।
এসপিএম প্রকল্প কর্মকর্তা মনজেদ আলী শান্ত বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প। এটি কাজ শুরু করলে সুবিধা মতো আমরা ক্রুড অয়েলকে পাম্পিং করে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পাঠাতে পারব। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমাদের প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত প্রকল্পের কমিশনিং এবং টেস্টিংয়ের কাজে যাবে। কমিশনিং এবং টেস্টিংয়ের কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হলে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।
এছাড়াও জ্বালানি খাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এলএনজি টার্মিনাল। ইতিমধ্যেই এ প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মহেশখালী হয়ে আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এই ফাইব লাইনে কোন সমস্যা হলেই দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে ঢাকা বাসিকে। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উৎপাদনে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইতিমধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে এটি পরীক্ষামূলক হলেও আগামী ডিসেম্বর মাসে একটি ইউনিট চালু হবে এবং ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আরেকটি ইউনিট চালু হবে।
মহেশখালী কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপদানে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়েছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় বিজয়ী হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
পাঠকের মতামত