টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ওমর ফারুক প্রকাশ ওরফে সিআইপি ফারুকের হাতে ব্যাংক থেকে তৈরি করা প্রায় ১০০ ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) জমা রয়েছে। এসব ড্রাফটের অর্থমূল্য প্রায় ৩০ লাখ ডলার বা সাড়ে তিন কোটি টাকা। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই দুই মাসেই তৈরি করা এসব ড্রাফট এখনও মিয়ানমারে পাঠানো হয়নি। এসব ড্রাফট যেকোনো সময় স্থলবন্দরে পণ্য আমদানির অজুহাতে পাচার হতে পারে মিয়ানমারে। এর জন্য সম্প্রতি টেকনাফ স্থলবন্দরে পেঁয়াজের দুটি চালানও মিয়ানমার থেকে আনা হয়েছে তার মালিকাধীন ওমর ফারুক অ্যান্ড ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানের অধীনে।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মিয়ানমারে ১৫ বছরে পাচার ৯ হাজার কোটি টাকা’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এবি ব্যাংক টেকনাফ শাখা থেকে নতুন এই তথ্য মিলেছে। গতকাল প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কক্সবাজারের টেকনাফের স্থলবন্দরে পণ্য আমদানির নামে ব্যাংকের মাধ্যমে মিয়ানমারে চলে যাচ্ছে ইয়াবার অর্থ। এই প্রক্রিয়ায় গত ১৫ বছরে সেখানে অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে ফরেন ডিমান্ড ড্রাফটে (এফডিডি) ডলার রূপে পাচার করা হয় এই অর্থ। উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এই অর্থ পাচারে জড়িত ছিল।
সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ভগ্নিপতি ওমর ফারুক সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে তার ভাই মোহাম্মদ এনামুল কবির বর্তমানে নিজেকে বিএনপির টেকনাফ পৌর শাখার সহসভাপতি হিসেবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি বর্তমানে ওই ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
এ ব্যাপারে ওমর ফারুকের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি ভাই এনামুলও।
মোহাম্মদ এনামুল কবিরের বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্যে বিএনপির টেকনাফ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই নামের কোনো ব্যক্তি বিএনপির টেকনাফ পৌর শাখার সহসভাপতি পদের দায়িত্ব পালন করেন না।
টেকনাফের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর টেকনাফ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সাবেক এমপি বদির সঙ্গে ওমর ফারুকও আসামি হয়েছেন।
ওমর ফারুক আত্মগোপনে যাওয়ার পর সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠানের অধীনে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পেঁয়াজের দুটি চালান আনা হয়েছে। এর মধ্যে গত সোমবার দুপুরে টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমার থেকে একটি ট্রলারে করে ২০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার আনা হয়েছিল ৩৭৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ।
সত্যতা নিশ্চিত করে ইউনাইটেড ল্যান্ডপোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের ম্যানেজার সৈয়দ মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ফারুক ট্রেডার্সের মাধ্যমে এসব পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। টেকনাফে পৌঁছানোর পর থেকে পেঁয়াজগুলো ট্রলার থেকে খালাস করা হচ্ছে এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সুত্র: প্রতিদিনের বাংলাদেশ