প্রকাশিত: ২৬/১০/২০১৭ ৮:৫৯ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:৪৬ এএম

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ ::
টেকনাফ উপজেলা আইন শৃংখলা ও চোরাচালান প্রতিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্টিত হয়েছে। ২৬ অক্টোবর সকাল ১১টায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্টিত হয়। সভা দু’টির সভাপতিত্ব করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ হোসেন সিদ্দিক।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আহমদ বলেন ‘বর্তমানে টেকনাফ সীমান্তে দলে দলে পাশাপাশি ইয়াবা চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে একাধিক চালান ধরাও পড়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যু ভয়াবহ এবং ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এটি এখন জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে’। তিনি আরও ‘অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিকভাবে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এর আগে বিভিন্ন সময়ে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে নিবন্ধনহীন ভাড়া বাসায় বনাঞ্চলে সৈকতে লোকালয়ে বসবাস করছেন তাদেরকেও নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কোন অবস্থাতেই লোকালয়ে আশ্রয় দেয়া যাবেনা’। তিনি এব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে জনপ্রতিনিধি এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।

সহকারী কমিশণার (ভুমি) প্রণয় চাকমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিস তাহেরা আক্তার মিলি, হোয়াইক্যং মডেল ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওঃ নুর আহমদ আনোয়ারী, বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাওঃ আজিজ উদ্দিন, সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর হোসেন, হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান প্যানেল-১ আবুল হোসেন মেম্বার, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী শাহপরীরদ্বীপ স্টেশনের এমএ আক্তার, টেকনাফ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম অফিসার শাহেদুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি অফিসারের প্রতিনিধি উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ শফিউল আলম কুতুবী, সদর বিওপির কোম্পানী কমান্ডার মোঃ ইব্রাহীম, কমিটির সদস্য আলহাজ্ব সোনা আলী, আলহাজ্ব জহির হোসেন এমএ, আবুল কালাম, উপকুলীয় বন বিভাগের ফরেস্ট রেঞ্জার নাসির উদ্দিন আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাওঃ আমির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে শাহপরীরদ্বীপে মাছ শিকার বন্ধ :

সভায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে শাহপরীরদ্বীপ থেকে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় জেলে, জেলে পরিবার এবং ভোক্তা সাধারণের সমস্যার কথা তুলে ধরে কমিটির সদস্য আলহাজ্ব সোনা আলী বলেন শাহপরীরদ্বীপ ঘোলার চরে সার্বক্ষণিক প্রহরা থাকলে একজন রোহিঙ্গাও অনুপ্রবেশ করা সম্ভব নয়। প্রশাসন সম্মত হলে এব্যাপারে ট্রলার দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। এতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হবেনা।

ভাড়া বাসায় রোহিঙ্গা :

টেকনাফ পৌর সভাসহ উপজেলার সর্বত্র ভাড়া বাসায় রোহিঙ্গারা বসবাস করছে জানিয়ে টেকনাফ পৌর সভার মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসলাম মিয়া বলেন এ ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে পৌর সভার পক্ষ থেকে এবং ইউপি চেয়ারম্যানগণ সর্বাতœক সহযোগিতা করবে। ভাড়া বাসা এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পে চলে যায় এজন্য মাইকিং করা হবে। ভাড়া বাসা এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে গিয়ে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়ে রেশন কার্ড নিয়ে আবার গ্রামের ভাড়া বাসা ও বনাঞ্চলে ফিরে আসছে।

বাহারছড়ায় হয়রানী মামলা :

বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাওঃ আজিজ উদ্দিন বলেন আগে হোয়াইক্যং-বাহারছড়া ঢালা রাস্তায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ি এবং বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পালাক্রমে টহল ও ডিউটি করতেন। কিন্ত গত কয়েক মাস ধরে তা বন্দ থাকায় ডাকাতি হচ্ছে। তাছাড়া দক্ষিণ শীলখালী গ্রামের বাসিন্দা আমির আহমদ প্রকাশ মীর আহমদের পুত্র ১০ বছর আগে সউদি আরব থেকে আসা মানসিক ভারসাম্যহীন কঙ্গালসার মোঃ বেলাল (৪০) স্বাভাবিকভাবেই গত ২০ অক্টোবর মারা যান। এখানে তার কোন ওয়ারিশ নেই। মানবিক কারণে তাঁকে স্থানীয় এক যুবক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। যা এলাকাবাসী সকলেই জানেন। কিন্ত মারা যাওয়ার পর পুলিশ প্রভাবিত হয়ে তাঁকে পোস্ট মর্টেম করে। দিবালোকের মতো সত্য ঘটনার কারণে কেউ বাদী হয়ে মামলাও করেনি। তারপরও পুলিশ বিভিন্ন লোকের বাড়িতে রেইড দিচ্ছে। এনিয়ে পুরো এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।

মোবাইল কোর্ট বিড়ম্বনা :

মাদকাসক্ত ও অবাধ্য সন্তানদের মোবাইল কোর্টে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠাতে পুলিশে হস্তান্তর নিয়ে অসহায় ভুক্তভোগী অভিভাবকরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বলে তুলে ধরেন কমিটির সদস্য আবুল কালাম। এ সমস্যা নিরসনে ঘটনার শিকার অভিভাবকদের টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অথবা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশণার (ভুমি) কার্যালয়ে সরাসরি নিয়ে আসার পরামর্শ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ হোসেন সিদ্দিক।

শাহপরীরদ্বীপ বেড়িবাঁধ :

সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর হোসেন বলেন এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি শাহপরীরদ্বীপ বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে ৫ বছর পরে। এতে আমরা সকলেই খুশী। বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর এনে মজুদ করা হচ্ছে। পাথরগুলো কিভাবে কোত্থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। তাছাড়া এক শ্রেনীর সুবিধাবাদী লোক জমি নিয়ে চক্রান্ত শুরু করে দিয়েছে। এনিয়ে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল :

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী শাহপরীরদ্বীপ স্টেশনের এমএ আক্তার বলেন নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা ভরাট হওয়ায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপ চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজগুলো যাতায়ত করে মিয়ানমার জলসীমানার খাড়ি দিয়ে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভাল থাকলেও সীমান্ত পরিস্থিতি ভিন্ন। এখনও মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী উস্কানীমুলক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে। টেকনাফ থেকে দেশী-বিদেশী পর্যটক ও ভিআইপিদের নিয়ে মিয়ানমার জলসীমানা ব্যবহার করে যাতায়তকালে যে কোন মুহুর্তে অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা বিদ্যমান থাকায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর পক্ষ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের উপর আপত্তি জানানো হয়েছে। আমরা চাইনা কোন পর্যটকের ক্ষতি হউক। পর্যটকদের কারণে সীমান্ত উত্তেজনা বা নতুন করে কোন অঘটন সৃস্টি পরিহার করতে রাষ্ট্রিয় নিরাপত্তার স্বার্থ বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপ চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্দ থাকবে।

এছাড়াও ওএমএস, দ্রব্যমুল্য, চোরাচালান, সার মনিটরিং, যানজট, ইউনিয়ন পরিষদ সমুহের তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলোর সার্ভার সরকারীভাবে সাময়িক বন্দ থাকায় যাবতীয় কাজে অচলাবস্থা, সর্বসাধারণের ভোগান্তি, উপজেলার সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা এবং বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ##

পাঠকের মতামত