নিউজ ডেস্ক ::
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত দুই ইয়াবা পাচারকারী ইউপি মেম্বারের নেতৃত্বে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে আজ রবিবার বিকেলে ইয়াবা পাচারকারীদের এক শোডাউন অনুষ্ঠিত হয়েছে। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়েই ইয়াবা পাচারকারীদের এই শোডাউন। ইয়াবার চালান নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়া এক ছাত্রকে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ক্রস ফায়ারে নিহত ইয়াবা ডন নূর মোহাম্মদের পুত্র ও হত্যা মামলার আসামিকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করার আনন্দে সীমান্তজুড়ে শতাধিক যানবাহন নিয়ে এই শোডাউনে মেতে উঠে ইয়াবা পাচারকারীরা। তারা শোডাউনে উল্লাস প্রকাশ করে ইয়াবা পাচারকারী ও হত্যা মামলার আসামিকে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদক মনোনয়ন করায়।
জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় হ্নীলা বাস ষ্টেশন চত্বরে। ওই অনুষ্ঠানে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্টানে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রধান বক্তা ও বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান,‘সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষ হবার পর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কৌশলে কাউন্সিল করার কথা বলে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্টান নিয়ে যান টেকনাফ সদরে। সেখানেই কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করার কথা বলা হলেও শনিবার রাতে বিতর্কিত দুইজনকে নিয়ে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।’
হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন সোহেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন হচ্ছে নাফ নদের তীরবর্তী ইয়াবা পাচারের একটি স্বর্গ। তাই হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ‘ইয়াবা পরিবারের’ সন্তানদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করে জানান, মনোনীত সভাপতি সাইফুল করিম একাধিক অস্ত্র, ছিনতাই, হত্যাচেষ্টা, ছাত্রী অপহরণ ও ইয়াবা মামলার আসামি।
২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারী কক্সবাজার সদর থানার লিংক রোডে অবস্থিত তিশা বাস কাউন্টারের সামনে থেকে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়ার নেতৃত্বে একদল গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাইফুল করিমের নিকট থেকে ৭০০ পিস ইয়াবাসহ তাকে আটক করে। ওইদিনই তাকে ইয়াবাসহ কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করে ১০ নং মামলা রুজু করা হয়। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে কারাগারে প্রেরণ করে। দীর্ঘ সাত মাস কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় পুরোদমে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে মনোনীত সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন ফাহিম একজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি। সরকারী কর্তব্য কাজে আক্রমণকারী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারস্থ টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আমলী আদালতে দাখিল করা ৫৮৬ নাম্বার চার্জশীট সূত্রমতে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারী সন্ধ্যা ৬টায় র্যাব-৭ (কক্সবাজার)-এর ডিএডি মোহাম্মদ আলী হায়দারের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল নুরুল আমিন ফাহিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তার মা মিনারা বেগমকে আটক করে নিয়ে যায়। এরই সূত্র ধরে ফাহিমের নেতৃত্বে দুধর্ষ একদল ইয়াবা ব্যবসায়ী র্যাবের সোর্স সন্দেহে তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা হ্নীলা হাই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী সরোয়ারুল ইসলামকে অপহরণ পূর্বক হত্যা করে।
২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী নিহত সরোয়ারের মা ছকিনা বেগম বাদী হয়ে নুরুল আমিন ফাহিমকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে ৩৬৪/৩০২/৩৪ ধারায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের ৩নং আমলী আদালতে সিআর মামলা দায়ের করে। যা তদন্ত করে ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আদালতে চুড়ান্ত চার্জশীট দাখিল করা হয়। পুলিশ নুরুল আমিন ফাহিমকে ইয়াবা ব্যবসায়ী উল্লেখ করে প্রধান আসামি হিসেবে সরোয়ার হত্যার সম্পৃক্ততা পান বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া আদালতে দাখিলকৃত চার্জশীটে অপর আসামিরা জামিন নিলেও ফাহিম জামিন নেয়নি বলে উল্লেখ করে তাকে পলাতক আসামি হিসেবে দেখানো হয়।
ইয়াবা ও হত্যা মামলার আসামিদের ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক মনোনীত করার ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকার বিষয় আমি জানি না।’
অপরদিকে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয় জানান, বিষয়টি নিয়ে আমি খতিয়ে দেখব।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে জানান, ‘ইউনিয়ন ছাত্রলীগের মনোনীত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই ইয়াবা পরিবারের সন্তান। সভাপতি ইয়াবার চালান নিয়ে ধরা পড়ে কারাগারে ছিলেন। আর সাধারণ সম্পাদক দেশের প্রথম ইয়াবা ডন হিসাবে ক্রস ফায়ারে নিহত নুর মোহাম্মদের পুত্র।’
তিনি আরো জানান, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার নুরুল হুদা একজন তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারী। তারই আপন ভাতিজা হচ্ছে নতুন মনোনীত ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন ফাহিম। অপর মেম্বার শামশুল আলম বাবুলও একজন তালিকাকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারী। শোডাউনে অংশ নেওয়া লোকজনের বেশীর ভাগই ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য।
এদিকে হ্নীলা ইউনিয়নের মনোনীত সভাপতি সাইফুল করিম তার বিরুদ্ধে বেশ ক’টি মামলা থাকার কথা স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে জানান, এসব মামলার বেশীর ভাগই ষড়যন্ত্রমূলক।’
এ ব্যাপারে টেকনাফ থানার উপ পরিদর্শক কাঞ্চন কান্তি দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইয়াবা পাচারকারীদের শো ডাইনের খবর তার জানা নেই।
পাঠকের মতামত