কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়ার গহিন পাহাড়ের ঢালু থেকে তিনটি গলিত মরদেহ উদ্ধারের পর দুই নারীর নাম ঘুরে-ফিরে আলোচনায় এসেছে। তাদের মধ্যে একজন নিহত জমির হোসেন রুবেলের সাবেক স্ত্রী। অপরজনের সঙ্গে রুবেলের বিয়ের প্রাথমিক কথাবার্তা চলছিল। পুলিশ বলছে, এই দুই নারীকে আটক করা সম্ভব হলে পুরো ঘটনার মোটিভ পরিষ্কার হবে।
বুধবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় মরদেহ তিনটি উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন, কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের জমির হোসেন রুবেল, ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউছুপ, কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার ইমরান। যারা ২৮ এপ্রিল টেকনাফ গিয়ে অপহরণের শিকার হন।
এ ঘটনায় হওয়া মামলায় র্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তাররা হলেন, টেকনাফের মুচনী ক্যাম্পের সৈয়দ হোসেন প্রকাশ সোনালী ডাকাত, একই ক্যাম্পের শফি আলম বেলাল, মো. আরাফাত (শফির ভাগ্নে) ও টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদারবিলের এমরুল করিম প্রকাশ ফইরা। আরাফাতের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যার শিকার রুবেলের মোবাইল ফোন।
গত ১৩ মে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে টেকনাফ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন রুবেলের বাবা মো. আলম। এই মামলায় প্রথমে শফি ও আরাফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আসামিদের রিমান্ডে নেয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোনালী ডাকাত ও করিম প্রকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ৩০ এপ্রিল নিখোঁজদের সন্ধানে সদর থানায় তিনটি সাধারণ ডায়েরি জমা পড়েছিল।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম জানান, ২৮ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়া তিন যুবক নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এতে বলা হয়, তাদের অপহরণ করা হয়েছে এবং ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। এর সূত্র ধরে পুলিশ টেকনাফের মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শফি আলম বেলালকে আটক করে। তার তথ্যমতে, র্যাবের সহযোগিতায় একই ক্যাম্প থেকে আটক করা হয় তার ভাগ্নে আরাফাতকে। আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন শফি আলম এ ঘটনার পরিকল্পনাকারীদের একজন। টেকনাফের কোহিনূর নামের এক নারীকে বিয়ের পাত্রী হিসেবে রুবেলকে দেখানোর কথা ছিল শফির।
ওসি জানান, কোহিনূর নামের এই নারী রোহিঙ্গা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে ঘটনার মূল রহস্য বের হবে।
এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫ অধিনায়ক সাইফুল ইসলাম সুমন জানিয়েছেন, পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন জমির হোসেন রুবেল, তার দুই বন্ধু ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউছুপ ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার ইমরান।
তাদের উদ্ধারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ মে টেকনাফ হাবিরছড়া দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ চক্রের হোতা সোনালী ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সোনালী র্যাবকে জানায়, অপহৃতদের গুলি করে হত্যার পর পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে মরদেহগুলো আগুনে পুড়িয়ে আলামত ধ্বংস করারও চেষ্টা করা হয়। গলিত মরদেহগুলো অপহৃত রুবেল, ইমরান ও ইউছুপের বলে জানিয়েছে সোনালী ডাকাত।
এটি পরিকল্পিত হত্যা কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রুবেলের স্বজনরা। রুবেলের বোন মিনু আরা বেগম জানান, রুবেলের সঙ্গে কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নারী মিনার বিয়ে হয়েছিল। তাদের সংসারে তিন কন্যাসন্তান রয়েছে। দেড় বছর আগে পারিবারিক কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়। পরে অন্য একজনকে বিয়ে করে মিনা ঢাকায় অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। তবে নানা কারণে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হতো। মিনা রুবেলকে বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে টেকনাফ পাঠিয়েছিলেন। ওখানে অপহরণের ঘটনা ঘটে।
মিনু আরা বেগম জানান, তার ভাই অপহরণ হয়েছে বলে প্রথম ফোনটি তাকে করেছেন মিনা।
রুবেলের বোনের অভিযোগ, মিনা টেকনাফের সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল এলাকার রোহিঙ্গা মোহাম্মদ শফির ছেলে হেলালকে পাত্রী কোহিনূরের ভাই সাজায়। হেলাল চৌফলদণ্ডীর রুবেলকে মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শফির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে তাদের পরিকল্পিতভাবে টেকনাফে নিয়ে হত্যা করা হয়। এক্ষেত্রে মিনার বর্তমান স্বামীর হাত রয়েছে বলে সন্দেহ তার।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম জানিয়েছেন, নানাভাবে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনায় মিনা জড়িত থাকতে পারে। মিনা ও কোহিনূরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সুত্র: প্রতিদিনের বাংলাদেশ