জাফর আলম চৌধুরী, কক্সবাজার::
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়ন হতে লুন্ঠিত সেই লাইসেন্সধারী অস্ত্রটি হাত বদল হওয়ার চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। বাহারছড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনির আহমদের বাড়িতে ২০১৫ সালে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ডাকাতদল অন্যান্য মালামালের পাশাপাশি তার লাইসেন্সধারী ১ নালা অস্ত্রটিও লুট করে নিয়ে যায়। এই অস্ত্র দিয়ে এই অস্ত্র দিয়েই বাহারছড়া শামলাপুরের ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিন দুপুরে মোস্তাফিজ নামের এক ব্যক্তিকে খুন সহ অসংখ্য অপরাধ সংগঠিত হয়েছে ইতোপূর্বে। সর্বশেষ লুন্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্রটি খুনি ফায়সালের হাত থেকে বর্তমানে আমান উল্লাহ নামের আরেক ব্যক্তি হেফাজতে রয়েছে বলে এলাকাবাসি সুত্রে জানা গেছে। তবে অস্ত্রটি উদ্ধারের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করায় ওই আমান উল্লাহ এলাকা থেকে গাঁ ঢাকা দিয়েছে বলেও জানা যায়।
সুত্রে জানা যায়,বাহারছড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনির আহমদের বাড়িতে ২০১৫ সালে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় সশস্ত্র ডাকাতদল অন্যান্য মালামালের পাশাপাশি তার লাইসেন্সধারী (বন্দুক নং-৮৯৬৩৭,লাইসেন্স নং-৪৫/৮৯) ১ নালা অস্ত্রটিও লুট করে নিয়ে যায়।
এঘটনায় নের্তৃত্ব দেয়া শিলখালির ছলিম উল্লাহর ছেলে ফায়সালকে অভিযুক্ত করে তৎকালী পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। লাইসেন্সধারী অস্ত্র লুটে নিয়ে এই ফায়সাল এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে। এই অস্ত্র দিয়েই বাহারছড়া শামলাপুরের ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিন দুপুরে মোস্তাফিজ নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার পর ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে ফায়সাল। এ হত্যা কান্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই নুরুন নবী বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দায়ের করা হয় হত্যা মামলা (মামলা নং- জিআর-১/২০১৬)। এই হত্যা মামলার ৩নং আসামী হচ্ছে ফায়সাল। দিনদুপুরে মোস্তাফিজ হত্যার পর থেকে বিভিন্ন সময় ফায়সাল এলাকায় অস্ত্র ও তার বাহিনী নিয়ে খুন, ইয়াবা ছিনতাই,ভাড়াটে হিসাবে অন্যের জমি দখলে সহায়তা সহ বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করে আসছে। গত কয়েক মাস আগে শামলাপুরের মাষ্টার জাহেদের বসতবাড়িতে ফায়সাল তার বাহিনী নিয়ে অবৈধ অস্ত্রেও মহড়া দেয়। স্থানীয় জনতার ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায় বাহিনীর লোকজন। সম্প্রতি এই ফায়সালকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজাখুজি করলে সে চলে যান আত্মগোপনে। লুন্ঠিত অস্ত্রটি হাত বদল করা হয় খুনি ফায়সালের অন্যতম সহযোগী তার ফুফাত ভাই আমান উল্লাহকে।
এলাকাবাসি সুত্রে জানাগেছে, রুপকথায় প্রচলিত আছে ‘রাতের ফকির, সকালে বাদশা’ সেই রূপ কথার গল্পকেও হার মানাচ্ছে টেকনাফ বাহারছড়ার উত্তর শীলখালীর গ্রামের আমান উল্লাহ (৪০) অস্বাভাবিক উত্তান। আজ থেকে ৬ বছর আগে আমান উল্লাহ সৌদি আরবে জীবিকা নির্বাহের জন্য গেলেও সেখানে দুই বছর অবস্থাকালিন সময়ে বিভিন্ন প্রতারণার দায়ে তার পরিচিত বাংলাদেশী সৌদি প্রবাসীদের তোপের মুখে ৪ বছর আগে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
এলাকাবাসি আরো জানায়, আমান দেশে পালিয়ে আসার পর থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য ইজিবাইক (টমটম) চালকের পেশাকে বেচে নেন। এই আমান উল্লাহ রাস্তায় টমটম চালানোর ব্যাপার নিয়েও সবার কাছে অনেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে। দিনে টমটম গাড়ি চালাতেন না। রাতের বেলায় নির্দিষ্ট সময়ে বেশির টমটম চালাতেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের টমটম গাড়ি বেশী ভাগ ব্যবহার করতো ইয়াবার বড়বড় চালান নিয়ে। স্থানীয় প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে ইয়াবা চালান বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে তিনি একটি মোটা অংকের কমিশন পেত বলে জানাযায়। পরবর্তীতে তিনি লোভে পড়ে মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি তার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য এবং তার বিশেষ নিরাপত্তার জন্য তিনি গড়ে তুলেন একটি অস্ত্রধারী বাহিনী। তার মামাত ভাই ফায়সালকে ব্যবহার করে ওই বাহিনী দিয়ে তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সূত্রে আরো জানাযায়, আমান উল্লাহ ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি জমি জমার দালালি ব্যবসাও শুরু করে। জায়গার দালালির কারণে ইতিমধ্যে অনেক নিরীহ মানুষের জায়গা প্রতারণা করে ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দখলে নিয়েছে বলে একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ রয়েছে। আর বাহারছড়া এলাকায় তিনি একজন ভূমিদস্যু নামেও বেশ পরিচিত, যুগযুগ ধরে দখলে থাকা অনেক পরিবারকে সরকারি খাস জমি থেকে অস্ত্রের মুখে জীম্মি করে বসতবাড়ি ভেঙ্গে ভিটেমাটি নিজের দখলে নিয়েছে, অনেক পরিবারকে গৃহহীন করেছে বলে ভোক্তভোগি অহরহ পরিবার অভিযোগ করেন।
এধরনের প্রতারণার ঘটনায় বাহারছড়া শামলাপুর নোয়াপাড়ার হাবিব উল্যাহ হাবী সহ অনেকে টেকনাফ থানায় এই আমান উল্লাহর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আমান উল্লাহর বিরুদ্ধে এধরনের বেশ কয়েকটি অভিযোগ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মাসুদ আলম মুন্সি তদন্ত করছে বলে জানা যায়।
এব্যাপারে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মাসুদ আলম মুন্সি বলেন, অভিযোগে পরিপ্রেক্ষিতে আমার উল্লাহকে নোটিশ দিয়ে হাজির হওয়ার জন্য বলা হলেও সে পলাতক রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাহারছড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনির আহমদের লুন্ঠিত লাইন্সেসধারী অস্ত্রটি তার হাতে চলে এসেছে। স্থানীয় অনেক মানুষ তার হাতে অস্ত্রটি দেখেছে। এরপর থেকে জনমনে আতংক আরো বেড়ে গেছে। আর ওই চেয়ারম্যানের অভিযোগের ভিক্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমান উল্লাহকে খুঁজছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাযায়। ওই আমান উল্লাহ তা বুঝতে পেরে বেশ কিছু দিন যাবত এলাকা থেকে গাঁ ঢাকা দিয়ে কক্সবাজার সদরের খুরুস্কুলে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর পিত্রালয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে তার একাধিক নিকটাত্মীয় সুত্রে জানাযায়। আর এই আমান উল্লাহর কবল থেকে নিরীহ লোকজনকে রক্ষা করতে স্থানীয়রা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এই ব্যাপারে আমান উল্লাহর বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে (নং-০১৮৩৯৮৬৫৪৮২) একাধিক বার চেষ্টা করেও মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।