নিউজ ডেস্ক::
প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সকলেই মাদ্রক ব্যবসায়ীদের আটক করার ঘোষণা দিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিয়ান চালানো হলেও কক্সবাজারের টেকনাফে তার উল্টো চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে টেকনাফ থানায় ওসি হিসেবে মো. আবদুল মজিদ যোগদানের পর এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ও মানবপাচারকারিদের সাথে সখ্যতা তৈরীর অভিযোগ রয়েছে।
ওসির সখ্যতার কারণে টেকনাফে ইয়াবা গডফাদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এর জন্য ইতিমধ্যে নানা মহল থেকে ওসির অপসারণের দাবিও উঠেছে। কিন্তু এর মধ্যে টেকনাফ থানার ওসির ‘ইয়াবা প্রীতি’ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। তিনি এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করেছেন। যা অতীতের সকল ওসির রেকর্ড ভঙ্গ বলে মন্তব্য অনেকের।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-৬ এর এক স্মারকপত্রের সূত্রে মাদকদ্রব্য অধিদফতরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) প্রণব কুমার নিয়োগী স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদনে ৭৬৪ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরী করা হয়। যাকে টেকনাফ পৌরসভার কুলালপাড়া গ্রামের ৭ নম্বরের তালিকায় নাম রয়েছে এমন একজন ব্যক্তির নাম নুরুল আবছার। তার পিতার নাম ইউনুছ। তার বাড়ি টেকনাফ পৌরসভার কুলালপাড়া গ্রামে। তাকে এলাকায় সবাই চেনে নুরসাদ হিসেবে। তিনি ওই তালিকার এক নম্বরের শীর্ষে থাকা ইয়াবা গডফাডার এখনো আত্মগোপনে থাকা হাজি সাইফুল করিমের আত্মীয়ও।
টেকনাফে ইয়াবার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান শুরু হলে এ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মগোপনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু গত ২৫ মে টেকনাফ পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকেই অনেককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর প্রবণতা দেখা গেলেও পুলিশ কর্মকর্তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নুরুল আবছার প্রকাশ নুরশাদ নামের এ কাউন্সিলর। আর এ ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। যাকে টেকনাফ থানার ওসির ইয়াবা প্রীতি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
স্পর্শকাতর অথচ গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদকে অযোগ্য হিসেবে দাবী করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।
তিনি জানান, টেকনাফের ওসি আবদুল মজিদ বৃদ্ধ ও বয়স্ক লোক। পাশাপাশি তিনি অসুস্থ। তার পক্ষে টেকনাফের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব কষ্টের ব্যাপার। ওসি আবদুল মজিদ টেকনাফে যোগদানের পর থেকেই উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠে। প্রকাশ্যে বিচরণ করছে বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিরা। বেড়ে গেছে ইয়াবা পাচার। মানবপাচারকারীরা ফিরে এসেছে এলাকায়।
তাই ওসি আবদুল মজিদকে অচিরেই প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, তার জায়গায় একজন সৎ ও যোগ্য ওসিকে স্থলাভিষিক্ত করা যেতে পারে।
পুলিশে একটি সূত্র জানায়, ১২ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ থানায় যোগদান করেন ওসি আবদুল মজিদ। এর পর থেকেই সখ্যতা গড়ে তোলেন ইয়াবা পাচারকারী ও অপরাধীদের সাথে। তার যোগদানের পর থেকেই আসামি গ্রেফতারের সংখ্যা কমে গেলেও বেড়েছে মামলার সংখ্যা। জানুয়ারি মাসে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি আতাউর রহমান খোন্দকার ৩৫ টি মামলা লিপিবদ্ধ করে। এর বিপরীতে ওসি আব্দুল মজিদ ফেব্রুয়ারিতে ৫৬ টি, মার্চে ৫২ টি, এপ্রিলে ৭৭ টি এবং চলতি মাসে এ পর্যন্ত ৩৮ টি মামলা লিপিবদ্ধ করেছেন। এছাড়া জানুয়ারি মাসে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি আতাউর রহমান খোন্দকার ১০৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করলেও মে পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে ২৩৬ জনকে।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জানান, ১৩ মে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা করে অস্ত্র লুট ও আনসার সদস্য হত্যা, একইদিন নাজিরপাড়ায় ৫ সাংবাদিকের হামলা করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। এর আগে থেকে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে উপজেলার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও নানান মামলার পলাতক আসামিরা। সব কিছু মিলিয়ে বর্তমান টেকনাফ থানার পুলিশ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
যদিও টেকনাফ থানার ওসি আব্দুল মজিদ এটি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে দাবী করেছেন। তিনি জানান, যোগদানের পর গত সাড়ে ৩ মাসে ১০ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করেছেন। ২২৩ টি মামলা লিপিবদ্ধ করেছেন এবং প্রায় দুই শতাধিক পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করেছেন। নিজেকে সফল ওসি বলেও দাবী করেন তিনি। সুত্র দৈনিক আমাদের সময়
পাঠকের মতামত