‘পানির অপর নাম জীবন’ কথাটা যতখানি সত্য, ঠিক ততখানি সত্য হলো জীবন রক্ষাকারী এই পানিই হতে পারে জীবনহানির কারণ।
শরীর ও শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল রাখার জন্য পানি আবশ্যক এক উপাদান। বিশেষত কিডনির সুস্থতায় প্রতিদিন পরিমাণমতো পানি পান অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু এই পানিই যদি প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়, তাহলে সেটা উপকারের বদলে অপকারিতা বয়ে আনে। আর্সেনিক কিংবা সায়ানায়েডের ন্যায় ভয়ানক বিষের মতোই ভয়াবহ হতে পারে পানি।
অত্যাধিক পানি পানে শরীরের সাথে আমাদের মস্তিষ্কের উপরেও বাড়তি চাপ পড়ে। কিডনি যে পরিমাণ পানি প্রসেস করতে পারে তার চাইতে বেশি পানি গ্রহণ করা হলে, তা রক্তের সোডিয়ামের মাত্রায় অসামঞ্জস্যতা এনে দেয়। এই সমস্যাকে বলা হয় ‘ওয়াটার ইনটক্সিকেশন’। এই সমস্যাটির চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্রেইন ড্যামেজ, কোমা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
গ্রহণকৃত বাড়তি পানি ও রক্ত থেকে পানি নিষ্কাশন করে আমাদের কিডনি। কিন্তু কিডনি প্রতি ঘন্টায় মাত্র ৮০০-১০০০ মিলিলিটার পানি প্রসেস করতে পারে। ফলে বেশি পানি পান করা হলেই সমস্যা দেখা দেয়। কারণ কিডনি যতটুকু পানি প্রসেস করতে পারে যতখানি সময়ে, তার আগেই তার চাইতে অনেক বেশি পরিমাণ পানি পান করা হচ্ছে। এই বাড়তি পানি আমাদের শরীরের কোষে এসে জমা হয়। সাধারণত আমাদের শরীরের কোষগুলো খুব সূক্ষ্মভাবে সোডিয়াম ও পানির একটি মিশ্রণ দ্বারা বেষ্টিত থাকে, যা সেল্যুলার মেমব্রেনসের সাহায্যে কোষের ভেতর ও বাইরের অংশের সমতা বজায় রাখতে কাজ করে।
পানি পান
কিন্তু অতিরিক্ত পানি পানের ফলে সোডিয়ামের মাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে এবং কোষের বাইরের সোডিয়াম ও পানির মিশ্রণে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যায়। এতে করে খুব সহজেই বাড়তি পানি কোষে প্রবেশ করে ও কোষ ফুলে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হচ্ছে ওয়াটার ইনটক্সিকেশন এবং যা বেশ বড় একটি সমস্যা।
অতিরিক্ত পানির জন্য কোষের ফুলে যাওয়া আমাদের শরীরের বেশিরভাগ কোষ সামলে নিতে পারে তাদের নমনীয়তা ও স্থিতিস্থাপক টিস্যুর জন্য। কিন্তু মস্তিষ্কের কোষের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। কারণ আমাদের মাথার খুলি কিন্তু একেবারেই বাড়বে না বা বৃদ্ধি পাবে না, এটা হলো নিরেট হাড়ে তৈরি। বলা যেতে পারে পাথরের মতো শক্ত হাড়।
ফলে ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে মাথাব্যাথা, মাথাঘোরার লক্ষণগুলো দেখা দেয়। পরবর্তীতে চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকলে ব্রেইন ড্যামেজ, কোমাসহ মৃত্যুর মতো গুরুত্বর পরিণতিও দেখা দিতে পারে এবং এমন ভয়াবহ পরিণতির জন্য মাত্র ১০ ঘন্টাই যথেষ্ট।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি যাদের কিডনিজনিত জটিলতা আছে তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি পানি পান আরও বেশি ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে। তাই নিরাপদ ও সুস্থ থাকতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করাই যথেষ্ট।