প্রকাশিত: ১৮/০৬/২০১৬ ৩:০২ পিএম

বিশেষ প্রতিবেদক::

টেকনাফ থানায় এসব কি হচ্ছে ? দেশের সীমান্তবর্তী এই থানাটির অভ্যন্তরে সরবে-নিরবে যা ঘটছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। মাত্র সমাপ্ত হওয়া চলমান সাঁড়াশি অভিযান নিয়ে টেকনাফ থানায় এক উৎসবের আমেজ চলছে। অভিযোগ উঠেছে-দিনে ধরা হয় আর রাতে ছাড়া হয়। আবার রাতে ধরে আদায় করে ছাড়া হয় দিনে। এভাবে ধরা আর ছাড়ার ঘটনা এখন সীমান্তবাসীর মুখে মুখে।
টেকনাফ সীমান্তে প্রচার রয়েছে-থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিষয়ে নাক গলার সাহসও তেমন কেউ রাখেন না। কেননা পুলিশের উর্ধতন এক কর্মকর্তার আশির্বাদ রয়েছে তার উপর। একারনে কর্মকর্তারা সীমান্ত থানাটির সব কিছু জেনেও না জানার মত করেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। আর একারনে সীমান্তে যাই হবার তাই ঘটে চলেছে। তবে টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ থানার অভ্যন্তরে বিরাজমান অন্যায়-অনিয়মের কর্মকান্ড অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন-যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য। তিনি দাবীও করেন-টেকনাফ সীমান্ত শাস্তিতে আছে-একমাত্র পুলিশের কারনেই।
মাত্র এক মাস আগে সীমান্তের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের আনসার ক্যাম্পের হামলার ঘটনাটির কোন কুল-কিনারা হয়নি। অথচ এঘটনাটি নিয়ে টেকনাফ থানায় কর্মরত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে কোন উদ্বেগ উৎকন্ঠাও পর্যন্ত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে-গত এপ্রিল মাসে লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝি আমির হোসেনকে যখন খাইরুল আমিনের (ডাকাত খাইরুল) নেতৃত্বে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা অপহরণ করেছিল তখনই টেকনাফের ওসিকে বার বার অনুরোধ করা হয়েছিল জঙ্গী খাইরুলকে আটকের জন্য।
এমনকি অপহৃত রোহিঙ্গা মাঝি আমির হোসেনের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায়ের পরেও ওসিকে বলা হয়েছিল রোহিঙ্গা জঙ্গী খাইরুল বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে। কিন্তু ওসি এব্যাপারে তেমন কোন ভুমিকা রাখেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে বেপরোয়া আরএসও রোহিঙ্গা জঙ্গীরা পুলিশের নিরবতার সুযোগ নিয়ে গত ১২ মে দিবাগত রাতে নয়াপাড়া শিবিরের রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াল হামলার ঘটনা ঘটায়। প্রায় ৩০/৩৫ জন জঙ্গী রোহিঙ্গার হামলায় আনসার কমান্ডারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর আনসার ক্যাম্পের ১১ টি অস্ত্র ও ৬৭০ রাউন্ড গুলি লুঠ করে নেয় রোহিঙ্গারা। এযাবত একজন আসামী কেবল আটক হওয়া ছাড়া এত বড় একটি ঘটনার কোন কুলকিনারা হয়নি।
আনসার ক্যাম্পের ভয়াল ঘটনার পর উর্ধতন জেষ্ঠ কর্মকর্তারা টেকনাফে অবস্থান নিয়েছিলেন। এ কারনে টেকনাফ থানার অভ্যন্তরে গত কিছুদিন ধরে নিয়ম বহির্ভুত কাজের অভিযোগও তেমন মিলেনি। কিন্তু জেষ্ঠ কর্মকর্তারা স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে যাবার সাথে সাথেই সীমান্ত থানাটির চিত্র আবারো বদলে গেছে। আর এমন অবস্থায় দেশব্যাপি সাঁড়াশি অভিযানের সুযোগ এসে যায় হাতে। এসুযোগ লুফে নেয়া হয় রাত-দিনে।
এ সাঁড়াশি অভিযান নিয়ে গত ক’দিন ধরে থানার অভ্যন্তরে যা ঘটে চলেছে তা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন অনেকেই। এ অভিযানে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামী এবং জঙ্গী কর্মকান্ডে জড়িত লোকজনদের আটকের নির্দ্দেশনা থাকলেও টেকনাফ থানা পুলিশের নজর রয়েছে বরাবরই ইয়াবা সা¤্রাজ্যে যারা জড়িত তাদের উপর। এমনকি পুলিশ একজন রোহিঙ্গা জঙ্গীকে আটকের ব্যাপারে পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেননি। অথচ এই রোহিঙ্গা জঙ্গীরাই গত ১২ মে রাতে এদেশের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে এদেশেরই একজন সরকারি কর্মকর্তাকে খুন করেছে। কেবল তাই নয় এদেশের সরকারের অনুকম্পায় থেকে এ রোহিঙ্গারাই সরকারি সম্পদ ১১ টি অস্ত্র ও ৬৭০ রাউন্ড সরকারি গুলি লুঠ করে নিয়েছে। অথচ টেকনাফ থানা পুলিশ চলমান সাঁড়াশি অভিযানে একজন রোহিঙ্গা জঙ্গীকেও আটক করেনি।
আর এ কারনেই টেকনাফ সদরের কচুবনিয়ার বাসিন্দা ইয়াবা ডন হিসাবে পরিচিত এক কালের রিক্সাওয়ালা বদুরানও শিকার হয়েছেন সাঁড়াশি অভিযানে। তাকে পুলিশ আটক করে ১০/১২ টি মামালার আসামী করার হুমকি দেয়া হয়। পরে নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে বিপুল অংক হাতিয়ে নিয়ে নাম মাত্র অভিযোগের ধারায় চালান করে দেয়া হয় আদালতে। ইয়াবা ডন বদুরানের এক আতœীয় জানিয়েছেন-কত নিয়েছে তা জানতে চাইবেন না। তবে একটি গাছের মামলায় বদুরানকে চালান করা হয়েছে।
অপরদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে টেকনাফের নাজির পাড়ার তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানকে আটক করে পুলিশ থানায় না নিয়ে দমদমিয়া মুসলিম এইড অফিসের দিকে নিয়ে যায়। গতকাল সারাদিন তাকে মারধর করা হয় ‘লেনদেনের চুক্তিতে’ আসার জন্য। গতরাত ৯টা পর্যন্ত জিয়াউর রহমানকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। রাত ৯টায় এ ব্যাপারে থানার সেকেন্ড অফিসার দারোগা কাঞ্চন দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-‘জিয়াউর রহমান নামের কোন আসামীকে থানায় আনা হয়নি। দারোগা কাঞ্চন জানান-তবে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযানে বাইরে রয়েছেন। তাদের হাতে জিয়াউর রয়েছে কিনা তা জানিনা।’
টেকনাফ থানার অভ্যন্তরে চলমান অন্যায়-দুর্নীতি-অনিয়ম সর্ম্পকে লিখতে গেলে এত সহজে শেষ হবে না বলে মন্তব্য করে সাবেক এমপি ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন-‘থানায় কর্মরত ওসি সব সময় বাসায় থাকেন। বড়জোর তিনি অফিস পর্যন্ত আসেন। তাকে টেকনাফের মানুষ চিনেন না। এমন একজন ওসির কর্মকান্ডে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত থানার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির বারটা বেজেছে।’ গত মে মাসে আনসার ক্যাম্পের জঙ্গী হামলার ঘটনা টেকনাফের ইতিহাসে আর ঘটেনি বলে উল্লেখ করে সীমান্তের এই প্রতিবাদী প্রবীণ রাজনীতিক অভিযোগ করে বলেন-‘এরকম একজন ওসির কর্মকান্ডে বর্তমান সরকারের ভাবমুর্তিও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’ সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এমন অবস্থায় টেকনাফের বর্তমান ওসিকে জনস্বার্থে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবদেন জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

ট্রাকচাপা দিয়ে হাসনাত-সারজিসকে হত্যাচেষ্টা, ড্রাইভার ও হেলপার আটক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টা করার ...

চিন্ময় কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে মিছিলের প্রস্তুতিকালে আ. লীগ-যুবলীগের ৬ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি ...