আব্দুল্লাহ মনির, টেকনাফ::
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে এক নারী যাত্রী নিহতের ঘটনায় টেকনাফজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চলাচল করা স্পিডবোট নিয়ন্ত্রণ করছে একটি চক্র। যারা এসব স্পিডবোট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, খোদ স্থানীয় প্রশাসনকে হাত করে এই সিন্ডিকেট ব্যবসা করছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের এই রুটে ৫০টির বেশি অবৈধ স্পিডবোট চলাচল করে। টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের একটি যৌথ সিন্ডিকেট সেটি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন সেখান থেকে লাখ টাকার ওপর বাণিজ্য করছে তারা। যার ভাগ পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে অবৈধভাবে চলাচলরত যাত্রীবাহী ২৪ জনের একটি স্পিডবোট তলা ফেটে ডুবে যায়। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসারত অবস্থায় এক নারীর মৃত্যু হয়। ফিরোজা খাতুন নামের ওই নারী সেন্টমার্টিন দ্বীপের তিন নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক নারী ইউপি সদস্য। শুক্রবার নাফ নদের মোহনায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ওই স্পিডবোটে স্থানীয় ও পর্যটকসহ ২৪ যাত্রী ছিলেন। নাফ নদীর মোহনায় পৌঁছানোর পরপরই হঠাৎ করে স্পিডবোটের তলা ফেটে তা ডুবে যায়। তাৎক্ষণিক সংবাদ পেয়ে কোস্টগার্ডের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে। তাদের সবাইকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর একজনের মৃত্যু হয়।
কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি জানান, বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্রের গোলগড়া নামক স্থানে পৌঁছলে বোটটির তলদেশ ছিদ্র হয়ে ডুবে যায়। উদ্ধার হওয়া ২৪ জনকে দ্রুত সেন্টমার্টিন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফিরোজা বেগম নামের ওই নারীর মৃত্যু হয়।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, অবৈধ ওই স্পিডবোটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কারা কারা এই বোর্ডগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং অতি শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, ওই স্পিডবোটটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা নুরুল আলমের মালিকানাধীন। দীর্ঘদিন ধরে এ রুটে অনুমতি ছাড়াই বেশ কিছু স্পিডবোট অবৈধভাবে চলছে। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে স্পিডবোট মালিক নুরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এক প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে সেন্টমার্টিনের অবৈধ স্পিডবোট সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ হয়। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত